শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||
জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১
|| ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২২
বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীতে ভূমিহীনতার সমস্যা প্রকট। নিশ্চয়ই এর সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে মানবাধিকার বা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে গেলে অতি সহজেই বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয়। দেশের বৃহত্তম আদিবাসী জনগোষ্ঠী সাঁওতালদের মধ্যেও একই অবস্থা বিদ্যমান। আমাদের অভিজ্ঞতা অনুসারে, রাজশাহী জেলায় বসবাসরত সাঁওতাল জনগোষ্ঠীতে ভূমিহীনতার সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। এমনই একটি গ্রামের নাম জীওলমারী, যেখানে ৪৫টি সাঁওতাল পরিবারের বসবাস রয়েছে।
গ্রামটি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ৭ নং দেওপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। প্রত্যেকটি পরিবারেরই বসবাস সরকারের ২ নং খাসজমিতে। এরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও অিির্থকভাবে সঙ্কটাপন্ন; প্রয়োজনীয় তথ্য ও যোগাযোগের অভাবে রাষ্ট্রের পরিসেবা তথা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্ছিত।
২০২১ সনের মাঝামাঝি গ্রামটিতে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিইব)-এর মাধ্যমে গণগবেষণা দল গঠন করা হয়। গণগবেষণার প্রাথমিক ধাপে জনগোষ্ঠী/ এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করার পর্বে ভূমিহীনতা ও জরাজীর্ণ বাসস্থানের বিষয়টি অন্যান্য সমস্যার সাথে ওঠে আসে। সমস্যা সমাধানের কোন উপায় কারো জানা ছিল না।
এনিমেটর নৃপেন্দ্রনাথ মাঝি তাদেরকে বলেন, আপনারা তো একটা দেশে বসবাস করেন; দেশে নির্বাচিত সরকার আছে এবং সরকারের শাখা-প্রশখা আপনাদের আশে-পাশেও রয়েছে। কখনো কি জানিয়েছেন আপনাদের কষ্টের কথা? অনেক প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্ন বৈঠকে এল।
এনিমেটর আবার বলেন, আপনাদের নিকটস্থ তহশীল অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা ভূমি অফিসে আপনারা যোগাযোগ করে দেখতে পারেন। বৈঠবের সিদ্ধান্ত মতে দলীয় সদস্যরা ধাপে ধাপে অফিসগুলোতে যাতায়াত শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ভূমিহীনদের জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি ও ছবি জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়।
ক’দিন পর তহশীল অফিস থেকে বলা হয় ২০/২৫ টি পরিবারের তালিকা প্রদানের জন্য। পরে তারা বলেন যে, সকল পরিবারকে একসাথে বাড়ী করে দেওয়া সম্ভব হবে না, পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে; আপনারা ৭/৮টি পরিবারের তালিকা আলাদা করে দেন যাদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গণগবেষণা দল আবারো বৈঠকে বসে। তারা অনেক আলাপ- আলোচনা করে সকলের মতামত নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করে অফিসে জমা দেন। গত ফেব্রুয়ারী মাসে ৭টি পরিবার সরকারের দেওয়া ঘরে বসবাস শুরু করেছে। পরিবার প্রধানরা হলেন: পাত্রাস মার্ডি, সেন্টু মার্ডি, তাহাসিন মার্ডি, সোহাগী টুডু, বিশ^নাথ হাঁসদা, ইলিয়াস সরেন ও ইসমাইল মার্ডি।
এই পরিবারগুলো এখন সরকারের দেওয়া বাড়ী পেয়ে খুব আনন্দিত। তারা রিইব-কে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করে। রিইব-এর কর্মীরাও তাদের আনন্দে আনন্দিত। ইতোপূর্বে পাশর্^বর্তী জুগিডাইং গ্রামের ৯টি আদিবাসী সাঁওতাল পরিবার ঘর পেয়েছিল।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়