শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১
পোষা প্রাণীর পা ভেঙেছে? গবাদী পশুর সর্দি? অসুস্থ পোষা পাখির চিকিৎসা দিতেও কার্পণ্য করা হবে না। করা যাবে খাসিকরণও। অর্থাৎ পশুপাখির জ্বরের চিকিৎসা থেকে অপারেশন সব সেবাই পাবেন এখানে। তবে এর একটিও টাকার বিনিময়ে নয়। সেবা-ওষুধ দুটিই মিলবে বিনা মূল্যে।
প্রায় ১৫ বছর ধরে পশু পাখির জন্য ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে আসা প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল হাজবেন্ড্রী বিভাগের অধীন ‘ভেটেনারি ক্লিনিক ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র’। রাজশাহী পবা উপজেলার নারিকেল বাড়িয়াতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসটিতে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর গড়ে ৫ থেকে ৬ শতাধিক মানুষ সেবা নিতে উপস্থিত হন এখানে। গত রোববার ১০ মাস বয়সী গরুর বাচ্চার সেবা নিতে আসেন স্থানীয় কমলাপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা। প্রতিষ্ঠানটি এবং সেবা সম্পর্কে তিনি জানান, ছাগল, গরু, মুরগি সবকিছুর সেবা এখানে ফ্রি পাই। হাসপাতালটি চালুর পর থেকেই এই সেবা নিচ্ছি।
ফ্রি হওয়াতে আশপাশের মানুষের ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে। যেখানে একজন পশুডাক্তার বাড়িতে গেলে ৩ থেকে ৪শ টাকা নিতেন সেই জায়গায় এখানে ফ্রি চিকিৎসা সেবা নিতে পারি। কৃষ্ঠগঞ্জ থেকে ৩টি অসুস্থ ছাগল নিয়ে এসেছিলেন সাথী বেগম। তিনিও জানান, চিকিৎসা ভালো হয়। মাঝে মাঝে ওষুধগুলোও ফ্রি পাওয়া যায় এখান থেকে।
এই সেবা দেন ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও ভেটেরিনারি ক্লিনিক ও কৃত্তিম প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ এবং ভেটেরিনারি বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন সরদার।
ভেটেরিনারি ক্লিনিক ও কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের ইনচার্জ হেমায়েতুল ইসলাম জানান, এখানে তিন ধরনের পশু পাখির সেবা দেওয়া হয়। যার মধ্যে লাইভ স্টক, পাখি জাতীয় এবং পোষা প্রাণী।
তবে শুধু রাজশাহী নয়। নাটোর, নওগাঁসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকেও অসুস্থ প্রাণীদের নিয়ে হাজির হন কেউ কেউ। এই প্রাণীগুলোকে স্থানীয় হাসপাতাল বা চিকিৎসকরা এখানে রেফার করেন।
এদিকে শুধু নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসের পাশের মানুষ নন, বণ্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উদ্যোগে উদ্ধার করা চিল, বানর, অজগর, নীলগাই, খরগোশ, কচ্ছপসহ, বিভিন্ন পশু পাখির সেবা নিতেও কর্মকর্তারা হাজির হন বলে জানান তিনি।
পশুপাখির চিকিৎসার জন্য রয়েছে অপারেশন থিয়েটার, গাইনোকোলোজি ল্যাব, ডিসপেনসরি, এক্সরে মেশিনও। এমনকি দেশে প্রথমবারের মতো কুকুরের সিজারে সফল হয়েছেন এখানকার চিকিৎসকরা। এতে জন্ম নেয় সাতটি বাচ্চা। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দেশে প্রথমবারের মতো কুকুরের সফল সিজার হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগটি ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্লিনিকটির এই সেবা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৬ সালের পহেলা নভেম্বর। সেই থেকে উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ সহজলভ্যতায় আশপাশের মানুষের যেমন সুবিধা হয়েছে তেমনি হাতেকলমে শিখতে পারছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরাও।
এ ব্যাপারে ভেটেরিনারি বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন সরদার বলেন, ভেটেরিনারি বিভাগটি মূলত ব্যবহারিক বিষয়। এখান থেকে পাস করে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ডাক্তারি পেশায় যুক্ত হন। ক্লিনিকটি থাকায় শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শেখা যেমন হচ্ছে এর দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ।
কিন্তু এখানে প্রয়োজনীয় লোকবল সংকটসহ কিছু সমস্যা রয়েছে। ক্লিনিকটি উন্নত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার আরও সুযোগ বাড়াবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই দাবি রাখেন তিনি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়