বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ২৪ ১৪৩১
|| ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারি ২০২১
সরকারের কৃষি প্রণোদনায় আওতায় জেলার একমাত্র দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা গ্রামে এবার ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে দেঁড়শ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হবে।
কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে, কর্তনোত্তর অপচয় রোধ, শ্রমিকের কায়িক শ্রম লাঘব, শ্রমিকের অভাব পূরণ ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে ফসল উৎপাদনে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণের রাইস ট্রান্সটার পদ্ধতিতে হবে বোরোর আবাদ। সেই লক্ষে সমকালীন পদ্ধতিতে বোরোর বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সিংগা আইপিএম ক্লাবের পূরুষ ও নারী কৃষকরা।
জানা গেছে, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ফসলের মাঠ এখন শীতকালীণ ফসল আবাদের ধুম পড়েছে। মাঠে আলু, পেঁয়াজ, সরিষা, ভুট্টা, গম, সূর্যমুখী ও শাকসবজিতে ভরপুর। সেই সঙ্গে বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরিতে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৫হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে বোরোধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের নির্দেশনা ও পরামর্শে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে ঘুরে ঘুরে নির্বিঘ্নে বোরো ধান চাষে বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষ, বীজ শোধন, আদর্শ বীজতলা, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার যত্ন ইত্যাদি গ্রহণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। সেই লক্ষে উপজেলার সিংগা গ্রামে আইপিএম কৃষক ক্লাবের কৃষকরা সমকালীন পদ্ধতিতে বোরোর বীজ তলার প্রস্তুতি চলছে। এ কাজে সার্বিক দেখভাল করছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান।
দুর্গাপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বোরোধানের উৎপাদন খরচ কমাতে উপজেলার সিংগা গ্রামে বোরো ধান চাষে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত যন্ত্র ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করতে ৪৫ জন কৃষকের দেঁড়শ বিঘা জমিতে বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদের জন্য কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নিবিড় তত্ত্বাবধানে ও ৪৫ জন কৃষকসহ স্থানীয় জনগণ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সাইজের ২ হাজার ১শ’টি প্লাস্টিক ট্রেতে ২ সেমি জৈব সার মিশ্রিত মাটি ভরাট করে কাঠ দিয়ে ভালভাবে সমতল করে প্রতিটি ট্রেতে ১২০-১৫০ গ্রাম অঙ্কুরিত বীজ বপনকরে ০.৫ সেমি মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দেয়া হয়।
শৈত্যপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা করতে ঢেকে দেয়া হয়েছে স্বচ্ছ সাদা পলিথিন। বোরো ধানের আধুনিক জাত হিসেবে লাল তীরের হাইব্রিড টিয়া ভিত্তি বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। কৃষকরা নিজেরাই নিয়মিত বীজতলার পরিচর্যা করছে। বীজতলার দু’পার্শ্বে পানি নিস্কাশনের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে সেচ। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে দেড়শো বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হবে।
সিংগা গ্রামের কৃষক খালিদ হাসান, শিমুল ও বাবর জানালেন, সরকারের প্রণোদনায় তারা সার, বীজ ফ্রি পেয়েছেন। সমকালীন চাষাবাদ পদ্ধতিতে যন্ত্র ব্যবহার করে একই সময়ে, একই জাতের ফসলের একসাথে চারা রোপন, আন্ত:পরিচর্যা ও কর্তন করা হয়। এ পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে অল্প দিনের চারা রোপন করা সম্ভব। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের জন্য ট্রেতে উৎপাদিত চারা রোগ বালাই মুক্ত, সম ঘনত্বের সবল সতেজ চারা উৎপাদিত হয় ও পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় ফলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহেও চারা সুস্থ থাকে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা সারিতে রোপণ করা যায় ফলে গাছ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়, সমভাবে খাদ্য গ্রহণ করে, কুশির সংখ্যা বৃদ্ধি হয় ফলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায় ও বীজতলা ও ধান ক্ষেতে আন্তঃপরিচর্যা (সেচ, নিড়ানী, স্প্রে) করতে সুবিধা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান বলেন, সারাদেশের ৬৪ জেলায় একটি করে কৃষি প্রণোদনার আওতায় এ প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর জেলার দুর্গাপুর উপজেলা এর আওতায় রয়েছে। এ বোরো ধানের সমকালীন চাষাবাদ প্রযুক্তিটি কৃষকের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে এবং প্রযুক্তিটি সম্প্রসারণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। এ প্রযুক্তিতে বোরোধান চাষ করা হলে কৃষকের ধান চাষের উৎপাদন খরচ ও সময় দুই সাশ্রয় হবে এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে কৃষকও লাভবান হবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়