শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২০
চাহিদার তুলনায় রাজশাহীর দুর্গাপুরে এবার পেঁয়াজবীজ উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবুও এবার পেঁয়াজবীজের দাম কৃষকের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিক্রি হচ্ছে আকাশ ছোঁয়া দামে।
উপজেলায় আমন কাটা-মাড়াই পরেই রবি মৌসুমে পেঁয়াজের চাষাবাদ শুরু হয়। এর জন্য কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময় পেঁয়াজবীজ বোপন করতে হয়। কিন্তু এবার বীজ বোপনের শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কা খাচ্ছেন কৃষকেরা। দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে হওয়ায় কৃষকেরা বীজতলা তৈরি নিয়ে চরম সংশয়ে রয়েছেন।
চড়া দামের বীজ কিনে পেঁয়াজের আবাদ করলে লাভ হবে কি না, উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, তা ভেবে সংশয়ে রয়েছেন কৃষকেরা। রবি মৌসুমে মূলত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পেঁয়াজের আবাদ করে মার্চ-এপ্রিলে পেঁয়াজ ঘরে তোলা হয়।
দুর্গাপুর কৃষি অফিস জানায়, উপজেলা চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ২ শ ৬০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এবার উপজেলায় চাহিদার তুলনায় বেশি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয়েছে। কৃষকরা এবার উপজেলায় ৮০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে ছিলেন। আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলনও ভাল হয়ে ছিল। এতে উৎপাদন হয়ে ছিল ৫৬ মেট্রিক টন। আর উপজেলায় কৃষকের পেঁয়াজ বীজের চাহিদা ৩৫ মেট্রিক টন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, জমি থেকে পেঁয়াজবীজ সংগ্রহের পরপরই পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বীজ ক্রয় করতে আসেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ওইসব ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজার দর থেকে কিছু টাকা বেশি দরে কৃষকের কাছে উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি বীজ নিয়ে চলে যান।
ফলে উপজেলায় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হলেও বীজ বোপনের শুরুতে বীজ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গতবারের তুলনায় পেঁয়াজবীজের দাম প্রতি কেজি সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকার মতো বেড়েছে। তাই বেশি জমিতে আবাদ নিয়ে কৃষকেরা দোটানায় পড়েছে।
গত মৌসুমে প্রতি কেজি পেঁয়াজবীজ দেঁড় হাজার থেকে এক হাজার ১৮০০ টাকা দর বিক্রি হয়েছে। কিন্তু চলতি বছর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই চড়া দামের বীজ কিনে আবাদ করলে উৎপাদন খরচ উঠবে কি না, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন তারা। অনেক কৃষক লোকসানে ভয়ে এবার পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের পেঁয়াজবীজ চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনি অল্প জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করে ছিলেন। আবহাওয়া ভাল থাকায় উৎপাদনও হয়ে ছিল ভাল। খেত থেকে পেঁয়াজবীজ উঠানোর পরপরই পাবনার ব্যবসায়ীরা আসেন। তখন আমাদের এলাকার পেঁয়াজবীজের দাম ২হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা কেজি।
তখন স্থানীয় বাজার থেকে একটু বেশি দাম দিয়ে সব পেঁয়াজবীজ নিয়ে গেছেন পাবনার ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও বলেন, এখন দাম বেশি হবে, আগে জানলে তাদের কাছে পেঁয়াজবীজ বিক্রি করতাম না।
উপজেলার উজালখলসী গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনি গত বছরের প্রায় দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বোপন করেছিলেন। বাজারে দাম বেশি হওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হোন। এবার দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু পেঁয়াজবীজের অস্বাভাবিক দাম দেখে তিনি হতাশ।
তিনি বলেন, প্রতি বছর তিনি কার্তিক মাসের শেষের দিকে বীজ বোপন করেন। এক বিঘা জমিতে এক কেজি বীজ লাগে। তার মানে গত বছরের তুলনায় এবার শুরুতেই পেঁয়াজ আবাদের খরচ বিঘায় চার হাজার টাকা বেশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান জানান, কৃষকরা বাহিরে বিক্রি করার জন্যও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করেন। এজন্য কৃষকরা বাড়তি পেঁয়াজবীজ পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন।
আর কিছু বীজ নিজ ও স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বিক্রির জন্য আলাদা ভাবে বীজ মজুত করেন। উপজেলায় পেঁয়াজ বীজের কোন ঘাটতি নেই। তবে দু বছর ধরে পেঁয়াজের দাম সারাদেশেই আলোচিত। এ জন্য পেঁয়াজ বীজের দাম কিছুটা বেশি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়