শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০
রাজশাহীর তানোরে এবার বেদে পরিবারের শিশু কিশোরসহ এতিমখানার এতিম শিশুদের গায়ে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিলেন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা তানোর থানার এএসআই ইমন। এর আগে তিনি ওই বেদে পরিবারের সকলকেই কম্বল প্রদান করেছেন। তিনি এসব বিতরণ করছেন তার বন্ধুদের সহায়তায়।
রাজশাহীর তানোর থানার অদূরে বিলকুমারী বিলে (শিবনদী) খোলা আকাশের নিচে খুপরিঘরে দিনাতিপাত করে ২৪টি বেদে পরিবার। হাড় কাঁপানো কনকনে শীতের তীব্রতায় ২২টি শিশু সন্তান নিয়ে এই ৪৮জন বেদে মা-বাবার অবস্থাএকেবারে জুবুথুবু।
একদিকে আর্থিক অস্বচ্ছলতা, অন্যদিকে হাড় কাঁপানো তীব্র শীতে তাদের অবস্থা একেবারে নাজুক। বেদে পরিবারগুলোর এমন হৃদয় বিদারক জীবন-যাপনের দৃশ্য তানোর থানার এএসআই মো. ফারুক হোসেন ইমনের মনজগতে চরমভাবে নাড়া দেয়। বন্ধুদের সহায়তায় বেদে পরিবারগুলোতে কম্বল প্রদানের সময় বিভিন্ন দিক থেকে ছুটে আসতে বেদে শিশু কিশোররা। এদের অনেকের গায়ে ছিলো না কোন শীতের পোষাক, কেউ কেউ হালকা জামা প্যান্ট পরে থাকলেও বেশি ভাগ শিশু কিশোর ছিলো খালি গায়ে।
বেদে পরিবারগুলোতে এই পুলিশ কর্মকর্তার কম্বল বিতরণের সময় শিশু কিশোরদের এই দুরবস্থা দেখে তার হৃদয় নাড়া দেয়। সেখানেই তিনি শিশুদেরও শীতের পোষাক দেয়ার ঘোষণা দেন। এই পুলিশ কর্মকর্তার হৃদয়ের নাড়া দেয়ার কথা তিনি শেয়ার করেন তার ঢাকার চার বন্ধুর কাছে। এর মধ্যে তার বন্ধু রায়হান সাইদ বেদে পরিবারের শিশুসহ এতিম শিশুদের জন্য শীতের পোষাক ও কম্বল পাঠিয়ে দেন।
গত মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে তানোর সেন্দুকাই এতিমখানার এতিমদের মাঝে কম্বল ও বিকালে বিল কুমারী বিলের রাস্তার ধারে খুপরি ঘরে থাকা বেদে পরিবারের শিশুদের শীতের পোষাক গায়ে জড়িয়ে দিয়ে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলেন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা ইমন। এসময় এতিমখানা পরিচালনা কমিটির সভাপতি গরিবের ডাক্তার আব্দুল হান্নান উপস্থিত ছিলেন।
কীভাবে অসহায় এই বেদে পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো যায় সেই চিন্তায় সম্প্রতি ‘দূরন্ত রাজশাহী’ নামে (রাজশাহীতে এসএসসি ২০০২ ও এইচএসসি ২০০৪ ব্যাচের ফেসবুক গ্রুপ) একটি ফেসবুক গ্রুপে এই ২৪ বেদে পরিবারের শীতে জুবুথুবু অবস্থার বিষয়ে লিখে পোস্ট করেন এএসআই ইমন। তার এই পোস্টটি দেখে অসহায় বেদে পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ান মাসুদ বকশী নামে ওই ব্যাচেরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) এক কর্মকর্তা। অসহায় এসব পরিবারকে শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা করতে তাদের জন্য পাঠিয়ে দেন কম্বল।
গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে মাসুদ বকশীর পাঠানো কম্বল অসহায় বেদে পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করা হয়। ফেসবুক গ্রুপ ‘দূরন্ত রাজশাহীর’ সহযোগিতায় কম্বল বিতরণের এই অনুষ্ঠানে তানোর থানার ওসি রাকিবুল হাসান, এএসআই মো. ফারুক হোসেন ইমন, সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ, রাবি কর্মকর্তা নুর কুতুবুল আলম জুয়েল, তানোর প্রেসক্লাব সভাপতি সাইদ সাজু উপস্থিত ছিলেন।
বেদে পরিবারগুলোর সর্দার মো. কালা চাঁদ সরদার বলেন, ‘আমরা ছিন্নমূল মানুষ, বেদে পরিবার। কনকনে এই শীত আর হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাসে আমাদেরকে এই খুপড়ি ঘরেই থাকতে হয়। কিন্তু কেউ আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে না। বর্তমানে করোনার কারণে আমাদের যে পেশা, তাতে আয় রোজগার একেবারেই নেই। রাতে অনেক কষ্ট করে এই খুঁপড়ি ঘরে ছোট ছোট সন্তান নিয়ে বাস করি। সকাল হলেই যে যার কাজে গ্রামে বেরিয়ে পড়ি। করোনাকালে সরকার আমাদের এই অসহায় সন্তানগুলোর দিকে একটু নজর দিলে আমরা উপকৃত হতাম।’
এএসআই মো. ফারুক হোসেন ইমন বলেন, ‘ডিউটিরত অবস্থায় কনকনে এই শীতের রাতে শিবনদীর পাশের রাস্তা দিয়ে যখন যাই, তখন বেদে পল্লীর অসহায় সদস্যদের শীতের কষ্ট আমার বিবেককে তাড়িত করে। আমি উপলব্ধি করি, রাতে ডিউটিরত অবস্থায় যখন গাড়ির জানালার কাঁচ খুলে দেই, তখন শীতের এই তীব্রতায় শরীরটা মনে হয় একেবারে জমে যায়। কিন্তু অসহায় এই পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে শীতের মধ্যে যে কষ্টে দিনাতিপাত করছে, সেজন্য অনেক কষ্ট লেগেছে। তাদের জন্য অন্ততপক্ষে শীতের এই কষ্ট দূরীভূত করতেই আমার ক্ষুদ্র এই প্রয়াস।’
উল্লেখ্য, মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই ফারুক হোসেন ইমন ব্যক্তিগত উদ্যোগে তানোর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ গ্রাম পুলিশ পদক প্রবর্তন করেন। সাধ্যমত সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই যেন শান্তি খুঁজে পান তিনি। শুধু তিনি নন, রাজশাহীতে তার এসএসসি ২০০২ ও এইচএসসি ২০০৪ ব্যাচের ফেসবুক গ্রুপ ‘দূরন্ত রাজশাহীর’ সদস্যরা এভাবেই বিভিন্ন সময় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়