শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২
ভৌগোলিক অবস্থান, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে যেসব প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে এ জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনা।
রাজশাহী অঞ্চলের প্রাচীন সংস্কৃতির পরম্পরা এখানকার শিক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এখনো এর দালিলিক প্রমাণ দিয়ে চলেছে পাল রাজা ধর্মপালের রাজত্বকালে (৭৮১-৮২১) নির্মিত সোমপুর মহাবিহার।
বর্তমান নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত এ মহাবিহার একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত ছিল। এটি ছাড়া পাল আমলে নওগাঁয় হলুদ বিহার এবং জগদ্দল বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এগুলো ছিল উল্লেখযোগ্য শিক্ষাকেন্দ্র।
খ্রিষ্টীয় নবম শতকের মাঝামাঝিতে বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল একটি ভাস্কর্যশিল্পের বিদ্যালয়। প্রথিতযশা ভাস্কর ধীমান ও তাঁর পুত্র বীতপাল এখানে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশেষ ঘরানার ভাস্কর্যশিল্প গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বরেন্দ্রভূমির পশ্চিমে গঙ্গা নদী এবং বিহারের নালন্দা ও বিক্রমশীলা। এ দুটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজশাহী অঞ্চলের যোগাযোগ ছিল ঘনিষ্ঠ। সে দুটি শিক্ষাকেন্দ্র পুরো উত্তরবঙ্গে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
খ্রিষ্টীয় তেরো, পনেরো, ষোলো ও সতেরো শতকে রাজশাহী অঞ্চলের মাহীসন্তোষ (নওগাঁ), দরসবাড়ী (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) ও বাঘায় (রাজশাহী) গড়ে উঠেছিল কিছু আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাকেন্দ্র। সে আমলে মুসলমানদের জ্ঞানার্জনে এগুলো অনন্য ভূমিকা পালন করে। তেরো শতকের প্রথম দিকে বাংলায় মুসলিম শাসন শুরু হয়, বিশেষ করে গৌড় অঞ্চলে। সে সময় অনেক সুফি-সাধক-উলেমা-মাশায়েখ বাংলায় আসেন। এখনকার নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলার আত্রাই নদীর পূর্ব দিকে মাহীসন্তোষে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় সে সময়। প্রখ্যাত আলেম ও সাধক মাওলানা তকীউদ্দীন আল-আরবি এখানে ইলম প্রচারের পাশাপাশি মাদ্রাসাটি গড়ে তোলেন। সেটি সে আমলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ এলাকা প্রাচীন গৌড় নগরীর অংশ। বর্তমান সোনামসজিদ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে বিখ্যাত দরসবাড়ী মাদ্রাসা। এটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। ষোলো শতকের এই মাদ্রাসাটি ছিল বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্যতম প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র।
রাজশাহী জেলার প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্রের মধ্যে বাঘা মাদ্রাসার অবস্থান শীর্ষে। রাজশাহী জেলার বর্তমান বাঘা উপজেলায় বিশাল এ মাদ্রাসা গড়ে উঠেছিল। ষোলো শতকের শেষ এবং সতেরো শতকের শুরু, এ সময়কালে বাঘা মাদ্রাসাটি উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হতো। বাঘার প্রথম মুসলিম বসতি স্থাপনকারী মাওলানা শাহ মোয়াজ্জেম-উদ-দৌল্লা ওরফে শাহদৌল্লাহ এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সে সময় সম্রাট শাহজাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য এ মাদ্রাসাটির ব্যয়ভার বহনের জন্য নিষ্কর জমি দিয়েছিলেন।
গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক ম্যাকলের শিক্ষানীতিকে যুক্তিযুক্ত বিবেচনা করে ১৮৩৫ সালের ৭ মার্চ ভারতবর্ষে সরকারি শিক্ষানীতি ঘোষণা করেন। ১৮৩৭ সালে ফার্সির জায়গায় ইংরেজিকে সরকারি ভাষা করা হলে সরকারি দপ্তরগুলোতে প্রথম ভাষা হয় ইংরেজি। ফলে ইংরেজি শিক্ষার জন্য রাজশাহীতে ইংরেজি স্কুল তৈরি হতে থাকে।
তবে ইংরেজি শিক্ষা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রবর্তিত হওয়ার বেশ কয়েক বছর আগে রাজশাহীতে ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮২৫ সালে রাজশাহী জেলার সদর দপ্তর নাটোর থেকে সরিয়ে রাজশাহী শহরে স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে নতুন এ জেলা শহরে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে সেখানকার জমিদার, জোতদার, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ বসবাস করতে শুরু করে। সঙ্গে ছিল নীল ও রেশম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫০০ ইউরোপীয় মানুষ। এই পুরো জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য ১৮২৮ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় বোয়ালিয়া ইংলিশ স্কুল।
