শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২০
চারঘাটে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বেপরোয়া চাঁদাবাজি ব্যাপকহারে বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে।
সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা। দলিল লেখক সমিতির অনেকে ইতিমধ্যে অনিয়ম করে অঢ়েল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। উপজেলায় দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সমিতির নামে একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করছে।
ভূমি রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় খরচের টাকা আদায়ও হচ্ছে সমিতির মাধ্যমে। সাধারণ দলিল লেখকরাও জিম্মি হয়ে পড়েছেন সমিতির নেতাদের কাছে। তারা সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো ভূমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। রেজিস্ট্রি অফিসকে জিম্মি করে সরকারি নির্ধারিত ফিসের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে সমিতি। সাধারণ ও নিরীহ মানুষ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জমির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে আদায়কৃত টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন সমিতির নেতারা থেকে শুরু করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। সরেজমিন গিয়ে চারঘাট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সমিতির কাছে জমির দাতা ও গ্রহীতাদের জিম্মিদশার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে।
সমিতির বিনা অনুমতিতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো জমি রেজিস্ট্রি হয় না বলে ব্যাপক অভিযোগ আছে। সাধারণ দলিল লেখকদেরও সমিতির বিনা অনুমতিতে দলিল করার সেই ক্ষমতা নেই। দলিল লেখার যাবতীয় টাকা দিতে হয় সমিতিকে। তারপর সমিতির গোপনীয় একটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করার পরই দলিল যায় সাব-রেজিস্ট্রারের টেবিলে।
সেখানেও প্রতি টেবিলে দলিল প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা এবং ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন ও কাগজের ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট করণিক সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে প্রকারভেদে আদায় করেন লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক।
সাম্প্রতিক সময়ে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভার পাশে নাজমা বেগমের কাছে থেকে সাড়ে সাত শতক জমি কিনেছেন রফিকুল ইসলাম। সেই জমির মূল্য আট লক্ষ দশ হাজার টাকা। রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতি এক লক্ষ টাকায় ১৫ হাজার টাকা হিসেবে জমি রেজিষ্টি করেছে তিনি। দলিল লেখকরা সমিতির বাইরে কেউ যাবেনা,সেজন্য তাকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অনেক বেশি টাকা দিয়ে জমি রেজিষ্টি করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের হাসিবুর রহমান জানান, তিনি ১১ শতক জমি কিনেছেন ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়। দলিল লেখক সমিতি রেজিষ্ট্রি খরচ নিয়েছে ৪২ হাজার টাকা। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা এরকম আরো অনেকেই তাদের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন।
আরও জানা যায়, দলিল লেখক সমিতিতে সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক রয়েছেন ১১৭ জন। আইন অনুযায়ী দলিল লেখকরা দলিল লেখার বিনিময়ে প্রতি পৃষ্ঠা বাবদ ও সরকারি ফি’র হার নির্ধারণ করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে একটি করে তালিকা টানিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে।
এ ছাড়া লাইসেন্সধারী কোনো দলিল লেখক আইন লঙ্ঘন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু চারঘাটে এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। অনিয়ম ও সাধারন জনগনের ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক রায়হানুল হক বাবু সবকিছু শোনার পরে বলেন, ফোনে এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইনা। সামনাসামনি দেখা করেন, তখন কথা হবে।
চারঘাট উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার (এসআর) শাহীন আলী বলেন, ‘সমিতির নামে জিম্মি করে দাতা বা গ্রহীতার কাছ থেকে চাঁদা আদায় গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
স/মা
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়