রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||
জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১
|| ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২২
উৎপাদন কম হলেও রাজশাহীতে এবার প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকা আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
রাজশাহীর আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর যে টাকায় তিন মণ আম বিক্রি হয়েছে, এবার সেই টাকায় বিক্রি হচ্ছে দুই মণ আম। যদিও আমের মুকুল গত বছরের চেয়ে ২১ শতাংশ কম হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র বলছে, এর আগে এক মৌসুমে আমের ব্যবসা ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থেকেছে। এবার বাড়তি দামের কারণে তা ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবার রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গতবছর চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। এ হিসাবে চাষের এলাকা বেড়েছে ৫৭২ হেক্টর। গতবছর রাজশাহী জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। নতুন করে এ বছর জেলার বাগমারা, দুর্গাপুর ও গোদাগাড়ী উপজেলা এলাকায় আম বাগান সম্প্রসারিত হয়েছে। আম বাগানের জমি বাড়লেও ফলন হয়েছে কম।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় বড় আমগাছে এবার মুকুল কমে এসেছে। তাই উৎপাদন গতবারের চেয়ে কম। তবে দামের দিক থেকে গত বছরের চেয়ে এবার কৃষকেরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। গত বছর আমের মণপ্রতি দাম ছিল গড়ে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। এবার তা মণপ্রতি ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা, এমনকি ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় এবার আমের বাণিজ্য প্রথমবারের মতো ১ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর। বানেশ্বর কলেজ মাঠে ও রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের ওপর আমের হাট বসে। পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আমের হাট বসিয়েছেন। আমচাষী ও বাগান মালিকেরা ভ্যানের ওপর সারি সারি প্লাস্টিকের ক্যারেটে করে আম নিয়ে হাটে আসেন। আড়তদার ও ফরিয়ারা তাদের নিকট থেকে আম কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ গেট দিয়ে একের পর এক আমের ভ্যান বাজারে ঢুকছে। বাজারে দাপট এখন ফজলি ও আম্রপালি আমের। ক্ষীরশাপাত আম বিদায় নিলেও দু'এক ভ্যানে ল্যাংড়া জাতের আমের দেখা যাওয়া যায়। তবে ল্যাংড়া জাতের প্রতি মণের গড় দাম প্রায় ৪ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে এই জাতের আম।
বানেশ্বর থেকে আম কিনে ‘ফ্রুটস হান্ট’ নামের একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করেন অনলাইন ফল ব্যবসায়ী জুয়েল মামুন। তার হিসাব অনুযায়ী, গত বছর তিন মণ আম বেঁচে যে টাকা পাওয়া গেছে, এবার দুই মণ আম বিক্রি হচ্ছে সেই দামে। তবে সরবরাহ গত বছরের চেয়ে একটু কম।
বানেশ্বর বণিক সমিতির সভাপতি ও হাটের ইজারাদার ওসমান আলী বলেন, এবার বানেশ্বর বাজারে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় কোটি টাকার আম কেনাবেচা হচ্ছে। বেশির ভাগ আম রাজশাহীর বাইরের ব্যবসায়ীরা নিয়ে যাচ্ছেন। তার হিসাবে, এই মৌসুমে শুধু বানেশ্বর হাটে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে।
রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। সাদি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরে বাঘা থেকে ইউরোপে আম রফতানি করছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আসাফুদ্দৌলা জানান, এবার তাদের ভালোই বেচাকেনা হয়েছে।
বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেনের বাগানে এবার আমের ভালো উৎপাদন হয়েছে। তিনি বলেন, সামনে ঈদুল আজহা। কোরবানির কেনাকাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। এ কারণে আমের বিক্রি কিছুটা কমতে পারে। আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ আম কেনা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। এরপরও তিনি আশা করছেন, মৌসুমজুড়ে ভালো ব্যবসা করতে পারবেন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়