রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||
জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১
|| ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২২
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের এক শিক্ষিকাকে শ্রেণিকক্ষে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুকÍকে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শিক্ষিকার মামলায় বিকেল ৪টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকার নাম অধ্যাপক ড. বেগম আসমা সিদ্দীকা। গ্রেফতার শিক্ষার্থীর নাম মো. আশিক উল্লাহ। তিনি একই বিভাগের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। গ্রামের বাসা ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায়। তার বাবা বিল্লাল হোসেন পুলিশে চাকরি করেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘আশিকনামা’ নামের একটি ফেসবুক পেজে নিয়মিত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে হীনকর ভিডিও দেন অভিযুক্ত আশিক উল্লাহ। গত ৫ দিন আগে পেজটিতে আইন বিভাগের জ্যৈষ্ঠ অধ্যাপক বেগম আসমা সিদ্দীকী নিয়ে একটি ভিডিও অ্যাপলোড দেন। এমনকি অনেককে অনলাইনে ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইলও করেছেন বলে জানা গেছে। এরকমই একটা বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষিকাকে হেনস্তা করেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।
বিভাগের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ৪র্থ বর্ষের ক্লাস চলাকালীন ইমপ্রুভমেন্টের কথা বলে ক্লাসে প্রবেশ করেন মাস্টর্সের শিক্ষার্থী আশিক উল্লাহ। কিন্তু তার কোন ইমপ্রুভমেন্ট ছিল না। ক্লাসের শেষের দিকে সে ওই শিক্ষিকাকে বিব্রত করার জন্য অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি ক্লাস থেকে বের হতে গেলে আশিক উল্লাহ দরজা লাগিয়ে তাকে মারার জন্য উদ্ধত হন। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে ক্লাস রুমে আটকে রেখে ওই শিক্ষিকাকে নিরাপদে উদ্ধার করেন। পরে অভিযুকÍ আশিককে আইন বিভাগের সভাপতি কক্ষে দুই ঘন্টা আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভাগের শিক্ষার্থীরা তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকা অধ্যাপক বেগম আসমা সিদ্দীকা বলেন, ‘আমি চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শেষ করে বের হতে গেলেই সে আমার পথ অবরোধ করে। ডিপার্টমেন্টের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয় নিয়ে আমার কাছে সমাধান চাইলে আমি তাকে চেয়ারম্যান স্যারের সাথে কথা বলতে বলি। কিন্তু সে তা না শুনেই আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। অভিযুক্ত আশিক উল্লাহ নিয়মিত বিভিন্ন শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করে বলেও অভিযোগ করেন এই অধ্যাপক।’
এ বিষয়ে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এর আগে তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে সেই কমিটির প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন চাইব। সেই সঙ্গে সে যেন পরীক্ষা দিতে না পারে সে ব্যবস্থাও করব আমরা।’
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে নিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষকদের সাথে প্রক্টরিয়াল বডির আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আইন বিভাগের ক্লাসরুমে শিক্ষিকা অধ্যাপক ড. বেগম আসমা সিদ্দীকাকে হেনস্থা করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শৃঙ্খলা কমিটি ও সিন্ডিকেটে রিপোর্ট সাপেক্ষে আশিক উল্লাহকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বহিষ্কার শেষে বিকেল সাড়ে ৪টায় ভুক্তভোগী শিক্ষিকার দায়ের করা করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মামলায় তাকে গ্রেফতার করে রাজশাহীর মতিহার থানা পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিকেলে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়