বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৮ ১৪৩১
|| ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩
বাঁশের ওপরে নিপুণ হাতে বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব ফুটিয়ে তোলেন ৫৫ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম। বাঁশ, বাঁশের শেকড়, কাণ্ড ও কনচি দিয়ে লাঠিতে তিনি তৈরি করেন পাখি, সাপ, কাক, মুরগি, শেয়াল, বেজি, বক, কুমিরের অবয়ব। লাঠির ওপরে কিংবা লাঠির নিচে কখনো পুরো লাঠিজুড়ে ফুটে ওঠে বিভিন্ন প্রাণীর কাঠামো। তার এমন শৈল্পিক বাঁশের লাঠি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে মানুষ।
রফিকুল ইসলাম জানান এটিই এখন তার শখ, যা নেশায় পরিণত হয়েছে। এগুলো তিনি বিক্রির জন্য করেন না।
জানা যায়, শৈল্পিক নকশার কারিগর রফিকুল ইসলাম পেশায় মোজাইক মিস্ত্রী। তিনি রাজশাহীর বিভিন্ন জেলায় কাজ করে বেড়ান। কাজের খাতিরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা ঘুরতে হয় তাকে। ঘুরে ঘুরে তিনি বাঁশের শেকড়, কাণ্ড ও কনচি নিয়ে আসেন। আর অবসরে লেগে পড়েন বাঁশের শেকড় বা কাণ্ডতে পাখি, সাপ, কাক, মুরগি, শেয়াল, বেজির অবয়ব তৈরিতে।
রফিকুল ১৫ বছর ধরে তার নিপুণ হাতে বিচিত্র সব আকার আর অবয়বের বাঁশের লাঠি তৈরি করছেন। বাঁশের শেকড়, কাণ্ড ও কনচি দিয়ে তৈরি করা এসব লাঠিগুলো স্থানীয়দের মাঝে বেশ সমাদৃত।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, তার হাতের নকশার কাজ ভালো। অনেক দিন থেকে দেখি বাঁশের লাঠি তৈরি করতে। এসব কাজ সবাই পারবে না। কারণ অনেক কষ্ট হয় বিভিন্ন আকৃতি দিতে। পাখি, সাপ, কাক, মুরগির লাঠি দেখতে অনেক ভালো লাগে।
শিল্পী রফিকুল ইসলাম জানান, আমি ছোট ছিলাম। মনে পড়ে আমার বয়স ১০ বছর হবে। তখন আমার নানা মো. খেতু মোল্লার কাছে বাঁশের সুন্দর লাঠি দেখেছিলাম। লাঠিটা আমি নাড়াচাড়া করতাম। আমার অনেক ভালো লাগতো। ১৯৯৯ সালের দিকে রাজশাহীর ভদ্রায় ওলিবাবার মাজারে বাবা বেড়াতে এসেছিলাম। তখন এক বাবার হাতে এই বাঁশের লাঠি দেখি, আমার ভালো লাগে। তখন থেকে আমার শখ তৈরি হয়, আমিও একটা লাঠি বানিয়ে নিয়ে বেড়াবো।
তিনি আরও জানান, আমি লাঠি তৈরি করা শুরু করি ২০০৭ সাল থেকে। বাঁশের কাণ্ডগুলো ঝাড়ে গিয়ে খুঁজতে হয়। পছন্দ হওয়ায় সেই বাঁশের শেকড়, কাণ্ড মাটি খুড়ে তুলে আনি। একটা লাঠি করার পরে আমার আরও ভালো লাগতে থাকে। তারপরে যত লাঠি করি ততোই মজা লাগে। এখন বিভিন্ন আকৃতির ১৭২টি লাঠি আছে আমার সংগ্রহে।
তবে রফিকুল এই লাঠিগুলো বিক্রি করেন না। কেন বিক্রি করেন না এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একদিন এক ফকির আমাকে বলে, তোমার লাঠি দিও। আমি তাবিজ করে বিক্রি করবো। আমি তো জানি তাবিজে কোনো কাজ হবে না। তাই আমি দেইনি। মানুষকে ঠকিয়ে কোনো লাভ নেই। ভালোবাসার জিনিস বিক্রি করতেও ভালো লাগে না।
রফিকুল ইসলামের ছেলে সাহেব আলী জানান, ‘আমি ছোট বেলা থেকে দেখি বাবা বাঁশের লাঠি তৈরি করেন। লাঠিগুলোতে বিভিন্ন অবয়ব দেন। কোনটির মাথায় পাখি। কোনটির মাথায় সাপ। আবার কোনটির মাথায় কাক বা মুরগির মতো। অনেক দূর থেকে মানুষ আসে এগুলো দেখতে। বাবা এগুলো অনেক যত্ন করেন। বাড়িতে থাকলে কাপড় দিয়ে ধুলাবালি ঝাড়েন। পরে সরিষার তেল দিয়ে রেখে দেন।
কাটাখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল বরহান উদ্দিন রাব্বানী জানান, রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকে এ ধরনের কাজ করে থাকেন। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসেন। বাঁশ দিয়ে অনেক সুন্দর লাঠি তৈরি করেন তিনি। সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা করি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়