শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২০
রাজশাহীতে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) পানি শোধন করা হয় না। ফলে ওয়াসার পানিতে গন্ধ বের হয়। ৯৬ শতাংশ পানির জোগান ভূগর্ভ থেকে হয় বলে পানি বিশুদ্ধ ধরে নেয়া হয়। কিন্তু এই পানিতেও রয়েছে দুর্গন্ধ। পানিতে ভেসে আসে ময়লা।
নিয়মিত পাইপলাইনের ওয়াস পয়েন্ট আউট পরিষ্কার না করার কারণে পানিতে এই ময়লা এবং দুর্গন্ধ হচ্ছে।
এই মুহূর্তে নগরীর হড়গ্রাম পূর্বপাড়া, কোর্ট স্টেশন ও দড়িখড়বোনাসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এসব পানি পানের অযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর পানিতে ভাসমান ময়লার কারণে সংসারের অন্যান্য কাজেও এই পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
হড়গ্রাম পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, তাদের এলাকায় গলির মুখে ওয়াসার পাইপলাইনের ওয়াস আউট পয়েন্ট আছে। কিন্তু অনেক দিন ধরেই এই পয়েন্ট আউট খুলে ময়লা বের করা হয়নি। এ কারণে গোটা পাইপের ভেতর ময়লা জমেছে। পানিতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। শ্যাওলা ভেসে আসছে।
একই অভিযোগ করেন ওই এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম রেজা। তিনি বলেন, ময়লা ও দুর্গন্ধের কারণে ওয়াসার পানি এই এলাকায় ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। তারপরও ওয়াস আউট পয়েন্ট খুলে পাইপ পরিষ্কারের কোন উদ্যোগ নেই। সমস্যার সমাধানে তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরজুড়ে ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন রয়েছে ৭১২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। দৈনিক প্রায় ৫ দশমিক ১০ কোটি লিটার পানি বিক্রি করছে ওয়াসা। তবে ওয়াসার পানির মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উন্নত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০১১ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পানি সরবরাহ বিভাগ ভেঙে আলাদা ওয়াসার যাত্রা শুরু হলেও লক্ষ্য পূরণে কতটি সফল তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংস্থাটির উপর।
বর্তমানে ওয়াসার গ্রাহক প্রায় ৪২ হাজার ৬৮০ জন। সবমিলে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১১ দশমিক ৩৩ কোটি লিটার। কিন্তু উৎপাদিত হচ্ছে ৭ দশমিক ৭৮ কোটি লিটার। এর ৯৬ শতাংশই আসছে ভূগর্ভ থেকে। জনপ্রতি দৈনিক ১৯০ দশমিক ৭৪ লিটার পানি উৎপাদন হলেও ব্যবহার হচ্ছে ১২৬ দশমিক ৩০ লিটার। নগরীতে ওয়াসার ৫টি পানি শোধনাগার রয়েছে।
পদ্মার পানিনির্ভর শ্যামপুরে একমাত্র ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগারটি সচল থাকে বছরে মাত্র চার মাস। বাকি চারটি ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার পরীক্ষামূলক চালুর পর থেকে বিকল। এই অবস্থায় ৯৬টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে সরাসরি ভূ-গর্ভস্থ পানি সরবরাহ করছে ওয়াসা।
নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহন কর্মকার বলেন, ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি পানযোগ্য নয়। ময়লা ছাড়াও পানিতে প্রচুর আয়রন। পাত্রে সংরক্ষণ করলে লাল স্তর পড়ে যায়। ফুটিয়ে পান করতে গিয়ে দেখা যায় নিচে সাদা স্তর। রাণীনগর এলাকার গৃহবধূ সাঈদা রায়হানা বলেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি দিয়ে কেবল রান্নাবান্না ও ধোয়া-মোছার কাজে লাগে। ওয়াসার পানিতে গোসল করাও যায় না। এক টানা ১০ দিন গোসল করলে চুল নষ্ট হয়ে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, মূলত ত্রুটিপূর্ণ সংগ্রহ, শোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে ওয়াসার পানি সুপেয় হচ্ছে না। এটি সাধারণ বিষয়। তবে সরবরাহ লাইন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা গেলে এবং রাসায়নিকভাবে শোধন না করলে বিপদ দ্বিগুণ হবে। লাইন সংষ্কার করা না হলেও রোগজীবাণুর জন্ম হবে।
বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাইপলাইন পরিষ্কার করা না করার ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ বলেন, গণমাধ্যমে কথা বলার ব্যাপারে বিধিনিষেধ রয়েছে। তিনি কথা বলতে পারবেন না। তবে তারা চেষ্টা করেন প্রতিমাসে একবার প্রতিটি ওয়াস আউট পয়েন্ট খুলে পরিষ্কার করার। কিন্তু জনবলের স্বল্পতার কারণে কাজটা কঠিন হয়ে যায়।
তবে রাজশাহী ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাহার আলী বলছেন, কাজটি কঠিন কিছু নয়। বেশি জনবলেরও প্রয়োজন নেই। দুই থেকে তিনজন হলেই ওয়াসার একটি ওয়াস আউট পয়েন্ট পরিষ্কার করা যায়। শুধু পয়েন্টের মুখ খুলে পাম্প ছেড়ে দিতে হয়। তাহলেই পাইপলাইন পরিষ্কার হয়ে যায়। চাইলে এক সপ্তাহে পুরো মহানগরের ওয়াস আউট পয়েন্ট পরিষ্কার করা সম্ভব।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়