শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ২০ ১৪৩১
|| ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২২
রাজশাহীর বাঘায় আস্তে আস্তে মুকুলে মুকুলে ছেয়ে যাচ্ছে আম গাছ। উপজেলাজুড়ে শোভা পাচ্ছে আম গাছগুলো। বসন্তে আমের মুকুলের সৌরভে ম ম করছে পুরো এলাকা। চলতি মৌসুমে রসালো সুস্বাদু ফল আমের ফলনের ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীর আমের সুনাম বিশ্বজুড়ে। সেই লক্ষ্যে বাঘার আম অন্যতম।
বর্তমানে উপজেলার যে কোনো আমগাছের নিচে দিয়ে গেলে মুকুলের গন্ধে মন ভরে উঠছে। গাছে গাছে মুকুলে আধিক্য দেখে কৃষিবিদদের ধারণা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে। আম চাষিরাও আশা করছে তাই। ইতিমধ্যে আমের মুকুল দেখে চাষিরা মোটা অংকের অর্থের আশায় গাছে ব্যাপক পরিচর্যা করছেন।
গত মৌসুমে আমের আড়তগুলোতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার আম বেচাকেনা হয়েছে। সামনের মৌসুমেও এমন থাকবে বলে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন।
আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শত শত মানুষ মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়। এ মৌসুমে গাছের আম নামানো, ঝুড়ি বানানো ও সহায়তার কাজে নিয়জিত লোকদের কর্মসংস্থানের ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হয়।
আড়ানীর আম উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী বাদশা হোসেন বলেন, গত মৌসুমে আমার নিজের প্রতিদিন দুই ট্রাক আম চালান দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ীরা তো ছিলই। গত মৌসুমে আম চাষি, পাইকারি, ফড়িয়া ও চালানি ব্যাপারীদের পদভারে মুখরিত ছিল। মৌসুম ভিত্তিক আমই বদলে দেয় উপজেলার অর্থনৈতিক চিত্র। আগামী মৌসুমেও এমনটি আশা করছেন তিনি।
আম ব্যবসায়ী নওশাদ আলী বলেন, গত মৌসুমে সকাল থেকে আম চাষিরা ভ্যান, ভুটভুটি, নসিমন, করিমনসহ স্থানীয় বাহনে করে তাজা আম নিয়ে বাজারে উপস্থিত হয়। ফড়িয়ারা এসব আম কিনে জমা করতেন আড়তে। আড়ত থেকে পাইকার ও চালানি ব্যাপারীরা আম কিনে ট্রাক যোগে নিয়ে যেতেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবারও গাছে গাছে যথেষ্ট মকুল দেখা যাচ্ছে। তিনি আশা করছেন, গতবারের চেয়ে আগামী মৌসুমে আমের আরও ভালো ফলন হবে।
নুরনগর গ্রামের ফড়িয়া ব্যবসায়ী শাবাজ আলী বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর যাবত আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমি আম চাষির হাত থেকে পাইকার ফড়িয়ার হাত হয়ে আড়তে গিয়ে বিক্রি করি। এসব কাজে শতশত মানুষ জড়িত। সবাই কিছু না কিছু আয় উপার্জন করে।
বাউসার তেঁতুলিয়া গ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, বছরের অন্য সময়ে শাকসবজি কিনে ঢাকায় চালান করি। আম মৌসুমে ফড়িয়া হিসেবে কেনাবেচা করি। মৌসুম শেষে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হয়। আগামীতেও করবেন বলেও তিনি জানান।
আড়ানী শাহাপুর গ্রামের ঝুড়ির কারিগর সবুজ আলী বলেন, প্লাস্টিকের ক্যারেটের প্রচলন আসায় কিছুটা কদর কমেছে, তারপরও আমার ঝুড়ির যথেষ্ট চাহিদার পাশাপাশি ব্যস্ততা বাড়ে। আগামী মৌসুমেও ব্যবসা ভালো হবে বলে আসা করছি।
আড়ানী বাজারের বস্তা-দড়ি ব্যবসায়ী বাবলু হোসেন বলেন, আম মৌসুমে পাটের সুতলির চাহিদা বাড়ে কয়েকগুণ। এবারো আশা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, আম চাষে অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। মাত্র দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে গাছে আম আসতে শুরু করে। দীর্ঘ সময় ধরে আম পাওয়া যায়। উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য খুব উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী মৌসুমে আম বাগানগুলো থেকে আশানুরূপ ফলন হবে।
তিনি বলেন, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাসের শেষনাগাদ প্রায় তিন মাস চলে আমের ব্যবসা। এবারের ১০০ মেট্রিক টন আম যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে গত মৌসুমে করোনার কারণে ৩৭ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, গত মৌসুমে আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদন কিছুটা ভালো হয়েছে। আম উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা দাম ভালো পেয়েছে। উপজেলায় ৮ হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়