শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২ জুন ২০২২
চলছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। আম ও লিচুসহ অন্যান্য ফলের ভরা মৌসুম। আর রসালো ও সুস্বাদু আমের মধ্যে স্বাদে অনন্য রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহত্তর আমের হাট বানেশ্বর হাট। দিনভর রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি।
জ্যৈষ্ঠের বৈচিত্র্যময় দিনে জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজারগুলো। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে এবার আমের ক্ষতি হলেও ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা। ফলের রাজা আমের বেচাকেনা জমে ওঠায় ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাজশাহীর সবচেয়ে বৃহত্তর আমের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটের আশপাশের সড়কগুলোতে এখন শুধুই আম আর আম। যেদিকে চোখ যাবে চোখে পড়বে আম ভর্তি ভ্যান। বাগানের কাঁচা-পাকা আম নিয়ে সব ভ্যানের গন্তব্য বানেশ্বর বাজার।
সোমবার সকালে হাটে গিয়ে দেখা গেল, বাজারে উঠেছে নানা জাতের আম। খোলা আকাশের নিচে সবজি বাজার স্থানে ও হাইওয়ে রাস্তার উপর ভ্যানের ওপর সাজিয়ে বিক্রি করছেন শতশত আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা। হাইওয়ে রাস্তার উপর আমের হাট বসায় রাস্তায় ব্যাপক জানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে দুর্ভগ পোয়াতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। সপ্তাহের সাত দিনই এখন ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখরিত বাজারটি। প্রচন্ড রোদের মধ্যেও কেনা-বেচায় ব্যস্ত সবাই। হিমসাগর ও গোপালভোগ, লোকনাসহ নানা জাতের আম এই বাজার থেকেই রওনা দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে গোপালভোগ ও বিভিন্ন ধরনের আটির আমের সঙ্গে হিমসাগর ও গোপালভোগ, লোকনা, লক্ষণভোগ জাতের আম বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে আম চাঘীদের। এই হাটে আম বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আম বেশি উৎপাদন হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৪৬/৪৮ কেজিতে মণ ধরে মণ প্রতি গোপালভোগ আম সর্বনিম্ন ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকায়, হিমসাগর ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা, লোখনা ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বানেশ্বর বাজারের আশপাশে রয়েছে শতাধিকের বেশি আমের আড়ৎ। বেশ কয়েকটি আড়ৎ ঘুরে দেখা গেল, সবগুলোই ভরে উঠেছে গায়ে আঠা লেগে থাকা টাটকা আমে।
বানেশ্বরের আমের আড়ৎদার সাইফুল জানান, এখন আড়তে যেসব আম আছে সব দূর-দূরান্তে পাঠানোর জন্য কাচা থাকতেই গাছ থেকে নামানো হয়েছে। এই সব আম গাছে পেকে যাওয়ায় এবং প্রশাসনের বেধে দেওয়া নিয়ম মেনে আম পাড়া হচ্ছে। এবার শেষ সময়ে এসে ঝড়ে আমের কিছুটা ক্ষতি হওয়ার কারণে গতবাবের চেয়ে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আম। তবে উৎপাদনে কমতি নেই বলেও জানান তিনি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। রাজশাহীর অনেক মানুষও আম কিনে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছেন।
রাজশাহীর আম এখন কুরিয়ার সার্ভিস ও অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিদেশেও যাচ্ছে। বানেশ্বর এলাকার আব্দুল মজিদ বলেন, রাজশাহীর আম এখন কুরিয়ার সার্ভিস ও অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং বিদেশেও যাচ্ছে। এজন্য গোপালভোগ আমের দাম বেড়ে সর্বনিম্ন ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন ধরনের আটির আম ৭০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে । রাজশাহীতে গাছ থেকে আম নামানোর নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ২৮ মে হিমসাগর, ৬ জুন ল্যাংড়া, ১৫ জুন আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই বারি-৪ ও আশ্বিনা, ১৫ জুলাই গোলমতী, ২০ আগস্ট ইলামতি আম চাষিরা গাছ থেকে নামাতে পারবেন। এরইমধ্যে বাজারে লক্ষণ ভোগ আম উঠতে শুরু করেছে। তবে দাম একটু কম। তারপরও ফলন ভালো হয়েছে। এবছর ব্যবসা ভালো হবে আশা করা যাচ্ছে।
বানেশ্বর ছান্দাবাড়ী এলাকার আবুল খায়ের বলেন, সরকার আম নামানো বা বাজারে বিক্রির সময়সূচি দেওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। কেউ কেমিক্যাল ব্যবহার করে আম পাকাতে বা জোর করে বাজারে বিক্রি করতে পারছে না। তাড়াহুড়ো করার কোন প্রয়োজন নেই। সময় মত আম বাজারে আসবে। মানুষ পরিপক্ক সুস্বাদু আমই পাবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর পুঠিয়া উপজেলায় ১৫৩০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এবং উৎপাদন লক্ষ মাত্র ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন, যা গত বছর ১৫৩০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিলো এবং উৎপাদন লক্ষমাত্র ছিলো ১৮ হাজার ৫৩৪ মেট্রিক টন আম।
এব্যপারে পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শামসুন্নাহার ভূঁইয়া জানান, এ বছর রাজশাহী অঞ্চলে আবহাওয়া ভালো থাকায় আমের ফলন ভালো হয়েছে। তবে গতবারের চেয়ে আমের গাছে মুকুল কম থাকায় আমের লক্ষ্যমাত্রা এবছর কম। তাই কৃষক এবছর ন্যায্য মূল্য পাবে বলে আশা করি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়