শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২০
পাবলিক পরিবহন বা গণপরিবহণে ধূমপান আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীর অটোরিকশা, সিএনজি এমনকি আন্তঃজেলা রূটে চলাচলকৃত লোকাল বাসগুলোতেও দেদারসে চলে ধূমপান। এতে ধূমপায়ীর পাশাপাশি অধূমপায়ী যাত্রীরাও সমান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নগরীতে বাড়ছে ধূমপানের কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যঝুঁকি।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) অনুযায়ী- পাবলিক প্লেস অর্থাৎ ‘পাবলিক পরিবহন বা গণপরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-আধা সরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, হাসপাতাল-ক্লিনিক ভবন, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বাস টার্মিনাল, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শণী কেন্দ্র, চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা জনসমাগম স্থলে ধূমপান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ এসব পাবলিক প্লেসে ধূমপান করলে আইন অনুযায়ী ৩০০ টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে।
কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে রাজশাহী মহানগরীর সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রংপুরের অধিকাংশ পাবলিক প্লেসে ধূমপায়ীরা নির্বিঘ্নে ধূমপান করছে। বিশেষ করে গণপরিবহনে অর্থাৎ অটোরিকশা, রিকশা, সিএনজি ও আন্তঃজেলায় চলাচলকৃত লোকাল বাসগুলোতে চলে প্রকাশ্যে ধূমপান।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তা ও শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন বয়সী লোকের সমাগম। পাশেই বেশ কয়েকজন সিগারেট টানছে। বাস টার্মিনালের অদূরেই হাইওয়ে রাস্তায় চলন্ত অটোরিকশায় এক যাত্রীকে সিগারেট টানতে দেখা গেল। অটোরিকশাটি থামিয়ে গণপরিবহণে কেন ধূমপান করছেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর না দিয়ে সে সিগারেটটি ফেলে দেয়।
পাশেই নাজমীন নাহার নামে স্কুলপড়ুয়া এক যাত্রী বলে উঠলেন, ‘ধূমপানের গন্ধে আমাদের নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে- এজন্য উনাকে (ধূমপানকারী) বেশ কয়েকবার সিগারেটটি ফেলে দিতে অনুরোধ করলেও তিনি ফেলেননি।’ একইভাবে গত রোববার মহানগরীর আলুপট্টি, লক্ষ্মীপুর মোড়, বিনোদপুর বাজার, বিন্দুর মোড়, স্টেশন চত্বর, সাগরপাড়া মোড়সহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তায় অটোরিকশা-রিকশা-সিএনজিতে চালক ও যাত্রীদের ধূমপান করতে দেখা গেছে।
এভাবে গণপরিবহনে দেদারসে ধূমপানের ফলে পাশের যাত্রীরাও সমান ক্ষতির শিকার হচ্ছে। এতে ধূমপায়ী-অধূমপায়ীরা ক্যান্সার, আলসার, হাইপ্রেসার, হৃদরোগসহ ধূমপানজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের অ্যাডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুর ইসলাম শামীম বলেন, ‘গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-গ্যাট্স’ এর ২০১৭ রিপোর্ট অনুযায়ী- দেশের গণপরিবহনে যাতায়াতকারী ৪৪ শতাংশ যাত্রী অর্থাৎ দুই কোটি ৫০ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। এর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ধূমপানজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। রাজশাহীতে গণপরিবহনে যাত্রী এবং চালকদের অনেক বেশি ধূমপান করতে দেখা যায়। কাজেই রাজশাহীসহ দেশের গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি।’
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে গণপরিবহন তথা পাবলিক প্লেসে ধূমপানের যে শাস্তির বিধান রয়েছে তা অত্যন্ত নগন্য। এজন্য আইনটি পরিবর্তন হওয়া দরকার। পাবলিক পরিবহনে ধূমপান বন্ধে মাঝে-মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অত্যন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে জনসচেতনা সৃষ্টি করলে পাবলিক প্লেস তথা পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের হার কমে আসবে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত সবসময়ই কাজ করছে। পাবলিক প্লেসে তথা যানবাহনে ধূমপান বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স/এমএস
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়