রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||
জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১
|| ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২১
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মাচর চকরাজাপুর ইউনিয়নে জলমগ্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন। শুক্রবার (২০ আগস্ট) টিনের তৈরি ডিঙি নিয়ে তিনি অসুস্থ এক শিশুকে চিকিৎসা দিয়ে ফিরতে দেখা গেছে।
জানা যায়, বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে পরিবার রয়েছে ৩ হাজার ৭৬২টি। জনসংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরের অধিকাংশ বাড়িতে পানি উঠেছে। এরমধ্যে কেউ কেউ উঁচু মাচা করে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। আবার অনেকে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বাড়িতে অসুস্থ থাকা একটি শিশুকে ডিঙিতে গিয়ে ওই ইসমাইল হোসেন চিকিৎসা দিয়ে ফিরছেন।
দিয়াড়কাদিরপুর চরের নজরুল ইসলামের তিন বছরের ছেলে তাসমিন ইসলামকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে ফিরতে দেখা গেছে। ইসমাইলের দিয়াড়কাদিরপুর বাজারে একটি দোকান রয়েছে। বাজারটিও বন্যায় তলিয়ে গেছে। তবে তার দোকানটা কিছুটা উঁচু হওয়ায় ভেতরে পানি প্রবেশ করেনি।
এই দোকানে নিয়মিত বসেন, চিকিৎসা দেন। এরমধ্যে তার দোকানে কেউ না আসতে পারলে তাকে মোবাইল ফোনে জানালে সাথে সাথে তার ডিঙি নিয়ে ওই অসুস্থ ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।
তবে ইসমাইল ওষুধের দাম ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নেয় না বলে জানান। তার সাথে একটি ব্যাগ থাকে। ব্যাগের মধ্যে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার যাবতীয় সরঞ্জাম রয়েছে।
ইসমাইল হোসেন পদ্মার মধ্যে দিয়াড়কাদিরপুর চরের আবদুস সামাদের ছেলে। তিনি পল্লী চিকিৎকের কোর্স করে এই বাজারে ১৩ বছর পল্লী চিকিৎসক হিসেবে সেবা দিচ্ছেন। তিনি অবিভক্ত পাকুড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগের সদস্য। তার বয়স ৪৫ বছর।
এ বন্যায় ইতিমধ্যেই ১১ স্কুলসহ প্রতিটি বাড়িতে পানি উঠেছে। তবে এবারের জলমগ্ন পরিস্থিতি সেই ১৯৮৬ সালের চেয়েও ভয়াবহ।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর (দিয়াড়কাদিরপুর) ওয়ার্ড মেম্বর জালাল উদ্দিন জানান, পল্লী চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে দিয়াড়কাদিরপুর বাজারে মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তিনি রোগী দেখে অতিরিক্ত মূল্য নেন না। তিনি শুধু ওষধের দাম নেয়।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আ.লীগের সভাপতি সোলেমান হোসেন জানান, চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দিয়াড়কাদিরপুর বাজার। এই বাজারে একটি ওষুধের দোকান দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন তিনি। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর আবদুর রহমান জানান, এ বন্যার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন।
দিয়াড়কাদিরপুর চরের ৩৫ বছর বয়সের রিনা বেগম জানান, ইসমাইল ডাক্তারের রাত দিন নেই। মানুষ যখন ডাকে সাথে সাথে তার বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই জলমগ্নতার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে তার দোকানে যেতে পারি নি। আমার ৩ বছরের ছেলেকে বাড়ি এসে নিয়মিত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
পল্লী চিকিৎসক ইসমাইল হোসেন জানান, আমি শুধু টাকার জন্য চিকিৎসা দিই না। আমার দ্বারা মানুষ উপকার পায়। আমাকে যখন অসুস্থ মানুষ ডাকে সাথে সাথে তার বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করি। তবে আমার ৫ সদস্যের পরিবার। আমি এই কাজ করে সংসার পরিচালনা করি।
তবে কারো কাছে কোনো দিন অতিরিক্ত টাকা নিই না। আমি শুধু দিয়াড়কাদিরপুর বাজার এলাকায় না, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, উদয় নগর, মানিকের চর এলাকায় জীবনের ঝুকি নিয়ে এই বন্যার মধ্যে সামান্য ডিঙি নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দেয়া দিচ্ছি।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, ইসমাইলকে আমি চিনি। সে দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মানুষকে চিকিৎসা দেন। জলমগ্ন চরের মানুষ অসুস্থ হলে প্রাথমিক পর্যায়ে তার কাছে চিকিৎসা নেই। জটিল হলে অন্যত্রে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা সে ভালো করে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, আমি শুক্রবার (২০ আগষ্ট) বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত দিয়াড়কাদিপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া চরে ৫ শতাধিক পরিবারকে ত্রাণ দিতে গিয়ে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। এ সময় ইসমাইল হোসেন নামের এক পল্লী চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হই।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়