শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১ জানুয়ারি ২০২২
বাজারে এখন পর্যন্ত চিকন চাল বলতে বোঝায় চিনিগুঁড়া, দাদখানি, রাঁধুনিপাগল, কালিজিরা, বাঁশফুল ও কাটারিভোগ। তবে এসবের চেয়েও চিকন চালের ধান উদ্ভাবন করেছেন রাজশাহীর তানোরের স্বশিক্ষিত ধান গবেষক নূর মোহাম্মদ। অন্য ধানের চেয়ে এর ফলনও ভালো। আমন ও বোরো–দুই মৌসুমেই চাষ করা যাবে এই ধান।
নূর মোহাম্মদ তাঁর উদ্ভাবিত জাতের নাম দিয়েছেন ‘নূর ধান’। নূরের দাবি, এটিই এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে চিকন চালের ধান। ছয় বছরের নিরলস চেষ্টায় তিনি এ জাত উদ্ভাবন করেন। আমন মৌসুমে তাঁর উদ্ভাবিত এই ধানের গড় ফলন হবে বিঘাপ্রতি ১৭ মণ এবং বোরো মৌসুমে প্রায় ২১ মণ।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা কৃষক নূর মোহাম্মদের বয়স এখন ৫০। বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌরসভার গোল্লাপাড়া মহল্লায়। বরেন্দ্রের পোড়ামাটিতে কীভাবে কম পানিতে ধান উৎপাদন করা যায়, সে বিষয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে গবেষণা করছেন তিনি। নিজের বাড়ির মাটির ঘরে রীতিমতো গড়ে তুলেছেন গবেষণাগার। সেখানে সংরক্ষিত আছে বহু জাতের ধানের বীজ।
উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এক জাতের ধানের জিনের সঙ্গে আরেক জাতের সংমিশ্রণ করে তিনি উদ্ভাবন করছেন নতুন জাত। ইতোমধ্যে তিনি দুই শতাধিক ধানের কৌলিক সারি উদ্ভাবন করেছেন। একেকটি জাত উদ্ভাবন করতে সময় লাগে ১২-১৫ বছর পর্যন্ত।
নূর মোহাম্মদ এবার আমন মৌসুমে কয়েকটি জাতের ধানের জিনের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে উদ্ভাবন করেছেন ‘নূর ধান’। গোল্লাপাড়ায় নিজের গবেষণা মাঠেই আবাদ করেছিলেন এ ধান। সম্প্রতি জমির ধান কেটেছেন। ধান কাটার সময় উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ডি এফ এম ইমদাদুল ইসলাম এবং স্থানীয় কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন। মাড়াই ও ঝাড়ার পর শুকনো ধানের বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে সাড়ে ১৭ মণ।
নূর মোহাম্মদ বলেন, ধানটি চিনিগুঁড়ার মতোই চিকন। তবে চিনিগুঁড়ার চেয়ে লম্বা। দেশের ঐতিহ্যবাহী দাদখানি, রাঁধুনিপাগল, কালিজিরা, বাঁশফুল, কাটারিভোগের চেয়ে এ ধানের চাল অনেক চিকন। আমন ও বোরো—দুই মৌসুমেই ধানটি চাষ করা যাবে।
তবে ফলন বেশি হবে বোরো মৌসুমে। সুগন্ধি না হলেও এ চালের ভাত খেতে ভালো লাগবে। দেশের কোনো চিকন ধানে বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণের বেশি ফলন হয় না। সে তুলনায় তাঁর ধানের ফলন অনেক বেশি। কৃষকপর্যায়ে ধানটি ছড়িয়ে দিতে পারলে লাভবান হবেন বলেই আশা নূর মোহাম্মদের।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘নূর মোহাম্মদ ধান নিয়ে গবেষণা করেন। এর জন্য ২০০৫ সালেই তিনি রাষ্ট্রপতি কৃষিপদক পেয়েছেন। এবার তিনি যে চিকন ধানটার কথা বলছেন, সেটা জমিতে শিষ আসার আগে আমি একবার দেখেছিলাম। পরে আর যাওয়া হয়নি। নূর মোহাম্মদ তাঁর এই ধানকে নতুন জাত হিসেবে বলতে পারেন।
তবে আমরা যাঁরা চাকরি করি, তাঁরা বলতে পারব না। কারণ নতুন জাতের স্বীকৃতির জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডে আবেদন করতে হয়। অনেক প্রক্রিয়ার বিষয়। সরকার জাত হিসেবে ঘোষণা দেয়, গেজেট প্রকাশ করে। তারপরই কোনো ধানকে আমরা নতুন জাত হিসেবে বলতে পারি। নূর মোহাম্মদের ধানটির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়