শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২১
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলীর বাসিন্দা বিএম মনির। পেশায় তিনি একজন শিক্ষার্থী। তিনি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে আম পাঠিয়েছিলেন তার এক পরিচিত আইনজীবীর কাছে। কিন্তু কুরিয়ারে পাঠানো সেই আম গোপালগঞ্জে না গিয়ে পৌঁছে যায় সুনামগঞ্জে।
কুরিয়ারে আম পাঠানোর বিড়ম্বনার বিষয়ে মনির জানান, গত ৯ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অবস্থিত সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গোপালগঞ্জে তিনটি লটে তিনজনের কাছে মোট ৬০ কেজি আম পাঠান। এরমধ্যে দুজন গ্রাহক তাদের নামে আমগুলো পেয়েছেন। কিন্তু আমগুলো ৫ থেকে ৬ দিন পর পৌঁছানোতে নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘আরও একটি ক্যারেট পাঠিয়েছিলাম গোপালগঞ্জের এক আইনজীবী সোলায়মান সিদ্দিক বাদলের নামে। কিন্তু সেটি গোপালগঞ্জে না গিয়ে চলে যায় সুনামগঞ্জে। ২০ কেজি আম পাঠাতে খরচ পড়েছে ৩২০ টাকা।’
সুনামগঞ্জ কুরিয়ার সার্ভিস থেকে গোপালগঞ্জে অবস্থানকারী আইনজীবী বাদলকে ফোন দিয়ে আম নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে আইনজীবী বাদল তাকে ঘটনাটি জানান।
একই দিনে অর্থাৎ ৯ জুন বড়ভাই মোজাম্মেলকে ঢাকার ইপিজেড এলাকার ৪০ কেজির দুই ক্যারেট আম পাঠান ওই শিক্ষার্থী। কিন্তু তিনি সেই আম পেয়েছেন ছয়দিন পর। দেরিতে পৌঁছানোয় আম পচে যায়।
মনির বলে, ‘এমন বিড়ম্বনার কথা জানাতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের হটলাইনে বারবার কল করা হয়। কিন্তু কোনো নম্বরই তারা ফোন ধরেন না। পরে বাধ্য হয়ে এ ঘটনায় গোদাগাড়ী কুরিয়ার সার্ভিসের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করি।
তিনি একটি অভিযোগ লিখে জমা দেয়ার জন্য বলেন। সে মোতাবেক কুরিয়ারের রিসিভ কপি সংযুক্ত করে আবেদনও করি। কিন্তু প্রায় দেড় সপ্তাহ গড়িয়ে গেলেও তারা এ বিষয়ে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন, কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’
গোদাগাড়ী এলাকায় সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের আরেক সেবাভোগী সারোয়ার রহমান। পেশায় তিনি গামের্ন্টেসের মালিক। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের বিড়ম্বনার বিষয়ে প্রতিবেদককে তিনিও তুলে ধরেন তার দুটি ঘটনা।
জানান, গত ১৪ জুন ভোলা জেলায় আবির নামের এক ব্যক্তির কাছে আম ২৫ কেজির একটি ক্যারেট আম পাঠিয়েছিলাম তিনি। কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও গ্রাহক সেই আম পাননি।
অন্যদিকে, ১৭ জুন মুন্সিগঞ্জে উজ্জ্বল নামের এক পরিচিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর কাছে অর্ডারের ভিত্তিতে দুই ক্যারেটে ৪০ কেজি আম পাঠানো হয়। কিন্তু এক ক্যারেট আম সেখান থেকে হারিয়ে যায় বলে জানায় সুন্দরবন কর্তৃপক্ষ।
সারোয়ার রহমান বলেন, ‘পরে অভিযোগের বিষয়টি জানানোর জন্য আমি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের সাতটি হটলাইন নম্বরে লাগাতার ফোন দিতে থাকি। এতে দুইজন ফোন ধরেন। একজন খুব খারাপ আচরণ করে ফোন কেটে দেন। পরদিন ভিন্ন একটি নম্বরে ফোন করা হয়। তিনি আমার সিরিয়াল নম্বর শুনে খোঁজ নিয়ে বলেন, আপনার ভোলা ও মুন্সিগঞ্জের দুই ক্যারেট আমই কামারপাড়ায় রয়েছে। সেটি পৌঁছাতে দুদিন সময় লাগবে।’
পরদিন আবার ফোন দিলে তিনি হেড অফিস প্রধানের নম্বর দেন। তার সঙ্গে কথা বললে তিনি স্থানীয় সুন্দরবন কুরিয়ারের মালিকের সঙ্গে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন। পরে মালিকের সঙ্গে দেখা করে কথা বললে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। গোদাগাড়ী সুন্দরবন কুরিয়ারে আজ দুটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী সারোয়ার রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসে এমন আম পাঠানোর বিড়ম্বনার স্বীকার শুধু শিক্ষার্থী মনির ও সারোয়ারই নন, আরও ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি এমন বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অনেক বেশি চার্জ নিচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় সেবা দিচ্ছে খুব খারাপ। অনেক ক্ষেত্রেই আম হারিয়ে যাচ্ছে, চুরি যাচ্ছে, সময়মতো গ্রাহকের কাছে পৌঁছাছে না। এতে পথেই আম পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সেবাভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস গোদাগাড়ী অফিসের নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়