শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২১
রাজশাহীর পবার বড়গাছিসহ আশপাশের এলাকায় আধাপাকা বোরোধানের খেতে হানা দিয়েছে কারেন্ট পোকা ও নেকব্লাস্ট। ধান কাটার আগ মুহূর্তে পোকার আক্রমণে কৃষকের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মাঠে সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন। তেমন ক্ষতি হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ধানের দাম ভালো থাকায় এবার রাজশাহী জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরোধানের চাষ হয়েছে। জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ হাজার ২৫০ হেক্টর। আর চাষ হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৩২ হেক্টর। পবা উপজেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১১০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পবা উপজেলার বড়গাছির মাধরপুর, কাঞ্চিয়াপাড়া ও তালগাছি এলাকায় প্রায় তিন শ বিঘা জমিতে কারেন্ট পোকা ও নেকব¬াস্টের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষিরা। বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক দিয়েও ধান নষ্ট হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শীঘ্রই ব্যবস্থা না নিলে একদিকে ধান কাটতে হবে না চাষিদের এবং অন্যদিকে লাখ লাখ টাকার লোকসান গুণতে হবে।
সোমবার সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ধানের শীষ ঠিকই আছে কিন্তু কোন শীষেই ধানের খোসার মধ্যে চাল নেই। শীষের গোড়ায় কালো-সাদা দাগ আছে। মূলত এসব ধানের প্রতিটি থোকায় ধান নেই আছে চিটা।
ধানখেতে উপস্থিত হওয়ার সাথে ১০-১২ জন কৃষক ছুটে আসেন। সেখানে কথা হয় মাধবপুর গ্রামের মুনতাজ আলীর ছেলে আহসান হাবিব ও একই গ্রামের বারিক হোসেনের ছেলে বেলাল উদ্দিন, কাঞ্চিয়াপাড়ার দুখাই মন্ডলের ছেলে এরশাদ আলী এবং আশরাফ আলীর সাথে।
তারা বলেন, বিকালে ভালো ধান জমিতে দেখে গেলে সকালে গিয়ে জমিতে ধানের শীষে সাদা চিটা থাকলেও দানা থাকে না। এই সংকট কালে চাষিরা দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির নামিদামি ব্যান্ডের কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে কোনা কাজে আসছে না।
জানা যায়, এই উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে দিগন্ত জুড়ে ছিল পাকা ধান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকার আক্রমন ছাড়া কৃষকেরা আগাম ধান কেটে ঘরে তুলছেন। তবে আলু তুলে নামলা (দেরিতে) লাগানো ধানের খেতে কারেন্ট পোকা ও নেকব্লাস্ট আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা।
বিশেষ করে এই উপজেলার বড়গাছি এলাকায় ব্যাপক জমিতে আলুচাষ হয়ে থাকে। পাশাপাশি বোরো ধানও রোপণ হয়ে থাকে দেরিতে। আগাম ধান ঘরে তুললেও নামলা ধান ঘরে তুলতে পারিনি।
চাষি আহসান হাবিব জানান, এই এলাকায় বেশির ভাগ চাষিই জমি লিজ নিয়ে বোরোধানের চাষ করে থাকে। চলতি মৌসুমেও বোরোধানের ভাল ফলনের বুক ভরা আশা করলেও ধান কাটার আগ মুহূর্তে ধান ধ্বংসকারী কারেন্ট পোকা হানা দেয়ার কারণে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। নানা জাতের ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না।
মোহনপুর উপজেলার ধোড়সা গ্রামের কোবাদ আলীর ছেলে মহসীন আলী জানান, তার ধোড়সা গ্রামের মাঠে দেড় বিঘা জমিতে ধানের আবাদ রয়েছে। এর মধ্যে ১২ কাঠা জমিতে পোকার আক্রমণ হয়েছে। কোন কিছু দিয়েই আক্রমণ থামছে না। পবার কাঞ্চিয়াপাড়ার এরশাদ আলী বিঘা প্রতি সাত হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে ধানের আবাদ করেছেন। তার মত অনেকের জমিতে ধান কাটতে যেতে হবে না। তালগাছি গ্রামের কৃষক মিন্টুও একই কথা বলেন।
এ ব্যাপারে বড়গাছি ১নং ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বলেন, ঈদের আগে বড়গাছির কাঞ্চিয়াপাড়া, মাধবপুর, কালুপাড়া বিলে বেশ কিছু কৃষকের জমিতে নেক ব্লাস্ট ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। পোকা দমনে মসজিদে মাইকিংসহ পাশে থেকে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চাষিরা সেই মত ব্যবস্থা নেয়ায় এখন পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাঠে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।
পবা উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা জানান, আবহাওয়ার কারণে কিছু জমিতে পোকার আক্রমণ হয়েছে। কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে দেরিতে লাগানো ধানে পোকার আক্রমন হচ্ছে। ফলন কিছুটা কম হলেও কৃষকের লোকসান হবে না। মাঠ পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রতিদিনই জুম সভায় এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রতিকারের বিষয়টিও কৃষকদের জানানো হচ্ছে।
তিনি জানান, মৌসুমের শেষ মুহূর্তে কারেন্ট পোকার আক্রমণ হচ্ছে। বৃষ্টি হলে হয়তো এমন হতো না। তবে চাষিদেরকে আমরা বিভিন্ন প্রকারের কীটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দিচ্ছি। মাঠে কাজ করছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। আশা করছি উৎপাদনের তেমন ক্ষতি হবে না।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়