শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩
গ্রামের মেঠোপথ তাদের রানিং ট্র্যাক, আম বাগানের সমতল ভূমি তাদের প্রশিক্ষণ মাঠ। মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে তারা। রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হলদিবোনা গ্রামের কিশোরী এরা।
হলদিবোনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি আম বাগানের সমতল ভূমিতে আত্মরক্ষার কৌশল রপ্ত করছে গ্রামের ২৫ জন কিশোরী। যার বড় অংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। এই কিশোরীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে। এতে একদিকে তাদের মনোবল বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে শরীরের নানা জটিলতা।
কিশোরীরা বলে, আমরা মেয়েরা রাস্তাঘাটে একা চলাফেরার সময় ছেলেরা বিভিন্ন কটু কথা বলে। আমাদের সেই কথা শুনে মুখ বন্ধ করে চলে আসতে হয়। এখন সেটি হবে না। তাদের কটু কথার জাবাব দিয়ে আসব আমরা। অনেক সময় মেয়েরা রাস্তাঘাটে চলাচলের সময়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। আমাদের সঙ্গে হলে আমরা তখন ছিনতাইকারীকে বাধা দিতে পারবো। তাকে ধাওয়া দিতে পারবো। একই সঙ্গে ওই ছিনতাইকারী যদি আমাদের ওপরে আক্রমণ করে সেটা মোকাবিলা করতে পারবো। কারণ আমাদের মনোবল এখন শক্ত।
আত্মরক্ষার কৌশল শেখা চৈতী ফ্লোরা কিস্কু বলে, আত্মরক্ষার জন্য এই প্রশিক্ষণ জরুরি। এতে করে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। নিজের ভেতরের জড়তা কাটিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিতে পারবো আমরা। বাইরে ছেলেরা যদি বাজে কথা বলে তাহলে মোকাবিলা করতে পারবো। এই মার্শাল আর্ট শিখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছি। যে কৌশলগুলো শিখছি তা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো।
অপর প্রশিক্ষণার্থী রিতা হাঁসদা বলে, অন্য মেয়েরা যেটি পারে না। আমরা সেটি পারবো। আমার গায়ে কেউ যদি হাত দেয় তাহলে আমি নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। তা মোকাবিলা করার মতো আমার সাহস আছে।
রিয়া বুসরা আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলে, আত্মরক্ষার কৌশল শেখা দরকার, কারণ আমরা মেয়ে। মেয়েদের সবাই দুর্বলই ভাবে। আমি যখন রাস্তায় একা চলাফেরা করি তখন কোনো ছেলে যদি আমাকে দেখে হাসাহাসি করে, আমাকে খারাপ ইঙ্গিত করে, আত্মরক্ষার কৌশল শেখার ফলে প্রতিবাদ করতে আমাদের ভেতরে ভয় কাজ করবে না। বর্তমানে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।
প্রশিক্ষক মোসা. লামিশা আখতার বৈশাখী বলেন, এদের অনেক আগ্রহ আছে। প্রথম প্রথম অনেকটাই সমস্যা হয়েছে কিশোরীদের আনতে। পরিবার থেকে এদের আসতে দিত না। পরিবার থেকে বলা হতো কেমন পোশাক। এগুলো শিখে কী হবে ইত্যাদি কথা। পরবর্তীতে পরিবার বুঝতে পারায় কিশোরীদের আসতে দিচ্ছে। এই প্রশিক্ষণটা মূলত মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য।
মেয়েরা বাইরে গেলে অনেক সময় অভিভাবকরা যেতে পরে না। ফলে বিভিন্ন সমস্যার শিকার হয় তারা। মেয়েরা সেই সব সমস্যাগুলো থেকে আত্মরক্ষার কৌশল ব্যবহার করে নিজে তুলে নিয়ে আসতে পারবে। এটা ছয় মাসের কোর্স। এর আগেও কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এরা অনেক ভালো করছে।
হলদিবোনা মার্শাল আর্ট পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোসা. শামিমা সুলতানা বলেন, পুরুষরা তো আত্মরক্ষা করতে পারে। কিন্তু নারীরা পারে না। নারীদের ভেতরে একটা জড়তা আছে। মার্শাল আর্ট শেখার করণে এদের ভেতরের জড়তা ভেঙেছে। নিজেরা আত্মবিশ্বাসী হচ্ছে। বাইরে গেলে নিজেরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবে।
ওয়ার্ল্ড ভিশনের লাইফ স্কেল বেইজ এডুকেশন ফ্যাসিলিটেটর সাফিদা খাতুন বলেন, এখানে ২৫ জন কিশোরী রয়েছে। তাদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো হচ্ছে। যাতে করে মেয়েরা রাস্তাঘাটে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারে। তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের একটি প্রকল্পের অধীনে পবা উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৪৭৬ জন কিশোরী ছয় মাস মেয়াদি আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজভী আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, মেয়েরা পরনির্ভরশীল। তাদের অন্যের ওপর নির্ভর করে চলাতে হয়। স্কুল-কলেজে যেতে বখাটেদের বিভিন্ন কটু কথার শিকার হতে হয়। এসব থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য কৌশলগুলো শেখানো হচ্ছে কিশোরীদের।
পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লসমী চাকমা বলেন, এটা অন্যতম ভলো কাজ। কিশোরীরা সাহসী ও আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে। তারা অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে প্রশিক্ষণের ফলে। আমি আশা করি তারা অনেক ভালো করবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়