শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ২১ ১৪৩১
|| ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০১৯
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দুই শিক্ষকের গাফিলতির কারণে কয়েকটি বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে বিভাগের জরুরি সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য জানান বিভাগের শিক্ষকরা।
ওই দুই শিক্ষক হলেন অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ ও সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন। অধ্যাপক মুসতাক বিএসএস তৃতীয় বর্ষের ৩০৭ কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার এবং বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ২০৬ কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র ও নম্বরপত্র জমা দেননি। আর কোর্স শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন ইনকোর্স পরীক্ষার উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের নিকট হস্তান্তর করেননি। ফলে আটকে গেছে কয়েকটি বর্ষের ফলাফল প্রকাশ।
শিক্ষার্থী ও বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে বিভাগটির স্নাতক শ্রেণির চারটি বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়। চতুর্থ বর্ষ ছাড়া সবগুলো বর্ষের পরীক্ষাই শেষ হয় ডিসেম্বরে। চতুর্থ বর্ষের (বর্তমানে মাস্টার্স) পরীক্ষা শেষ হয় ২৪ জানুয়ারি। গত ১৭ জুলাই প্রথম বর্ষের (বর্তমান দ্বিতীয় বর্ষ) ফল প্রকাশ হলেও এখন পর্যন্ত অন্যান্য বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়নি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের জন্য বলা আছে।
এর আগে বুধবার ফলাফল প্রকাশের দাবিতে বেলা পৌনে ১১ টায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ও বিজনেস অনুষদের ডীন অধ্যাপক এম হুমায়ূন কবির আন্দোলন স্থগিত করার আহ্বান জানান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সে আহ্বান প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
এ রকম পরিস্থিতিতে বিভাগে জরুরি একাডেমিক সভা আহ্বান করে বিভাগের সভাপতি আ-আল মামুন। একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগের শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেন। উপাচার্য ২৪ ঘণ্টার সময় নেন এবং তা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিভাগ। বিষয়টি শিক্ষকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বললে তারা সেদিনের মতো আন্দোলন স্থগিত করে।
তবে ২৪ ঘণ্টা পার হলে বৃহস্পতিবার বিকেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানতে পারে ওই দুই শিক্ষক উত্তরপত্র ও নম্বরপত্র জমা দেননি। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে সভাপতির সঙ্গে দেখা করে বিকেল পাঁচটায় বিভাগের সামনে আবারও অবস্থান কর্মসুচি শুরু করে।
এ পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় বিভাগে জরুরি সভা ডাকা হয়। সভা শেষে রাতে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে সিদ্ধান্ত জানান বিভাগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, “গতকাল বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার ২০১৮ সালের ফলাফল প্রকাশের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টায় বিভাগের সভাপতির কক্ষ অবরুদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সকাল সাড়ে ১১টায় বিভাগের জরুরি একাডেমিক সভার আহ্বান করা হয়।সভা থেকে উপাচাযের (ভারপ্রাপ্ত) দেখা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উপাচার্য যে সকল শিক্ষক খাতা জমা দেননি, তাদেরকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নম্বরপত্র জমা দানের জন্য ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবেন বলে আশ্বস্থ করেন এবং এই বার্তাটি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।”
“কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জনাব অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ এমএসএস ৫১৩ কোর্সের ইনকোর্স নম্বরপত্র এবং বিএসএস সম্মান ৪০১ কোর্সের ইনকোর্স পরীক্ষার সংশোধিত নম্বরপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু তার কাছে বিএসএস তৃতীয় বর্ষের ৩০৭ কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার এবং বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ২০৬ কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র এবং নম্বরপত্র বিভাগের অফিসে জমা দেননি। এই দুটি খাতা উনি গ্রহণ করেছেন। ৩০৭ কোর্সটি ৬ জানুয়ারি ২০১৯ এবং ২০৬ কোর্সটি নিয়েছেন উনি ২০১৭ জানুয়ারি ২০১৯।”
তিনি আরো বলেন, “এছাড়া বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষ ২০৭ নম্বর কোর্সের কোর্স শিক্ষক এবং পরীক্ষক জনাব সেলিম রেজা নিউটন গ্রীষ্মকালীন ছুটির কিছুদিন আগে উত্তরপত্র মূল্যায়নে অপারগতা প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কমিটি নতুন পরীক্ষক নিয়োগ দেন। উক্ত পরীক্ষকদ্বয় উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ইতোমধ্যেই নম্বরপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু কোর্স শিক্ষক জনাব সেলিম রেজা নিউটন ইনকোর্স পরীক্ষার উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের নিকট হস্তান্তর করেননি। কিন্তু বিভাগের সভাপতি গতকাল (বুধবার) সেলিম রেজা নিউটনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে তিনি কমস্থলের বাইরে আছেন। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ফিরে ২ আগস্ট ২০১৯ সকাল বেলা ইনকোর্সের উত্তরপত্র এবং নম্বরপত্র সংশ্লিষ্ট পরীক্ষকের মাধ্যমে পরীক্ষা কমিটির কাছে জমা দিবেন বলে জানিয়েছেন।”
“শুক্রবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ ফেইসবুকে শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপে একজনের স্ট্যাটাসের নিচে মন্তব্য লেখেন এখনো খাতা দেয়নি আরো ২৪ দিন লাগবে, হোক আন্দোলন।
এমতাবস্থায় উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে অবহিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে মামুন বলেন। বিভাগের সভাপতির সঙ্গে এ সময় ১৬ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিভাগের শিক্ষকরা আশ্বাস দিলে সকল বর্ষের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয় এবং রোববার থেকে সকল ধরনের ক্লাস-পরীক্ষায় যোগ দেওয়ার আশ্বাস দেয়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, “আমাদের শিক্ষকরা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দুই-একজন শিক্ষকের জন্য ফলাফল প্রকাশ আটকে আছে। বিভাগের শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তারা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকে অবহিত করবেন। তাই আমরা আন্দোলন স্থগিত করেছি। সঙ্গে ক্লাসেও ফিরছি।”
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়