শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২১
রাজশাহীর চারঘাটে করোনাভাইরসের থাবায় হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষজন। টানা লকডাউনে উৎপাদিত দ্রব্যদি নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রয় কমে যাওয়ায় মূলধন হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উপজেলার ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পগুলো। ফলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক বাধ্য হয়েই পেশা বদল করছে।
বরাবরের মতো সকল প্রতিষ্ঠান ও ২৩শে জুলাই থেকে কারখানা বন্ধ হওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের প্রায় হাজারো শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
লকডাউন শিথিল হলেও উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা না থাকায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকার শ্রমিকগণ নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করায় অনেকটা মানবতার জীবনযাপন করছেন তারা। ঘরে খাবার না থাকায় জীবিকার তাগিদে তাদের বিকল্প আয়ের পথ বেছে নিতে হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার উল্লেখযোগ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে রয়েছে, তাঁতবস্ত্রশিল্প, পাদুকা শিল্প, খয়ের ফ্যাক্টরি, মৃৎশিল্প, লোহা ও বাঁশ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র। এর পাশাপাশি দেখা যায়, উপজেলা গ্রাম পর্যায়ের প্রায় অধিকাংশ নারী লোকাল ও জাতীয় পর্যায়ের ফ্যাশন হাউজের বিভিন্ন পোশাকের হাতের কাজের সাথে জড়িত।
উপজেলার সারদা ইউনিয়নের খোর্দ্দগোবিন্দপুর পাল পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, একসময়ে কাজে ব্যস্ত মানুষগুলি কাজ গুটিয়ে অলস সময় পার করছেন। স্থানীয় কুমার নন্দ কিশোর পালের সাথে কথা বললে জানা যায়, লকডাউন করতে সরকারি সিদ্ধান্ত তারা মেনে চলছে।
টানা লকডাউনে উৎপাদিত দ্রব্যাদির বিক্রয় কম হওয়ায় শ্রমিকের মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে চলমান লকডাউনে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরাও বিকল্প আয়ের দিকে চলে যাচ্ছে। ফলে এই শিল্পে আগামীতে শ্রমিক সংকটের জন্য হয়তো কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুপমপুর, ইউসুফপুর নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত তাতঁ পল্লীগুলো ও থানাপাড়া গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রায় ৫শো তাঁতীঁ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে কাজ করছে, এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী।
বিভিন্ন উৎসবকে সামনে রেখে কাজের ভরা মৌসুমেও মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রয়েছে, বিক্রয় প্রস্তাব বাতিল হয়েছে অনেকগুলো। প্রান্তিক তাতীঁদের উৎপাদিত তাঁতের গামছা বিক্রয় না হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে এই সকল নারী তাতঁ মালিকগণ।
উপজেলার একমাত্র তাঁত বস্ত্র রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান থানাপাড়া সোয়ালোজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক রায়হান আলী বলেন, করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপি লকডাউনের কারণে যানবাহন বন্ধ থাকায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।
পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারছিনা। চলমান অর্ডার ক্রেতারা স্থগিতাদেশ দেওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে স্থানীয় তাতঁ শিল্প নারী শ্রমীকগণ।
একইভাবে উপজেলার গোপালপুরে বিখ্যাত খয়ের শিল্প, পিরোজপুর ডালিপাড়ার বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থলি পণ্যের শ্রমিক, কালুহাটির পাদুকা কারিগর ও নন্দনগাছির কামারশিল্পের সাথে জড়িত প্রায় কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এই সকল শিল্পের অধিকাংশ শ্রমিকই দিন আয়ের উপর নির্ভরশীল। কাজ বন্ধ থাকায় অর্থাভাবে দিন কাটাচ্ছে সকল শ্রমিক।
এসময় বেকার হয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের জন্য সরকারি খাদ্য ও অর্থ সহায়তা যা স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসকল কিছু শ্রমিক সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ পেলেও সকল শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ করছেন অনুপমপুর কারিগরপাড়ার তাতিঁ মাজেদা বেগম।
বাধ্য হয়েই এসকল ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকগণ জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য বিকল্প আয়ের পথে অগ্রসর হচ্ছেন। রপ্তানিযোগ্য পোশাক শিল্পের একজন সেলাইকর্মী কাজ না থাকায় তাকে দেখা গেছে কনস্ট্রাশন কাজের একজন যোগানদার হিসেবে কাজ করতে।
কেউ আবার ভ্যান চালিয়ে অথবা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কাজ না থাকায় নারী শ্রমিকদের অধিকাংশই অন্যের বাসা বাড়িতে স্বল্প বেতনে কাজ করতে দেখা গেছে।
এশিল্প বাচিঁয়ে রাখতে দরকার স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি বলে দাবি করেছেন সরদহ সরকারি কলেজ অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম।
উপজেলার প্রকৃত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের তালিকা প্রস্তুত করে সরকারি প্রণোদনোয় আওতায় স্বল্পসুদে ঋণ দিয়ে এসকল শিল্পকে পুনরায় উৎপাদনে সহায়তা করতে হবে। ফলে শ্রমিকরা তাদের পুরাতন কর্মব্যস্ততায় ফিরতে পারবে এবং দেশের অর্থনীতিতে এসকল ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণ উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কর্মহীন শ্রমিকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। যে সকল ব্যক্তি বা শ্রমিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে পরবর্তীতে যাচাই বাচাই করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের মাধ্যমে ত্রাণ প্রদান করা হবে।
তবে মূলধন হারিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসকল কুটিরশিল্পগুলোর সার্বিক সহাযোগিতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করবেন বলে তিনি জানান।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়