রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৪ ১৪৩১
|| ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২৩
কান্তকবি রজনীকান্ত সেনের জন্মদিন আজ। তিনি ১৮৬৫ সালের ২৬ জুলাই (১২৭২ সনের ১৪ শ্রাবণ) বুধবার প্রত্যুষে তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গুরুপ্রসাদ সেন। মাতার নাম মনোমোহিনী দেবী। জন্ম পাবনায় হলেও তাঁর ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে সংসার জীবন পর্যন্ত সবটাই কেটেছে রাজশাহী শহরে।
অর্থাৎ, রাজশাহীই ছিল তাঁর আবাসভূমি। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। ১৮৮৩ সালে কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে ৩য় বিভাগে এনট্রান্স পাশ করেন। অতঃপর, তিনি রজাশাহী কলেজ ভর্তি হন এবং ১৮৮৫ সালে এখান থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এফ.এ (ফাস্ট আর্টস) পাশ করেন। এরপর তিনি কলকাতা সিটি কলেজে বি.এ অনার্স ক্লাসে ভর্তি হন।
তিনি একই সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্য, সংস্কৃত এবং দর্শনশাস্ত্রে অনার্স নিয়েছিলেন (তখন একই সঙ্গে একাধিক বিষয়ে অনার্স নেয়া যেত)। কিন্তু অসুস্থতার কারণে অনার্স পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। ১৯৮৯ সালে সিটি কলেজ থেকে পাশ কোর্সে বি.এ. পাশ করেন। ১৮৯১ সালে একই কলেজ থেকে বি-এল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে রাজশাহী কোর্টে ওকালতি শুরু করেন।
ওকালতি শুরু করার পর নিজ বাড়িতে গীত-বাদ্যের আসর বসান। ওই সময় রাজশাহীতে ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, ডাক্তার অক্ষয়চন্দ্র ভাদুড়ী প্রমুখের চেষ্টায় নাট্যামোদীদের একটি ‘জমজমাট আসর বিদ্যমান ছিল। মহাকবি কালিদাসের অভিজ্ঞান, ‘শকুন্তলম্’ নাটক অভিনয়ের জন্য স্থির হলে নাটোকক্ত নটীর গান কিরূপ সুরে গীত হবে তা ঠিক করতে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় রাজশাহীর তৎকালীন গায়কদের সবাইকে আহবান জানান। সকলেই নিজ নিজ সুরে গানটি গেয়ে শোনান। অক্ষয় মৈত্রেয় রজনীকান্তের সুরটি পছন্দ করেন এবং বলেন, কালিদাস জীবিত থাকিয়া যদি এই সভায় উপস্থিত হইতেন এবং রজনীকান্তের কন্ঠে এই গানটি শুনিতেন, তবে তিনিও আমার সহিত এই সুরই পছন্দ করিতেন।’ (কান্তকবি রজনীকান্ত- নলিনীরঞ্জন পণ্ডিত)।
বস্তুত, সে সময়ে রাজশাহীতে যত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হতো প্রায়-সবগুলোতেই গান রচনা, সুরারোপ ও পরিবেশনের দায়িত্ব রজনীকান্তের ওপরই পড়তো। বাংলা ১৩১৫ সনের ১৮ ও ১৯ মাঘ বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনের দ্বিতীয় অধিবেশন রাজশাহীতে (পুঠিয়ার পাঁচ আনি জমিদারের কাচারি বাড়িতে-বর্তমান শাহ মখদুম মহাবিদ্যালয়) অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মিলনীতেও অভ্যর্থনা-সঙ্গীত রচনা, সুরারোপ ও পরিবেশনের দায়িত্ব পড়ে রজনীকান্তের ওপর। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর এক লেখা থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যার পর রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারে দীর্ঘ এক ঘণ্টা নানা হাসির গান গেয়ে শুনিয়েছিলেন সম্মিলনে উপস্থিত অভাগতবৃন্দকে। হাসির গান রচনা ও পরিবেশনের পারঙ্গমতা পরিদৃষ্টে কেউ কেউ রজনীকান্তকে রাজশাহীর
পঞ্চকবির অন্যতম কান্তকবি রজনীকান্ত সেন-এর যশ ও গৌরব যখন মধ্য গগনে অবস্থিত, তখন দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৩১৭ সনের ২৮ ভাদ্র (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯১০) মৃত্যূমুখে পতিত হন। রাজশাহীর গৌরব রজনীকান্তের জীবতকালে মাত্র তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থগুলো যথাক্রমে: বাণী (কাব্য), কল্যাণী (কাব্য) এবং অমৃত (নীতি-কবিতা)। মৃত্যুর পর আনন্দময়ী, বিশ্রাম, অভয়া, সদ্ভাব-কুশুম ও শেষদান-শীর্ষক আরও পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়