শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২০
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঠে মাঠে এখন পাট কাটা, জাগ দেয়া, আশ ছুড়ানো, শুকানো এবং বিক্রি করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন হাট-বাজারে মানভেদে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১শ টাকা থেকে ২ হাজার ২শ টাকা দরে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবার ৩২০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে।
গতবার চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে। এবার পাট চাষে মোটামুটি অনুকূল আবহাওয়া ছিল।
কিন্তু শুরুর দিকে কোনো কোনো স্থানে বেশি বৃষ্টিপাতে কিছু রোপন করা পাট নষ্ট হয়েছিল। বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা।
আজ বুধবার (১২ আগস্ট) উপজেলার দিঘা হাটে পাট বিক্রি করতে আসেন দিঘা গ্রামের মকুল হোসেন।
তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে লাঙ্গল, বীজ, সেচ, কাটা, পরিস্কার করা, সারসহ যাবতীয় খরচ হয় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এবার উৎপাদন হয়েছে ৭ থেকে ৮ মণ।
বাউসা আমরপুর গ্রামের পাট চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি থাকায় পাটগাছ কাটা শ্রমিকদের অনেক বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। এবার পাট চাষে লাভ কম হবে। লোকসান না হলেও, লাভ হবে কম।
পাটের ফড়িয়া ব্যবসায়ী দিঘা গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, এই এলাকার চাষিরা খুব একটা যত্ন নিয়ে পাট ধোয়ার কাজ করে না। এতে করে অন্য জেলার পাটের মানের চেয়ে আমাদের পাটের মান ও রঙ ভালো হয় না।
বাউসা হেদাতিপাড়া গ্রামের মকসেদ আলী বলেন, শুক্রবার দিঘা হাটে ভ্যানে করে ৬ মণ পাট বিক্রি করতে গিয়েছিলাম। ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। তবে এরমধ্যে ভ্যান খরচ ও খাজনা খরচ দিতে হয়েছে।
তবে পাটের চাহিদা আছে। বিক্রি করতে কোনো ঝামেলা পড়তে হয়নি। পাট ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, নওগাঁয় প্রতিমণ পাটের দাম আমাদের চেয়ে ৫ থেকে ৬শ টাকা প্রতিমণে বেশি।
কিন্তু এই এলাকার পাটের মান ভালো না হওয়ার কারণে দাম তুলনামূলক কম পায় চাষিরা।
পাট সংরক্ষণকারী দিঘা গ্রামের ব্যবসায়ী আজিজুল হোসেন বলেন, পাট কিনতে শুরু করেছি। পাটের চাহিদা আছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবার অন্য এলাকার পাট কম চাষ হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে স্থানীয়ভাবে পাটকল। এছাড়াও বিভিন্ন মোকামে পাটের টান রয়েছে।
আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক কামরুল হাসান জুয়েল বলেন, সরকারিভাবে খাদ্য বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে না।
যদি সার কারখানা, চিনিকল, সিমেন্ট কারখানা, চাল ও আটাসহ বেশিরভাগ কারখানার পণ্য সরবরাহ করা হলে পাটের দাম বাড়ত বলে মনে করেন তিনি। আবার বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের জন্য দেশের বিপুল অর্থ বিদেশে যেত না। বেঁচে যেত দেশিয় পাট শিল্প।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পাটের জমিতে কিছু পানি থাকলে আঁশের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অপরিপক্ক পাট কাটলে উৎপাদন ব্যাহত হবে।
বর্তমান বাজারে ওঠা পাটগুলো হয়তো পরিপক্ক হওয়ার আগে কাটা হয়েছে ফলে ফলন কিছুটা কম হচ্ছে।
এ উপজেলা ৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ২ পয়েন্ট ৬৫ মেট্রিকটন। উপজেলায় মোট উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার ৬৫৮ মেট্রিকটন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়