শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২২
সড়কের পূর্ব পাশে উঁচু পাহাড়, পশ্চিম পাশে পাথুরে সৈকত পাটোয়ারটেক। এই সৈকতের সৌন্দর্য দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমণে আসেন পর্যটকেরা। পাটোয়ারটেক সৈকত দেখতে অনেকটা বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের মতোই। সৈকতজুড়ে গোলাকৃতির বড় বড় পাথরখণ্ড। পর্যটক টানছে নতুন এই সেন্টমার্টিন!
সৈকতজুড়ে গোলাকৃতির বড় বড় পাথরখণ্ড। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
পাটোয়ারটেক সৈকতের উঁচু- উঁচু পাহাড় এবং পাহাড়ের পাদদেশের সুপারি আর নারিকেল গাছে ভরপুর। এই সবুজ সমারোহ পর্যটকদের দিচ্ছে নির্মল আনন্দ। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে পর্যটকদের পদচারণে মুখর এ পাথুরে সৈকতকে ঘিরে গড়ে উঠছে অসংখ্য দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জায়গা-জমি কিনে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রবালদ্বীপের মতো সৈকতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অসংখ্য চুনাপাথর। পর্যটকেরা পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। কেউ কেউ ধারণ করছেন ভিডিও চিত্র। ঝড়-বৃষ্টির দিনে সমুদ্র উত্তাল হলে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে উপকূলে। মুহূর্তে লোনাপানি ভিজিয়ে দেয় পাথরখণ্ডের ওপর দাঁড়ানো মানুষের পা-শরীর।
প্রবালদ্বীপের মতো সৈকতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অসংখ্য চুনাপাথর। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
কক্সবাজার ভ্রমণে এসে পাটোয়ারটেক সৈকতে না নেমে ঘরে ফেরার মতো পর্যটকের দেখামেলা ভার। মেরিন ড্রাইভ দিয়ে টেকনাফ যাবার পথে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট এটি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য থাকে পাটুয়ারটেক। সৈকত ঘিরে মেরিন ড্রাইভের পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ। গভীর রাত পর্যন্ত লোকসমাগম থাকায় চাঙা ব্যবসা-বাণিজ্যও। লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ও জীববৈচিত্র্য দেখা যায় সেখানে। তবে এসব দেখার জন্য বিচ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি জোরালো উদ্যোগ নিয়েছেন।
শুরু থেকে পাথুরে সৈকতটিকে রক্ষা করতে প্রশাসন খুবই তৎপর রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে রেস্তোরাঁগুলোর আলোকসজ্জা এবং সৈকত আলোকিত থাকে। ফলে ভয়ের কোন কারণ নেই। সেখানে আছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ। যেখানে–সেখানে ময়লা–আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধ বলে চালানো হচ্ছে ব্যাপক প্রচারণা। তবে অসচেতন ভাবে ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা অপচনশীল প্লাস্টিকের বর্জ্য, যেমন মিনারেল ওয়াটারের বোতল, চিপসের প্যাকেট, কোমল পানীয়র ক্যান-বোতল, সিগারেটের ফিল্টার, পলিথিন ফেলছেন সৈকতে। অবশ্য ময়লা–আবর্জনা ফেলার জন্য সেখানে ডাস্টবিন আছে ।
প্রতিদিন ৫ থেকে ১৫ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটছে এখানে। মেরিন ড্রাইভের পাশ ঘেঁষে অপরিকল্পিতভাবে দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ তৈরির হিড়িক পড়েছে এই নতুন পর্যটন স্পটে। জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, কক্সবাজার শহরের কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবণী পয়েন্টের চার কিলোমিটারে দৈনিক লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগমও ঘটেছে। পর্যটকের গিজগিজ অবস্থা দূর করতে মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাটোয়ারটেকসহ বিভিন্ন স্থানে আরো কয়েকটি পয়েন্ট সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলছে। এসব পয়েন্টে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের নিরাপত্তা, ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা এবং ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যেহেতু নতুন তাই কিছু কিছু ত্রুটি থাকাটাই স্বাভাবিক। তারপর ও এটি একটি চমৎকার পর্যটন বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। পারিবারিক ও দলগত ভ্রমনের জন্য পাটোয়ারটেকের জুড়ি নেই।
যেভাবে যাবেন: কক্সবাজার শহরের কলাতলী মোড়,বাজারঘাটা,পেট্রোল লালদিঘী পাড়, পাম্প, কোটবিল্ডিং সহ যেকোন স্থান থেকে অটোরিকশা, টমটম অথবা মাইক্রোতে যতে পারেন। অটোরিকশায় জন প্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় যেতে পারেন পাটোয়ারটেক। ৩১ কিলোমিটার এ পথ অতিক্রম করতে সময় লাগবে প্রায় আধা ঘণ্টা।
কী খাবেন: স্পেশালি সেখানে সাগরের মাছের বিভিন্ন পদ খেতে পারবেন। অত্যন্ত ভালো মানের হোটেল রেস্তোরাঁ আছে সেখানে। সেখানকার ডাব খুব ভালো সাইজে ও বড়। আবার ফরমালিন মুক্ত পাহাড়ি বাংলা কলা পাবেন সেখানে। মাত্র দুই বা তিন ঘণ্টা সময় হাতে রেখেই উৎসবমুখর পরিবেশে পাটোয়ারটেক আনন্দ ভ্রমণ করতে পারবেন নির্বিঘ্নে নিরাপদে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়