শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২০
‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ কথাটি প্রমাণ করেছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার নলখোলা গ্রামের গৃহবধূ রূপালী খাতুন। অভাবের সংসারে একদিন দেনা মিটাতেই হিমশিম খেতে হতো রুপালীর স্বামীকে। মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় সাড়ে ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান করছেন তিনি। ২০১৭ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন রুপালী। সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে রুপালী এখন অনেকটাই পরিচিত মুখ। এবার আবারো সফল যুব নারী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
রাজশাহী জেলায় যেসব উদ্যাক্তা সফল হয়েছেন রুপালী খাতুন তাদের মধ্যে অন্যতম। হাতের সেলাইয়ের কাজ করে ঘুরে দাঁড়ানোর এক জীবন্ত উদাহরণ। তার সূচি কাজে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩০০ নারী কাজ করছেন।
এছাড়াও ৩২ বিঘা আয়তনের দু’টি পুকুরে মাছচাষ এবং খামারে দেড় হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে রুপালীর। তার দু’টি প্রকল্প থেকে প্রায় ৫০ জন মানুষের জীবিকা চলে। ব্যবসার পাশাপাশি রুপালী এখন উদ্যোক্তা পরামর্শক। প্রতিদিনই দারিদ্রকে জয়ের লক্ষ্যে তার কাছে থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন অনেকেই। তিনি পিছনের দুঃসহ দিনগুলো যাতে কারো জীবনে না আসে সেই লক্ষ্যে এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে অবদান রেখে চলেছেন।
রুপালীর পরিবারে একদিন অভাব নামক শব্দটি থাকলেও আজ সেখানে সাফল্য শব্দটি যোগ হয়েছে। স্বামীর কীটনাশক দোকানের লোকসান আর দেখতে হয়না তাকে। এখন প্রয়োজনে ও আনন্দে নিজেই খরচ করতে পারে অনেক অর্থ। ইচ্ছা ও স্বাধ মিটাতে মা-বাবাকেও করতে পারেন সহযোগিতা। আর এতে স্বামীর মুখাপেক্ষি হতে হয় তাকে। এখন সে পরিবারে অর্থনৈতিক যোগ বিয়োগে স্বাধীন।
সূচি কাজে তোহা বুটিকস, দু’টি পুকুর ও মুরগির খামার থেকে খরচ বাদ দিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ হয় রূপালীর।
রূপালী খাতুন জানান, “আমার স্বামী একজন কীটনাশক ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০১৩ সালের শেষে দিকে বড় ধরনের লোকসানে বেকার হয়ে পড়েন। টাকা পয়সা নাই। হতাশায় কাটে দিনরাত। প্রথমে স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টায় থাকি। এরপর পবা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সঈদ আলী রেজা ১৪ দিনের সূচি কর্ম প্রশিক্ষণে ডাকেন এবং প্রশিক্ষণ নিই।
প্রশিক্ষণের পর কিছু টাকা দেনা করে প্রথমে সেলাইয়ের কাজ শুরু করি। এতে লাভের মুখ দেখি। পাশাপাশি পরিবারে ও সমাজে আমার মর্যাদা বেড়ে যায়। তখন আমি যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ গ্রহণ করি। সেই শুরু। এরপর আমাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুই বছরের মধ্যেই সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১৭ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার পাই। আমি এখন তোহা বুটিকস’র মালিক। আমার বুটিকস কারখানায় এখন ৪ জন স্থায়ী নারী ও আমার অর্ডারের কাজ করেন বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৩০০ নারী আছেন। এছাড়াও খামারে ও পুকুরে আরো প্রায় ৫০ জন কাজ করেন।’
তবে তিনি সার্বিক সহযোগিতার জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর পবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলেননি। কর্ম, স্বামী ও একমাত্র সন্তান তোহাকে নিয়ে সুখের সংসারে রানী রূপালী। পবা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সঈদ আলী রেজা বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা রূপালী খাতুনের সফলতা উপজেলায় মডেল। পরিশ্রম ধোর্য্য ও সময়ের কাজ সময়ে করলে সফলতা আসবে। প্রতিটি কাজই সম্মানের। যা রূপালী প্রমাণ করেছেন।
স/এমএস
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়