শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২১
কোরবানির ইদকে সামনে রেখে রাজশাহীর দুর্গাপুরে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হচ্ছে কোরবানির গরু। কিন্তু গো-খাদ্যের সংকট, মূল্য বৃদ্ধি, বাজার মন্দা, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় পশুহাট স্থাপনে বিধিনিষেধসহ নানা কারণে খামারিরা ভাল দাম নিয়ে শংকায় রয়েছেন। করোনা সংকটে গতবছরের মতো এবারও লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে খামারি ও চাষিরা প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে প্রায় ৩০ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ করেছেন। এসব গরু নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও সরবরাহ করা হবে বলে জানান ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তবে করোনায় ব্যবসায়ীদের অনলাইনে গরু বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৪১১টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের প্রতিযোগিতা চলছে।
সম্প্রতি গরু মোটাতাজাকরণে ৪১১ খামারিকে প্রশিক্ষণ, কৃমি নাশক ওষুধ ও ভিটামিন মিনারেল জাতীয় ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবারে ২-৩টি করে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এসব খামার ও পরিবার থেকে কোরবানির জন্য ৩০ হাজার গরু টার্গেট করা হয়েছে।
এছাড়াও ৪০ হাজার ছাগল স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এসব গরু ও ছাগল নিজ উপজেলা ও জেলার চাহিদা পূরুণ করে ঢাকায় কোরবানির হাটে সরবরাহ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর কোরবানির ইদকে সামনে রেখে উপজেলায় মৌসুমী খামারি ও ব্যবসায়ীরা মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর অবৈধ স্টেরয়েড হরমোন ব্যাবহার করে দ্রুত গরু মোটাতাজা করতো। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এবার প্রাণিসম্পদ বিভাগের তৎপরতার কারণে চলতি বছর এই প্রবণতা অনেকটাই কমেছে।
এ বছর ব্যাপক হারে প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, ঘাস, বিভিন্ন প্রকারের ভুষি, খৈল এবং ভিটামিন খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে।
খামারি ও চাষিরা জানান, গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে সাধারণত খড়, লালি-গুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাষকলাই, মটরের ভুসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। গরুর জন্য এটা বিজ্ঞানসম্মত। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে ক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না।
এ ধরনের গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা গরুর চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে গো-খাদ্য বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ১শ’ টাকার উপরে। ফলে খামারি ও চাষিরা অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছে।
উপজেলার দেলুয়াবাড়ী গ্রামের আবু তাহের নামের এক মৌসুমী ব্যবসায়ী জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর ছোটবড় ১২টি গরু প্রাকৃতি উপায়ে মোটাতাজা করণ করছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসকরা আমার খামারের গরু পর্যবেক্ষণ করছেন। তাঁর খামারে তিন স্তরের গরু রয়েছে। ছোট বড় ও মাঝারি। এসব সুস্থ গরু কোরবানির হাটে সরবরাহ করা হবে।
তিনি বলেন, গত বছর ঈদুল আজহা সামনে রেখে এ অঞ্চলের কিছু কিছু অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ী গরুকে মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড জাতীয় নানা ওষুধ ব্যবহার করছে। অস্বাধু উপায়ে গুরু মোটাতাজা করতে গরু মরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
গত বছর এভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করতে গিয়ে অনেক খামারে গরুর মৃত্যু হয়েছে। এমনকি কোরবানির হাটেও গরুর মৃত্যু হয়েছে। অধিক লাভের আশায় তারা গরু মোটাতাজা করতে ব্যবহার করে ডেক্সিন, স্টেরয়েড, হরমোন, উচ্চমাত্রার রাসায়নিক ব্যবহার করেন চাষি ও খামারিরা। তবে এবার এসব চিত্র নেই বললেই চলে।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের সাহাবুল ইসলাম বলেন, ৫টি গরু মোটাতাজাকরণ করছি। সম্পূন্ন প্রাকৃতিক উপায়ে। ট্যাবলেট খাইয়ে গরু মোটা করা গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। এই মাংস খেলে মানুষের ক্যান্সারসহ নানা রোগব্যাধি হতে পারে।
উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের খামারি আবুল হাসনাত বলেন, ১৫টি গরু মোটাতাজা করছি। ইতিমধ্যে বিক্রি শুরু করছি। দেশীয় পদ্ধতিতে শুধু সবুজ ঘাস, খড়, গম ও কালাইয়ের ভুসি, খৈল এবং ফিড খাওয়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শে গরুর হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং শারীরিক গঠনের জন্য জিঙ্ক খাওয়াচ্ছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদেও জানান, করোনা সংকটের মধ্যেও এবার ব্যাপকহারে গরু লালন পালন করছেন চাষিরা। এবার ওষুধ বা ইনজেকশন দিয়ে কোনো গরু মোটা করা হচ্ছে না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ তৎপর রয়েছেন। চাষি ও খামারিদের প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণে প্রশিক্ষণ ও নানান প্রচারণা চালানো হয়েছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে চাষিদের নানা রকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, পাম, ডেক্সামেথাথন ও স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর গরুর চামড়ার ভেতরেবাড়তি পানির স্তর জমে গরুকে বেশি মোটাতাজা ও সবল দেখায়। এতে কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। পাম বড়িতে ক্ষতিকর স্টেরয়েড থাকে। স্টেরয়েড গবাদিপশুর দেহে মারাত্মক বিষ ছড়িয়ে দেয়। এতে গরুর লিভার নষ্ট হয়ে যায়। স্টেরয়েড মিশ্রিত গরুর মাংস মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি এমন পদার্থ, যা মাত্রাতিরিক্ত তাপেও ধ্বংস হয় না।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়