প্রথমে স্থানীয় উদ্যোগ ও অনুদানে স্কুলটি পরিচালিত হতে থাকে। পরে ১৮৩৬ সালের ১০ জুন বোয়ালিয়া ইংলিশ স্কুলটি সরকারিভাবে জেলা স্কুলের মর্যাদা লাভ করে। ১৮৫৮ সালে এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। ১৮৭৩ সালের ১ এপ্রিল মতান্তরে জানুয়ারি মাসে বোয়ালিয়া সরকারি জেলা স্কুল দ্বিতীয় শ্রেণির বা সেকেন্ড গ্রেড কলেজের মর্যাদা লাভ করে। এভাবেই রাজশাহী কলেজের আত্মপ্রকাশ ঘটে। নতুন কলেজটির নাম তখনো বোয়ালিয়া হাইস্কুল। ১৮৭৭ সালে এর নাম বদলে রাখা হয় কলেজিয়েট স্কুল। একই হেডমাস্টার পরিচালিত রাজশাহী কলেজ ১৮৭৮ সালে আলাদা হয়ে যায়।
এদিকে পাবনা জেলার চাটমোহরের শিতলাই এলাকার জমিদার এবং রাজশাহী আদালতের আইনজীবী রায় লোকনাথ মৈত্র নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানদের ইংরেজি শেখার সুবিধার জন্য একটি ইংরেজি-বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৪৭ সালে। ১৮৭৩ সালে রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠার আগে ১৮৬৫ সালের ১৫ নভেম্বর স্থাপিত হয়েছিল রাজশাহী ট্রেনিং স্কুল বা পরবর্তীকালের পিটিআই। ১৮৭৪ সালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন শিক্ষা তহবিলের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী মাদ্রাসা। দিঘাপতিয়ার জমিদার রাজা প্রসন্ন নাথ রায়ের দেওয়া অর্থে ১৮৬৮ সালে বালিকাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যেটি পরবর্তীকালে পি এন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় নামে খ্যাতি লাভ করেছে। ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমি প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৮৯৮ সালের ১২ জুলাই। ১৮৯৮ সালে বোয়ালিয়া শহরে স্থাপিত হয় ডায়মন্ড জুবিলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল।
এ ছাড়া খন্দকার ওয়াসিউদ্দীন নামে স্থানীয় একজন আইনজীবী হাতেম খান মহল্লায় নিজের বাড়িতে ১৮৬৮ সালে একটি ইংরেজি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল বালিকাদের স্কুল। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত স্কুলটি চালু ছিল।
লঞ্চ করার বিষয়, উনিশ শতকের মধ্যেই রাজশাহী শহরে বা তখনকার রামপুর বোয়ালিয়ায় একে একে অনেক প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চবিদ্যালয়সহ একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শহরটি ছিল নীল-রেশম-লাক্ষা-কার্পাস-ধান-পাট ইত্যাদি পণ্য রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। কিন্তু উনিশ শতকের মধ্যে শহরটি পরিচিতি পেয়ে যায় শিক্ষার জনপদ হিসেবে। এ সময় কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহী হাই মাদ্রাসা, লোকনাথ স্কুল এবং রাজশাহী কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে।
শুধু রাজশাহী বা বোয়ালিয়ায় নয়। পুরো উনিশ শতকে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মাধ্যমিক ও উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্থানীয় জমিদারদের উদ্যোগে। সেগুলোতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি শিক্ষা দেওয়া হতো। ১৮৫২ সালে দিঘাপতিয়ার জমিদার রাজা প্রসন্ন নাথ রায় সেখানে স্থাপন করেন প্রসন্ন নাথ একাডেমি নামে একটি ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতি ছড়িয়ে ছিল দেশব্যাপী। পুঠিয়ার জমিদার রাজা পরেশ নারায়ণ রায় ১৮৬৪ সালে পুঠিয়ায় স্থাপন করেন একটি মাধ্যমিক বাংলা স্কুল। ১৮৬৮ সালে এটি ইংরেজি স্কুল এবং ১৮৭১ সালে উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
১৮৫৫ সালে নাটোরে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি ভার্নাকুলার (বাংলা) স্কুল। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি মধ্য বাংলা বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। ১৮৬২ সালে নাটোরের জমিদার খান বাহাদুর রশীদ আলী খান চৌধুরী নাটোরে তৈরি করেন একটি অ্যাংলো-পারসিয়ান স্কুল। তিনি জনসাধারণের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা সম্প্রসারণের গুরুত্ব বুঝে ১৮৮১ সালে বিদ্যালয় দুটিকে একত্র করে একটি মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ে (এম ই স্কুল) রূপ দান করেন। ১৮৮৪ সালে স্কুলটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। রশীদ খান চৌধুরী মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরায় ১৮৯৬ সালে নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্র নাথ স্কুলটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এটিই হচ্ছে নাটোরের বিখ্যাত মহারাজা হাইস্কুল।
