শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||
জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১
|| ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২২
মৃত্যুর ২০ বছর পর আসামি আব্দুস সোবহানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাতিল এবং জরিমানা মওকুফ করেছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার আপিলটি নিষ্পত্তি করে রায় দেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, রাজশাহীর অবিভক্ত চারঘাটের ১ নম্বর বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে তিনটি হাট-বাজার লিজ দেওয়া সাড়ে ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ১৯৮২ সালের ৯ জুন তাঁর বিরুদ্ধে চারঘাট থানায় মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
ওই বছরের ১০ নভেম্বর মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। বিচার শেষে ১৯৮৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত তাঁকে ৫ বছরের জেল ও ৪২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালে হাইকোর্টে আপিল করেন আব্দুস সোবহান (আপিল নম্বর ১৮৬১৯৮৮)।
আপিল বিচারাধীন থাকাকালীন ২০০১ সালের ১৬ জুন মারা যান আব্দুস সোবহান। কিন্তু আপিলে দুদককে পক্ষ করা হয়নি। পরে দুদক এই মামলায় পক্ষ হয়ে শুনানিতে অংশ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে রায় দেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলার চাকিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মরহুম আব্দুস সোবহানের বড় ছেলে মরহুমের বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার পিতার মৃত্যুর ২০ বছর পরে মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, এই সংবাদ জানার পর ভালো লাগা ছাড়া আর কি বলার আছে।’
তবে এই মামলার বিষয়ে কিছুই জানতেন না আব্দুস সোবহানের পরিবারের কেউ। কোনো দিন কোনো নোটিশও পাননি তাঁরা। এ প্রসঙ্গে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বর্তমান বয়স ৫৭ বছর চলছে। ২০২১ সালের জুন মাসে আমার পিতা মারা যান। যে সময় মামলা হয় তখন আমার বয়স ছিল ২১ বছরের মতো। কয়েকটি মামলা হয়েছিল তা জানতাম।
সেই সব মামলায় আপিল করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয়বার বাজুবাঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে দায়েরকৃত কয়েকটি মামলায় তাঁর জেল জরিমানা হয়েছিল।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ সাজা হয়েছিল ৫ বছর। সেই সময় উকিলের পরামর্শে হাইকোর্টে আপিল করে সর্বোচ্চ সাজা খেটে সাড়ে ৪ বছর পর বেরিয়ে আসেন। সর্বশেষ যে মামলার রায় হয়েছে, এই সেই মামলা কি-না, সে সম্পর্কে জানা নেই। আমার জানা মতে, মামলাগুলো হয়েছে অবিভক্ত চারঘাট থানা থাকাকালীন।’
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা ৩ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে বর্তমানে ২ ভাই ও ২ বোন বেঁচে আছি। পিতার জীবদ্দশায় ১ ভাই ও ১ বোন মারা যায়। ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মা ফাতেমা খাতুন মারা গেছে। পরে বড় বোন মারা যায়। বেঁচে আছি আমিসহ ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান, বোন মেহেরপুরে ও ফিরোজা বেগম। পিতার তেমন কোনো জায়গা জমি ছিল না। এর মধ্যে মামলা চালাতে গিয়ে ২৪ কাঠা জমি বিক্রি করতে হয়েছে।
বর্তমানে বাড়িভিটার যে ৪০ শতাংশ জমি আছে, সেটিও মায়ের পৈতৃক অংশে পাওয়া। ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলা সদরে মহিলা বাণিজ্যিক কলেজ অ্যান্ড ভকেশনাল ইনস্টিটিউটে লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত আছেন। আমি ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করি।’
তাঁর দাবি, পিতার নামে টাকা আত্মসাতের যেসব মামলা হয়েছে, তাই যদি হতো তাহলে জায়গা জমি ঘরবাড়ি করে যেতে পারতেন। কিন্তু কিছুই করতে পারেননি তিনি। তবে কীভাবে মামলা হয়েছে তাও বুঝে উঠতে পারেননি।
সরেজমিন, তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পিতার আমলে রেখে যাওয়া মাটির ঘরটা এখনো রয়ে গেছে। এই বাড়িতেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুস সোবহানের ২ ছেলে।
বাজুবাঘা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মনোয়ারুল ইসলাম মামুন জানান, ১৯৮২ সালের দায়েরকৃত মামলায় আপিল করে ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে মামলাজনিত কারণে ১৯৮৪ সালে সাসপেন্ড হয়েছিলেন। পরে আর নির্বাচন করেননি।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতি)। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহীন আহমেদ।
শাহীদ আহমেদ জানান, হাইকোর্ট বিভাগ অনেক পুরোনো একটি আপিল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন। এ মামলার আপিলকারী ২০ বছরের বেশি সময় আগে মারা গেছেন। আপিলকারী মারা গেলে আইনের বিধান হচ্ছে আপিলটা অ্যাবেট (বাদ) হয়ে যাবে দণ্ড ও সাজার ক্ষেত্রে। কিন্তু জরিমানাটা থেকে যাবে। এখন এই জরিমানার বিষয়ে শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আপিল মঞ্জুর করেছেন। এর মাধ্যমে আপিলের নিষ্পত্তি ঘটল।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া (মিতি) বলেন, যেহেতু আপিল মঞ্জুর হয়েছে, সেহেতু ওই চেয়ারম্যানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ৫ বছরের সাজা বাতিল এবং জরিমানা মওকুফ হয়ে গেছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়