মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৬ ১৪৩১
|| ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২২
‘আমি একজন চাষি মানুষ। খেয়ে না খেয়ে মেয়েকে পড়িয়েছি। মেয়েকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু কখনো ভাবতে পারিনি তাকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আমার স্বপ্ন এখন লাশ হয়ে বাড়িতে যাচ্ছে। আমি এ ঘটনার কোনো আপস চাই না। আমি আমার মেয়ের স্বামীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’
গতকাল শনিবার (৩০ জুলাই) বিকেল ৪টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে জানাজা নামাজের আগে কথাগুলো বলেছিলেন রিক্তার বাবা লিয়াকত জোয়ার্দার। জানাজা শেষে নিহতের পরিবারের কাছে রিক্তার মরদেহ হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ওইদিন রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জোতপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে আরেক দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিক্তা । তার স্বামী ইশতিয়াক রাব্বী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে। আড়াই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার ধরমপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
রিক্তার স্বামী রাব্বীর বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসার জানালার সঙ্গে রিক্তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর নিজে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রাব্বীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, ফরেনসিক রিপোর্টের প্রাথমিক তথ্যমতে রিক্তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের ধারণা রিক্তাকে বালিশ কিংবা নরম কিছু দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
এদিকে ময়নাতদন্তের পর শনিবার বিকেল ৪টায় রিক্তার মরদেহ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। এসময় ফরেনসিক রিপোর্টের প্রাথমিক তথ্যটি জানতে পেরে রিক্তার স্বামী ইশতিয়াক রাব্বীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন আইন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে রাব্বীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করাসহ তার পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, ‘আমরা চাই না আর দ্বিতীয় কেউ এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হোক। আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে ইশতিয়াক রাব্বির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন শেষে ইশতিয়াক খুনি হিসেবে প্রমাণিত হলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘রিক্তার মৃত্যুর ঘটনাটি মর্মান্তিক। আমরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে আছি। আমরা চাই এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সত্যটা বেরিয়ে আসুক। বিচারের আগেই কাউকে দণ্ডিত করতে চাই না। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা ইশতিয়াক রাব্বির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়