শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৯ মে ২০২১
পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কটা দিন। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই রাজশাহী নগরীর শিরোইল বাস ও রেলস্টেশনে থাকে বাড়িফেরা যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু এবারের দৃশ্য একেবারেই ভিন্ন।
করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় রেল ও সড়কে বাস চলাচল বন্ধ থাকলে গত ৬ এপ্রিল থেকে স্বল্প পরিসরে বাস চালু করার অনুমতি দেয় সরকার। যদিও রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে দূরপাল্লার বাস ছাড়ার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এখন শুধু আন্তঃজেলার সামান্য কিছু পরিবহন চলছে।
সরকার আন্তঃজেলা বাস চলার অনুমতি দিলেও বাসচালকরা পড়েছেন যাত্রী সংঙ্কটে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, সরকারঘোষিত লকডাউনের কথা শুনে রমজানের শুরুতেই অনেকেই চলে গেছেন যার যার গন্তব্যে।
যারা দূরবর্তী স্থানে যাবেন তারা অর্থ, সময় ও ভেঙে ভেঙে যাওয়ার ভোগান্তির কথা ভেবে আন্তঃজেলা বাসে যাত্রা করছেন না। তাই অনেকেই থেকে যাচ্ছেন রাজশাহীতে। এতে প্রায় যাত্রীশূন্য বাস নিয়েই বাস পরিচালনা করতে হচ্ছে মালিক ও চালকদের।
‘৫০টি সিটের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫টি সিটের লোক হচ্ছে। ২০০, ৩০০, ৫০০ টাকা উঠছে মাত্র। এই টাকা দিয়ে আমরা তেল কিনব না মহাজনকে দেব, সেটাই বুঝতে পারছি না। তেল কেনার টাকাই উঠছে না আমাদের। এভাবেই নিজেদের সমস্যার কথা জানালেন এনপি এলিগেন্স গাড়ির সুপারভাইজার মো. শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টা ধরে এখানে বাস দাঁড় করানো অথচ একটা যাত্রীও নেই। ৫০টি সিটের মধ্যে ২৫টি যাত্রী তোলা যায়। কিন্তু ১০-১৫টা যাত্রী হয় না। এভাবে চললে মালিককে দেব কী, আর আমরা খাব কিী? সরকার তো আমাদের কিছু দিচ্ছে না, শ্রমিক অফিস থেকেও কিছু দিছে না, তাহলে কীভাবে চলব?’
সুপারভাইজার শহিদুলের ভাষ্য, ‘সরকার যদি এক জেলা থেকে আরেক জেলায় গাড়ি চালাতে দিতো, ঢুকতে দিতো তাহলে কিছুটা (যাত্রী) হতো। বাইরে থেকে যেগুলো মাইক্রোতে আসছে, সেগুলো রিজার্ভ চলে যাচ্ছে জেলাগুলোতে। এর কারণে তেলের টাকাও হচ্ছে না।’
এনপি এলিগেন্স বাস চালক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘গাড়ি ছাড়া আর না ছাড়া সমান কথা। বরং গাড়ি ছেড়েই বিপদে পড়ে গেছি। গাড়ি না চালালেও মহাজনের চাপ, যেতেই হচ্ছে উপায় নাই।’
পারিবারিক সমস্যার কথা তুলে ধরে চালক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘সামনে ঈদ আসছে। আমাদের খরচাপাতিও আছে। ধরেন একটিপ হলো না, আরেকটিপ হলো, এই আশাতেই বসে আছি। কিন্তু যারা সরকারি চাকরিজীবী তারা ঠিকই সবকিছু পাচ্ছেন। আমাদের দেয়ার জন্য কেউ নাই।’
এদিকে সুপারভাইজার শহিদুলের অভিযোগ, ‘রাস্তায় দু’তিন জায়গায় থামিয়ে চেকিং করা হয়। যাত্রীরা যদি এক জায়গাতে বসেন তাহলে আবার ফাইন (জরিমানা) করে। তারা নিজের পরিবারের লোক, তারা একসাথে বসছেন। কিন্তু ড্রাইভার-সুপারভাইজারদের ওপর দোষ আসছে। চারিদিকে বিপদে আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই যে গাড়িটা দেখছেন, ৫০টি সিটের গাড়ি। একটাও যাত্রীও নাই। কী নিয়ে যাব এই গাড়ি? কিন্তু তেল লাগবে এর দুই হাজার টাকার।’
এ বিষয়ে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণার পর থেকে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। সরকার যদি অতিসত্ত্বর দূরপাল্লার পরিবহন চালুর অনুমতি না দেয়, তবে আমাদের শ্রমিক ফেডারেশন থেকে যা সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তাই করব। এতে করার কিছু থাকবে না।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়