শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২২
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীর চারঘাটে চলছে অবৈধভাবে পুকুর খনন। পুকুর খননকারী ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না। ফলে অনেকটা নির্বিঘ্নে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব।
অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিন রাত সমান তালে চলছে পুকুর খননের কাজ। তবে স্থানীয় প্রশাসনের দাবি পুকুর খননের খবর ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা।
সংবাদ পেয়ে সোমবার বিকেলে দুটি পুকুর খনন করায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমান আদালতে একজনকে ৭০ হাজার ও আরেকজনকে ৫০ হাজার মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার পরেও প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে কেউ অবৈধ কর্মকান্ড চালালে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুকুর খনন করছে এক শ্রেণির অস্বাধু ব্যক্তিরা। অতি মুনাফা লোভী ব্যক্তিদের এমন কর্মকান্ডে পরিবেশের উপর চরম ঝুকি রয়েছে বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।
উপজেলার নিমপাড়া, ভায়ালক্ষিপুর,শলুয়া ও ইউসুফপুর ইউনিয়নে বেশ কিছু জমি লিজ নিয়ে একটি সংঘবদ্ধদল গত কয়েক মাস ধরেই ধানী জমিতে পুকুর খনন করলেও রহস্য জনক কারনে বন্ধ হয়নি পুকুর খনন। ফলে এসব এলাকায় এখন ধানী জমি নেই বললেই চলে। যেটুকু জমি পুকুরের বাইরে আছে সেটুকুও এখন জ্বলাবদ্ধতার কবলে পড়ে অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে বছরের পর বছর।
তবে বর্তমানে ওই সব এলাকায় এখন পুকুর খননের জমি না থাকায় পুকুর খননকারী দানবরা পার্শ্ববর্তী সরদহ ইউনিয়নের সাদীপুর, শলুয়া ইউনিয়নের জাফরপুর ও ইউসুফপুর ইউনিয়নের জয়পুর মাঠে সমতল ধানী জমি কেটে পুকুর খনন করছেন ওই এলাকার প্রভাবশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট। আর এসব পুকুর খনন করে মাটি বিক্রির জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে সেব রাস্তা ভেঙে চুরমার হচ্ছে। ফলে সাধারন মানুষের চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে রাস্তা গুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, গত দুই বছর আগে চারঘাট-বাঘার সাংসদ বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কাঁচা রাস্তাকে তৈরি করেছেন পাকা। সেই পাকা রাস্তা শুধু মাটি খেকোদের মাটি বহনের জন্য রাস্তাগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সাধারন মানুষ এখন আর ওই রাস্তা দিয়ে চলতে পারে না।
ইউসুফপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য রিংকু বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে হলে সরকারি অনুমতি প্রয়োজন। তাছাড়া সমতল ধানী জমি এভাবে কেটে পুকুর খনন সম্পুর্ন রুপে নিষিদ্ধ হলেও একটি সিন্ডিকেট সমতল জমিতে পুকুর খনন করছেন।
এতে করে পুকুর খননকারীরা লাভবান হলেও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে পরিবেশ ও আশের পাশের জমির মালিকদের। তাছাড়া কয়েক বছর আগে বানানো রাস্তা গুলো অধিক ভারের কারনে ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সরকার সাধার মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা বানালেও কিছু অসাধু ব্যক্তিদের ব্যাক্তি স্বার্থের কাছে সরকারের কোটি কোটি টাকা আজ নষ্ট হতে বসেছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। ফলে দিনের পর দিন এভাবে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। চারঘাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন সম্পূর্ন রুপে নিষিদ্ধ। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ পুকুর খনন কাজ করলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি ) কর্মকর্তা নিয়তি রানী কৈরী বলেন, অবৈধ পুকুর খনন কোনোভাবেই কাম্য নয়। তার পরেও যে সব এলাকায় পুকুর খননের খবর পাওয়া যাচ্ছে সেসব এলাকায় ইতোমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে ভাম্যমান আদালতের জরিমানাও করা হয়েছে।
গোপন সংবাদ পেয়ে সোমবার বিকেলে উপজেলার সরদহ ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামে মুন্নার পুকুরে ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করার সময় আকবরের ছেলে সাবির হোসেনকে ৭০ হাজার টাকা ও ইউসুফপুর শ্রীখন্ডী গ্রামে মুনসুরের ছেলে মাহাবুর পুকুর খনন করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসের নামজারী সহকারী সাজেদুর রহমান, মডেল থানার এস আই আমিনুলসহ পুলিশ সদস্যরা।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়