শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৪ ১৪৩১
|| ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
আমার রাজশাহী ডেস্ক :
প্রকাশিত: ২ জানুয়ারি ২০২৪
মাসকলাই ডালের বড়ার গ্রাম হিসেবে পরিচিত্র লাভ করেছে গাইবান্দা সদর উপজেলার খামার বোয়ালী। গ্রামটিতে বছরের অন্যান্য সময়ে বড়া তৈরি হলেও শীত মৌসুমে দম ফেলার সময় নেই এ গ্রামের শিশু, নারী-পুরুষ কারিগরদের। স্থানীয় জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে এ গ্রামের ডালের বড়া। খুবেই সুস্বাদু হওয়ায় ডালের বড়ার চাহিদা ও দাম ভালো পেয়ে লাভবান হচ্ছেন কারিগররা। তবে বড়া তৈরির কারিগরদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলার বিসিক কর্মকর্তা।
শুধু খামার বোয়ালী গ্রাম নয়, জেলার কামারজানির নতুনবন্দর বাজার, সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ীর উজিরের বাইগুনি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এ পেশার সাথে জড়িত। মাসকলাই ডাল রাতে যাতায় পিশে তা ভিজিয়ে রাখতে হয়। সকালে তা ফেটিয়ে ছোট ছোট মাস কলাইয়ের বড়া বানিয়ে বাঁশের চালা কিংবা কাপড়ের ফ্রেমে আটকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার পর দু’একদিন রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। সেই শুকনো বড়া বাড়ি থেকেই খুচরা ও পাইকারী বিক্রি হয়। সাড়া বছর এ কাজ করেই জীবন পাড় করছেন তারা।
কারিগররা জানান, ডালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় লাভ কম হয়। যেরকম পরিশ্রম আর সময় ব্যয় হয় তার থেকে তেমন একটা আয় হয়না। তবে সরকারি ভাবে আধুনিক যন্ত্র পেলে আমরা উপকৃত হতাম। তারপরেও বংশ পরস্পরায় পেশাকে টিকিয়ে রাখার কথা। তারা আরও বলেন, প্রতিদিন ১০ কেজি মাসকলাই ৬০০ টাকায় কিনে বড়া তৈরি করার পর শুকনো বড়া হয় ৮ কেজি। শুকনো বড়া পাইকারী ভাবে ১০০ টাকা কেজি দরে ৮০০ টাকা বিক্রি করি। তা থেকে প্রতিদিন এ কাজ থেকে ২০০ টাকা লাভ হয়।
খামার বোয়ালী সাহাপাড়া গ্রামে মোড়ের পাশেই মাটিতে বিছানো চাটাইয়ে বড়া শুকানোর কাজে ব্যস্ত তুলশি রানী শাহা ও বৈশাখী রানী সাহা। তারা জানান, মাসকলাই কিনে এনে রাতে যাতায় পিশে তা ভিজিয়ে রাখতে হয়। আঠালো হয়ে ঘন হলে তা ফেটিয়ে সকালে বড়া তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। এক কিংবা দুদিন পর শুকিয়ে গেলে বিক্রির উপযোগী হয়।
একই গ্রামের প্রতীমা রানী বলেন, ৬০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন ১০ কেজি মাসকলাই ৬০০ টাকায় কিনে বড়া তৈরি করার পর শুকনো বড়া হয় ৮ কেজি। শুকনো বড়া পাইকারী ভাবে ১০০ টাকা কেজি দরে ৮০০ টাকা বিক্রি করি। প্রতিদিন এ কাজ থেকে ২০০ টাকা লাভ হয়। তা দিয়েই সংসার চলে। পরিবারের সব সদস্যই এটি শেখায় কাজে কোন বেগ পেতে হয়না বলেও জানান এই বড়ার কারিগর। বছরে সাত মাস চলে এই বড়া তৈরির কাজ। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এ ব্যবসা তাদের ভালো চলে।
কামারজানি ইউনিয়নের নতুনবন্দর বাজার গ্রামের সাধনা রানী মহন্ত বলেন, ১৫/২০ বছর থেকে এ ব্যবসা করছি। এখন পুরানা ব্যবসা ছাড়তেও পারি না। মহিলা মানুষের বাড়িত বসিতো লাভ নাই। বড়া তৈরি করে যেটাই আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে।
বড়ার তৈরির কারিগর সদর উপজেলার নতুনবন্দর এলাকার গয়ান্দ্র মহন্ত জানান, সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে কোন মতে দিন যায় আর কি। যে পরিশ্রম আর সময় ব্যয় হয় তার থেকে তেমন একটা আয় হয়না। একই গ্রামের লালু চন্দ্র মহন্ত বলেন, কামকাজ নাই কি করবো। বাপদাদার ঐতিহ্য এটা ছাড়তেও পারি না। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগিতা পেলে আমরা উপকৃত হবো।
ওই গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, মাসকলাই হলো ডালের বড়ার প্রধান উপাদান। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। সবজির পাশাপাশি এসব ডালের বড়া শিশুস্বাস্থ্যর জন্য কার্যকারী। শিশুদের দেহ গঠনে ডালের বড়া সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলেও জানান তিনি।
সাইদুর রহমান বলেন, যেকোন ঝোল তরকারীতে বড়া দিয়ে রাঁধলে তার স্বাদটাই হয় আলাদা। এ এলাকায় এই বড়ার তরকারীর সু-স্বাদ নেয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা বলেও জানান তিনি। খামার বোয়ালী গ্রামের লিমন মিয়া জানান, তারা অনেক কষ্ট করে বড়া তৈরি করছে। আধুনিক যন্ত্র থাকলে এত কষ্ট হতো না। পরিশ্রম অনুযায়ী তারা সে পারিশ্রমিক পাচ্ছে না।
গাইবান্ধা বিসিক জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় জানান, এই ডালের বড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটা বর্তমানে দেশ থেকে বিদেশেও রপ্তনী হচ্ছে। তারা ঋণের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। আমরা বড়া তৈরির কারিগরদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের আশ্বাস দিয়েছি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়