শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২১
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ডের মানুষ ইতোমধ্যেই ভাঙনে জমি গাছপালা ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। চেয়ারম্যান নিজে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছেন।
চেয়ারম্যান বাড়িঘর করার জায়গা না পেয়ে এক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যরা দিশেহারা হয়ে অন্যের জমিতে ঘরের চালা রাখায় মামলা করা হয়েছে। মামলার ভয়ে তারা উপায় না পেয়ে নৌকায় করে বাড়ির জিনিসপত্র অন্যস্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
পদ্মার ভাঙনের কারণে চরের বিদ্যালয়গুলো পাঠদানের পরিবেশ নেই। বই নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। চরে শতভাগ বিদ্যুতায়িত ও পাকা রাস্তাঘাটের সুবিধা দেয়া হয়েছে।
তবে সংযোগকৃত ১১৫টি বিদ্যুতের পুল ইতোমধ্যেই তোলা হয়েছে। পদ্মার চরে বাড়ি করার জন্য এক বিঘা জমি ৫-১০ হাজার টাকায় লিজ পাওয়া যেত। এবছর সেই জমি এক বছরের জন্য ২০ হাজার টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে না।
লক্ষ্মীনগর চরের আবদুস সোবাহান ও হাজেরা বেগম বলেন, বাবা মায়ের সাথে বড় হয়েছি চরে। এবার মনে হয় কোন উপায় থাকবে না। অন্য স্থানে চলে যেতে হবে। চকরাজাপুর ইউনিয়নে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৯ শতাধিক।
এরমধ্যে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৬ শতাধিক। তিন বছর আগে এই বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি নদীতে ভেঙে গেছে। এরমধ্যে সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে এসে নতুন একটি পাকা ভবন করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়টি হুমকির মধ্যে পড়েছে।
চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি একটি ভবন ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এখন নদীর গতি ফেরাতে না পারলে এটিও থাকবে না। এই সাড়ে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে কোথায় যাবো। এ নিয়ে চিন্তার মধ্যে পড়েছি।
এদিকে চকরাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, দুই কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ের পাকা ভবন ছিল। সেই ভবন নদীতে তলিয়ে যাওয়ার পরে আরেক স্থানে সরকার নতুন ভবন করে দিয়েছে। করোনার কারণে এই ভবনে কোনো ক্লাস হয়নি। সরকারের নির্দেশে ক্লাস শুরু হয়েছে। আবার নতুন ভাঙনের কবলে পড়েছি।
লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল পাকা ভবন ছিল। দুই বছর আগে নদীতে ভেঙে যাওয়ার পরে অন্যস্থানে সরে আনা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে আছে।
পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। বিদ্যালয়ের ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গাছতলায় পাঠদান করানো হচ্ছে। এই বিদ্যালয়ে পাশে রাস্তায় গাছের নিচে মাদুর বিছিয়ে চাঁদনী নামের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী নামতা লিখছে। আরও রোহান হোসেন, জয় আহম্মেদ, সাকিলা খাতুনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী তার পাশে বসে আছে।
চরকালিদাসখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম সপরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি পৈত্রিকভাবে অনেক ভূ-সম্পত্তির মালিক। সবটাই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে তিনি বর্তমানে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন।
চেয়ারম্যান বলেন, তিনি বাড়ি করার জন্য একখন্ড জমির জোগাড় করতে পারছি না। আর এলাকার মানুষ তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। এলাকা ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না। তিনি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে কিছু করতে পারছেন না।
কলিদাসখালী গ্রামের ইউনুস আলী ও রজব আলী ঘর ভেঙে গাড়িতে তুলছেন আর তার স্ত্রী পারুল বেগম চুলায় রান্না করছেন।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুুলিশ নূর মোহাম্মদ বলেন, চকরাজাপুর বিদ্যালয়ের পাশে অন্য একজনের জমিতে বাড়িঘরের চালা রাখা হয়েছে। পরে জানতে পারি জমির মালিক মামলা করেছে। জমির ন্যায্য ইজারা মূল্য দিতে চেয়েও মালিক মানছে না। এখন কথায় যাবো ঠিক করতে পারছিনা।
অন্যের জমিতে ঘরের চালা রাখার কারনে আব্দুর রহমান ও সাত্তার শিকদাদের নামে জমির মালিকরা মামলা করেছেন। সাত্তারের স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, আমরা তার জমির কোনো ক্ষতি করি নাই। গাছের একটা পাতাও ছিঁড়ি নাই। পড়ে থাকা জমিতে শুধু ঘর তুলে থাকতে চেয়েছিলাম। জমির ভাড়া হিসেবে টাকাও দিতে চেয়েছি। কিন্তু মালিক রাজি হয়নি। তাই মামলা করা হয়েছে। এখন নিরুপায় হয়ে পড়েছি।
চকরাজাপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর ফজলু শেখ বলেন, এদেশের মাটিতে ‘রোহিঙ্গাদের জায়গা হচ্ছে, আর আমরা দেশের মানুষ নদী ভাঙ্গনের কারনে একখানা ঘর করার মাটির ব্যবস্থা কেউ করছে না। এর চাইতে দুঃখের আর কিছু থাকতে পারেনা।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, পদ্মার ভাঙনের কারনে জমি পাচ্ছেনা। কয়েকজন ব্যক্তি বাড়িঘর ভেঙ্গে অন্যের জমিতে চালা রাখায় মামলা করা হয়েছে। তবে সেটা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের দরপত্র হচ্ছে। এরমধ্যে বাঘায় ১৩ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং এর কাজ রয়েছে। ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ সোজা করে দিলে ভাঙন থেকে এলাকা বাঁচবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়