শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
এম এম জামান
প্রকাশিত: ১৫ জুন ২০১৯
ঈদের লম্বা ছুটি কাটাইয়া রাজশাহী আসছিলাম। সারাদিন এদিক সেদিক ঘুইরা রুমে ফিরতে সন্ধ্যা।
ভাবলাম গোসল কইরা শইল্ডা ঠান্ডা করি, পরানডা জুড়াই।
"ও আমার উড়াল পংখি রে যা যা তুই উড়াল দিয়া যা" গাইতে গাইতে বাথরুমে ঢুকলাম।
গোসলের নাম "হাওয়াই গোসল"। যেই না সাওয়ার ছাড়লাম গানের পরিবর্তে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আওয়াজ বাইর হইলো "ও মাগো।"
মনে হইলো আগ্নেয়গিরির গলিত লাভা কেউ ফিক্কা মারছে, সারা গায়ে যেন ফোসকা পড়ছে।
গামছা প্যাচাইয়া দৌড় দিয়া বাইর হইয়া গগন বিদারি চিতকার দিয়া জিগাইলাম-
- এই গরমে গিজার ছাড়ছে কেডা?
- পিয়ন উল্টা জিগায় গিজার কি?
- যেইডা দিয়া পানি গরম করে।
- আমরা তো পানি গরম করি চুলায়।
- আরে পানি গরম করার এক্টা মেশিন আছে, ওইডার নাম গিজার।
- আমাগো অফিসে তো ওই মেশিন নাই।
- তাইলে পানি এত গরম ক্যা? চুলায় ফুটাইয়া টাঙ্কিতে ঢালছো?
- পানির ট্যাঙ্কিতে কয়দিন ধইরা টানা রৌদ পড়ছে।
- ঝোলার বৃষ্টি রাজশাহী চেনে না, মেঘও করে না?
আমাদের এই চেচেমেচির মধ্যেই একজন পানি বিশেষজ্ঞের আগমন।
- স্যার, অনেক চিন্তাভাবনা কইরা আমি একটা সুন্দর সমাধান বাইর করছি।
- দাড়ান, লুঙ্গি পইরা আসি।
- বালতিতে পানি ভইরা তিন চার ঘন্টা পানি টা জূড়াইবেন, তারপর গোসল করবেন। আমি এই পদ্ধতি অনুসরণ কইরা উপকার পাইতেছি।
- পানি জুড়ামু কেমনে?
- বালতি এসি রুমে রাইখা দিবেন।
- কারেন্ট না থাকলে?
- ফ্যানের নীচে রাখবেন।
- কারেন্ট না থাকলে ফ্যান চলবে কেমনে?
- ওহ, সরি। হাতপাখা দিয়া বাতাস করলেও চলবে, জুড়াইতে সময় একটু বেশি লাগবে।
পানি তো তাইলে লাড়াইয়া চাড়াইয়া দিতে হইবে, নাহয় তো শুধু একপাশের পানি ঠান্ডা হবে।
- জ্বি, স্যার। দিলে ভালো হবে।
- ওজু কেমনে করমু?
- তায়াম্মুম করবেন।
- আচ্ছা, বাথরুম (বিশেষ করে বড়টা) সাইরা হোসপাইপের পানি কেমনে ঠান্ডা কইরা ব্যবহার করমু?
- রাজশাহীতে থাকতে হইলে এইটুক সহ্য করতে হইবে স্যার। আস্তে আস্তে অভ্যাস হইয়া যাইবে।
আমার এক রুমমেট ছিলো,আমার সাথেই ঘুমাইত। ততকালীন তীব্র শীতের প্রায় তিনমাস গোসল করত না।
আমি অবশ্য জীবনের ঝুঁকি নিয়া সপ্তাহে দুএকবার গোসল করতাম।
- বলছিলাম, ঘুমানোর আগে অন্তত একটু হাত পা টা তো ধুইতে পারো!
- তার সরল জবাব, প্রতিদিন হাত পা ধোয়ার কি দরকার, ১০/১৫ দিন পর একবার বিছানার চাদর ধুইলেই তো চলে।
আগে মানুষ শীতের জন্য গোসলের ঝুকি নিত না আর এখন আমি গোসল করতে পারিনা গরমের জন্য।
এইটার নামই বোধ করি "দিনবদল"।
ভাবছিলাম, স্যারের কাছে দুইতিন দিনের ছুটি চামু।
স্যার যদি জিজ্ঞাসা করে "কাজমর্মের এত প্রেসারের মধ্যে ঢাকা যাবা কেন?"
আর আমি যদি বলি ‘গোসল করতে’ !
চাকরি থাকবে?
ঝুকি নেই নাই।
আজ সম্ভবত আষাঢ়ের প্রথম দিন। বৃষ্টি থাকুক বা না থাকুক, ঠাডা পড়া রোদই থাকুক, রাজশাহী তেও আজ আষাঢ়।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়