শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০১৯
আধুনিকতার এই যুগে দুরন্ত সব যানবাহন ছাড়া চলাচলের কথা চিন্তাও করা যায় না! তবে যদি বলা হয় যে, এমনটি সম্ভব এবং হচ্ছেও, তাহলে কি বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য হবে? হতেই হবে! কারণ ঠিক এমনই এক অদ্ভুত জায়গা বাস্তবেই রয়েছে যেখানে চলে না কোনো গাড়ি-ঘোড়া! জায়গাটির নাম গ্যাথ্রুন। নেদারল্যান্ডের দৃষ্টিনন্দন ছোট্ট এই গ্রামটি অ্যামস্টারডাম থেকে ১০০ কি.মি. দূরে অবস্থিত।উপর থেকে পুরো গ্যাথ্রুনের দৃশ্য; Image Source: youtube.com
শান্ত পরিবেশ, আঁকাবাঁকা খাল, কাঠ দিয়ে বানানো ছোট ছোট সেতু আর রঙ-বেরঙের নানান ফুলের সমারোহ এই গ্রামটিতে। আর এখানকার বাড়ি-ঘরগুলোর কথা তো না বললেই নয়। ২০০ বছরের পুরনো এই বাড়িগুলো একটুও বদলায়নি, ঠিক একই রকম আছে। আকার আকৃতিতে দেখতে অনেকটা খামার বাড়ির মতোই সেখানকার ঘরগুলো গ্যাথ্রুনে যেকোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহারের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা আছে। যদিও পর্যটকরা এই সুন্দর জায়গা দেখতে এসে ভিড় জমানোর কারণে এই নিয়মের খানিকটা পরিবর্তন হয়েছে। তাই এখন সেখানে সাইকেল চালানোর অনুমতি আছে। তবে বেশিরভাগ সময়ে জলপথেই যাতায়াত হয়ে থাকে সেখানে। গ্রামের সনাতন দিকটিতে কোনো অলিগলিও নেই। গ্যাথ্রুনে ১৮০টিরও বেশি সেতু রয়েছে।
সর্বপ্রথম ১২৩০ খ্রিস্টাব্দে ভূমধ্যসাগরীয় কয়েকজন পলাতক এই গ্রামটি প্রতিষ্ঠা করে। তারা পিট নির্যাস (ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে শক্তির উল্লেখযোগ্য উৎস ছিলো) বহন করার সুবিধার্থে গ্রামের দুটি প্রান্তের সংযোগস্থলস্বরূপ কয়েকটি খাল কাটে। প্রথম প্রথম তারা এই শক্তির উৎসের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় খনন করতে থাকে। আর এভাবেই পুরো গ্যাথ্রুন জুড়ে তারা চালাতে থাকে খনন কাজ।
খনন কাজের পরের ধাপটি ছিলো সেগুলো বহন করে নিয়ে যাওয়া। এক প্রান্ত থেকে থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার জন্য খাদ ও খাল কাটা। এর ফলস্বরূপ পুরো গ্যাথ্রুন সেজে ওঠে একেবারে ভিন্ন এক আঙ্গিকে।
‘গ্যাথ্রুন’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো ‘ছাগলের শিং’। এই নামকরণ করেন সেখানকার প্রথম অধিবাসীরা, যারা জলাভূমিতে পেয়েছিলো শত শত ছাগলের শিং! এই শিংগুলো ছিলো দশম শতাব্দীর বন্যার অবশিষ্টাংশ। তবে এখন সেখানে ঐ শিংগুলো আর নেই এবং গাছপালাগুলোও একেবারেই ভিন্ন। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত গ্রামটি একটি ভিন্ন পৌরসভা ছিলো। সরল, শান্ত ও মনোরম এই গ্রামটিকে বলা হয় ‘উত্তরের ভেনিস শহর’ বা ‘ছোট ভেনিস’। ইতালির শহরটির সাথে অবকাঠামোর মিল থাকায় এমন নাম দেয়া হয়েছে। এই গ্রামে কোনো রাস্তা না থাকলেও আছে সাইকেল চালানোর মতো সরু কিছু অলিগলি আর অসংখ্য সেতু।
মাত্র ২,৬০০ মানুষের এই জায়গাটি শহরের কোলাহল থেকে হারিয়ে যাওয়ার মতো শান্ত একটি জায়গা। সেখানকার মানুষদের মতে, মাঝে মাঝে সবচাইতে জোরে যদি কোনো আওয়াজ শোনা যায়, তা হলো হাঁসের ডাক! এখন নিশ্চয়ই আপনার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে এই প্রশান্ত ও নিবিড় গ্রামে, তাই না?
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়