শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২১
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের একটি ফসলের মাঠে লিচু গাছের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে আমনখেতের সবুজে সমারোহ। কৃষক আকছেদ আলী তাঁর দুই বিঘার লিচু বাগানে রোপণ করেছেন আমন ধান। ফলে একই জমিতে মিশ্র ফসল করে লাভবান হচ্ছেন তিনি।
এদিকে দুই ভাই মিলে প্রায় পোনে তিনবিঘা জমির আমবাগানে বোরো ধানের পর আবারও রোপণ করেছেন আমন ধান। লিচু ও আম বাগানে এখন ধানের খেতে পরিপক্ক হয়ে শীষ গজাতে শুরু করছে। একই জমিতে মিশ্র ফসল করে লাভবান হচ্ছেন তারা। ফলে উপজেলায় কৃষিতে এক নতুন সম্ভাবনার দেখা পেয়েছে প্রান্তিক কৃষকরা।
চৌপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আকছেদ আলী বলেন, তিনি ফিড মিলের একজন শ্রমিক। মিলের পাশেই তার দুই বিঘা রয়েছেন। অধিক লাভের জন্য লিচু বাগান করেছেন।
একই জমিতে লিচুর সঙ্গে ধান, আলু ও পেঁয়াজ চাষ করছেন। ফলে বছরে চার ধরনের খেত থেকে তিনি টাকা পাচ্ছেন। তিনি বলেন, তার দেখাদেখি এলাকায় এখন মিশ্র আবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
রৈপাড়া এলাকার কৃষক দুই ভাই রিপন ও খোকন জানান, পারিবারিকভাবে ওয়ারিশ সূত্রে জমি বণ্টন হওয়ায় কৃষি জমির পরিমাণ কম যাচ্ছে। কিভাবে অল্প খরচে, অল্প জমিতে, অল্প সময়ে অধিক ফসল পাওয়া যাবে এ চিন্তা থেকে আমবাগানে বছরে তিনটি ফসল করছি।
আমবাগানে আমন ধানের আগে বোরা ধান ছিল। বোরো ধানে আগে চাষ করা হয়ে ছিল মসূর। তাতে বাম্পার ফলন হয়েছে। মসূর দেরিতে উঠায় বোরোধান রোপণ করতে দেরি হয়ে ছিল। তারা বলেন, আম এ অঞ্চলের লাভজনক ফসল।
এ কারণে ফসলি জমিতে আম গাছ লাগানো হয়েছে। জমিতে আমগাছ লাগানোর দশ বছর পর্যন্ত জমিতে অন্য মিশ্র আবাদ করা যায়। পাশাপাশি বাগান থেকে আমও পাওয়া যায়।
দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ অঞ্চলের মাটি খুবই ঊর্বর। একটি জমিতে থেকে বছরে এখন তিনটি থেকে চারটি পর্যন্ত ফসল ফলে থাকে। এরপরও কিছু কৌশলী কৃষক রয়েছেন তারা এক ফসলের ভিতর দুই থেকে তিন রকম ফসল চাষ করে থাকেন। এতে তারা অধিক লাভবান হোন।
উপজেলার নওপাড়া, শ্যামপুর, শিবপুর, উজানখলসী, কানপাড়া, রসুলপুর, দাওকান্দি, মোহাম্মাদপুর, কিসমত বগুড়া, আড়ইল, পানানগর, হরিরামপুর, শালঘরিয়া, দেবীপুর, চুনিয়াপাড়া, বাজুখলসী সহ বিভিন্ন গ্রামে একই জমিতে মিশ্র পদ্ধতিতে ফসল চাষ করতে দেখা যায়।
দুর্গাপুর এলাকার মাটি কলা, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, ধান, আদা, কচু, হলুদসহ নানা কৃষি ফসল চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। আম, পেঁয়ারা, লেবু ও সবজি চাষের সাথে সাথী ফসল চাষের পদ্ধতি বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কলনটিয়া গ্রামের আব্দুল্লাহ মামুন বলেন, তার মূল ফসল পেয়ারা। সাথে এক বছরের ফসল পেঁপে লাগান। এরপরও জমির ধার দিয়ে আদা ও কঁচু লাগিয়েছেন।
তিনি বলেন, একই জমি থেকে আমি বাণিজ্যকভাবে পেয়ারা বিক্রি করতে পারবো। বাড়িতে খাওয়ার জন্য আদা ও কচু পাবো। ফলে এক জমিতে মিশ্র ফসল করে অধিক লাভবান হওয়া যাচ্ছে।
অপর কৃষক শরিফুল তার জমিতে একই ভাবে লাগিয়েছেন কলা, পেঁপে, আদা, কচু, ডাটা ও পুঁইশাক লাগিয়েছিলেন। এভাবে উপজেলায় একই পদ্ধতিতে অনেক কৃষক ফসল চাষে ঝুঁকেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, কৃষকরা অধিক লাভবানে মিশ্র আবাদে ঝুঁকছেন। এখন পেয়ারা বাগানে এক সাথে আদা, পেঁপে, কচু, হলুদ, লেবু, মরিচসহ নানা কৃষি ফসল চাষ করছে। এটা একটা ইতিবাচক মিশ্র ফসল চাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতির চাষের ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।
তিনি বলেন, দিনদিন এ অঞ্চলে কৃষি জমি কমছে। জমি কম হওয়ায় কৃষকরাও বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়