নওগাঁর দুবলহাটির জমিদার রাজা হরনাথের প্রচেষ্টায় ১৮৬৪ সালে সেখানে একটি মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। সে স্কুলটি ছিল অবৈতনিক। পরে এটি উচ্চবিদ্যালয়ে উন্নীত হয়। কাছাকাছি সময়ে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার কাশিমপুর জমিদারের প্রচেষ্টায় কাশিমপুরে স্থাপিত হয় বঙ্গ বিদ্যালয়।
১৮৭৪ সালে সরকারি উদ্যোগে শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিটি জেলায় গুরু ট্রেনিং স্কুল স্থাপিত হয়। আত্রাই থানার বান্দাইখাড়া গ্রামেও সে সময়ে একটি গুরু ট্রেনিং স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। সে আমলে কৃষ্ণধন বাগচী নামে একজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তি নওগাঁর সাব-ডেপুটি কালেক্টর ও গাঁজামহালের সুপারভাইজার ছিলেন। নওগাঁ শহরের তরফদারবাড়ির মহেশ পণ্ডিতের পাঠশালাকে তিনি স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে উন্নীত করেন। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিই কে ডি হাইস্কুল নামে বাংলাদেশে বিখ্যাত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আত্রাইয়ের পতিসর গ্রামে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯১০ সালে একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলটির নাম মহর্ষি হাইস্কুল। মহাদেবপুরের আরেক জমিদার রায়বাহাদুর নারায়ণচন্দ্র রায় চৌধুরী তাঁর মা সর্বমঙ্গলা দেবীর নামে ১৯২১ সালে সর্বমঙ্গলা হাইস্কুল স্থাপন করেন। মহাদেবপুর এলাকার এটি ছিল প্রথম ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয়।
বৃহত্তর রাজশাহীর নবাবগঞ্জ জেলাতে প্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা কম নয়। ১৮৫৫ ও ১৮৫৭ সালে বর্তমান নবাবগঞ্জ জেলা এলাকার মধ্যে মাত্র দুটি মাধ্যমিক বাংলা স্কুল ছিল। ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি এম ই স্কুলকে ১৮৯৫ সালে হাইস্কুলে উন্নীত করে নাম রাখা হয় নবাবগঞ্জ হরিমোহন ইনস্টিটিউশন। বুঝতেই পারছেন, ব্যবসায়ী ও জোতদার হরিমোহনের আর্থিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা ছিল স্কুলটিতে।
নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদিনা ফজলুল হক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৮ সালে। ১৯৬৪ সালে এটি ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত হয়। ওই একই বছর রাজশাহীর সারদায় প্রতিষ্ঠিত হয় আইয়ুব ক্যাডেট কলেজ। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এর নাম হয় রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ।
ডায়মন্ড জুবিলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুলটি রাজশাহীর ঐতিহ্যের বাহক। উত্তরবঙ্গে রেশমশিল্পের উন্নতির জন্য রাজশাহী জেলা বোর্ডের উদ্যোগে ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। স্কুলটি নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা করেন রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলের জমিদারেরা। ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠার সময় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পাঁচ বছর সেখানে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৫৫ সালে এ প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও সার্ভে স্কুল। এ ছাড়া ১৯৬২ সালে রাজশাহীতে গড়ে ওঠে রেশম কারখানা এবং রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
এ বিশাল পরম্পরার হাত ধরে বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে রাজশাহীতে গড়ে উঠতে থাকে আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫৮ সালে রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ। কিন্তু এর সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। এরপর ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রকৌশল কলেজ। ১৯৮৬ সালে এটি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে রূপান্তরিত হয় এবং ২০০৩ সালে একে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়।
এখনো রাজশাহীসহ বিভাগের বিভিন্ন শহরে তৈরি হয়ে চলেছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করেই উত্তরাঞ্চলের প্রধান নগরী আজকের রাজশাহী প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
তথ্যসূত্র
মোহাম্মদ ইলিয়াস আলী, যুগে যুগে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষার উত্তরণ, সম্পাদনা পরিষদ, বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস, মাহবুব সিদ্দিকী, শহর রাজশাহীর আদিপর্ব, প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়, বঙ্গ পরিচয়, কাজী মোহাম্মদ মিছের, রাজশাহীর ইতিহাস, শ্রীকালীনাথ চৌধুরী, //////////রাজসাহীর////// সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ইত্যাদি।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়