মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ৫ ১৪৩০
|| ০৯ রমজান ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১ জুন ২০২০
রাজশাহীর মোহনপুরে করোনা যুদ্ধে জয়ী ৮৪ বছর বয়সী মনসুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনামুক্ত হওয়ার ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এসময় তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আজ সোমবার সকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিশেষ সংবর্ধনা ও করোনামুক্ত হওয়ার ছাড়পত্র প্রদান করেন উপজেলাা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর।
এসময় তাকে ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীও উপহার দেয়া হয়। এসময় মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকবৃন্দ ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মনসুর রহমানের বাড়ি উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের নওনগর গ্রামে। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তাঁর এক ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন তিনি।
গত ২৬ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় তাঁর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তারপর বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়েছেন। কয়েক দফা পরীক্ষা শেষে করোনামুক্ত হন তিনি। ৩৫ দিন লড়াই করে অবশেষে রোববার (৩১মে) বিকেলে তাঁকে করোনামুক্ত ঘোষণা করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক।
করোনা জয়ের পর প্রতিক্রিয়া জানতে রোববার মনসুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি ৮৪ বছর বয়সে যদি রোগ-শোক নিয়ে করোনা থেকে সেরে উঠতে পারি। তাহলে মনোবল থাকলে সবাই এই রোগে জয়ী হতে পারবেন। ভয় পেয়ে কোনো লাভ নেই।’
মনসুর মাস্টার জানান, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁকে একা একা থাকতে হয়েছে। এই বয়সে একা থাকাটা তাঁর জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে পরিবারের লোকজন, চিকিৎসক ও উপজেলা প্রশাসন এবং মোহনপুর থানার পুলিশ সময় তার পাশে ছিলেন। সেজন্য ভয় অনেকটা কেটে যায়। মানুষ মানুষের পাশে থাকলে এই রোগেও কোনো ভয় নেই বলে মনে করেন মনসুর রহমান।
পরিবার ও চিকিৎসকরা জানান, মনসুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছেন। গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে (করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ড) ভর্তি করেন।
এরপর তাঁর এক্স-রে ও ইসিজি করার পর শারীরিক অবস্থা ভালো জানিয়ে ২১ এপ্রিল দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজন সেদিন তাঁকে বাড়ি নিয়ে যান। এরপর ওই বৃদ্ধের জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ২৫ এপ্রিল তাঁকে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।
সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ২৬ এপ্রিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মনসুরের ছেলে আল-আমিন সরকার জালাল বলেন, ‘বাবা এই বয়সে করোনা জয় করলেন। এটা এখন তাঁদের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাছে রেখে সেবা দিলে খুব সহজেই সুস্থ হয়ে যাবে বলে মনে করি।’
মনসুরের পুত্রবধূ শামীমা পারভীন বলেন, আমার শ্বশুরের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমরা চরম বিপদেই পড়ে যায়। আশপাশের লোকজন তাঁকে বাড়িতে রাখতে দিতে চাননি। তাঁরা বিভিন্ন সময় হুমকি-ধামকি দিয়েছেন।
শামীমা জানান, তাদের প্রতিবেশীরা মানসিকভাবে সবসময় তাদেরকে তটস্থ রাখতেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও পুলিশকে জানানোর পর তারা আশপাশের লোকজনকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। এমনকি চিকিৎসকেরা বাজার পর্যন্তও করে দিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার চার বছরের একটা বাচ্চা আছে। সে তার দাদুর ভক্ত। ছেলেকে নিয়ে খুব বিপদে ছিলাম। এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। এজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল কবীর বলেন, ‘তাঁর সুস্থ হওয়াটা অনেকের কাছে বিস্ময়কর ঠেকছে। কারণ তিনি বয়স্ক মানুষ। একেবারে দুর্বল ছিলেন। সম্ভবত তিনিই বাংলাদেশে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন, যিনি এই বয়সেও করোনামুক্ত হলেন।’
ডা. আরিফুল কবীর বলেন, ‘মনসুর রহমান আগে থেকেই হৃদরোগসহ নানা অসুখে ভুগছিলেন। ফলে আমরা বেশ চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু তিনি সব ভয়কে জয় করে করোনা থেকে সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। আমরা তাকে ঘটা করেই সংবর্ধনা দেব। সবাই যাতে তাকে দেখে সচেতন হয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন।’
এদিকে, মোহনপুরে এর আগে আরও তিনজনকে করোনামুক্ত ঘোষণা করে ছাড়পত্র দেয়া হয়। তারা হলেন- উপজেলার কেশরহাট পৌর এলাকার হরিদাগাছী গ্রামের জেসমিন (২৪) ও আলামিন (২৫) জাহানাবাদ ইউনিয়নের তশোপাড়া গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার ফারুক হোসেন (২৮)।
তারা তিনজনই ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-গাজিপুর-ঢাকা ফেরত। তবে মনসুর রহমান বাড়িতে থেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়