ব্রেকিং:
রাজশাহীতে হিন্দুদের জমিতে বিএনপি নেতার পুকুর খননের চেষ্টা, হামলা
  • রোববার   ০১ জুন ২০২৫ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ১৮ ১৪৩২

  • || ০৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

আমার রাজশাহী
সর্বশেষ:
রাজশাহীতে হিন্দুদের জমিতে বিএনপি নেতার পুকুর খননের চেষ্টা, হামলা
৩৪

রাজশাহীতে হিন্দুদের জমিতে বিএনপি নেতার পুকুর খননের চেষ্টা, হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১ জুন ২০২৫  

বিএনপি নেতার পুকুর খনন। আমার রাজশাহী

বিএনপি নেতার পুকুর খনন। আমার রাজশাহী

রাজশাহীর পুঠিয়ায় কয়েকজন হিন্দু কৃষকের জমি ‘জোরপূর্বক’ দখল করে পুকুর খননের চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।

এসময় পুকুর খননে বাধা দিতে গেলে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় কৃষকসহ মাটি কাটতে যাওয়া কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

শুক্রবার রাতে উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের গোড়াগাছি হিন্দুপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান পুঠিয়া থানার ওসি কবির হোসেন।

পরে গ্রামের লোকজন জোট বেঁধে ধাওয়া দিলে পুকুর খননকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যান। এসময় একটি মাটি কাটার যন্ত্র (এস্কাভেটর বা ভেকু) ভাঙচুর করে এবং সেখান থেকে বেশ কিছু দেশি অস্ত্র উদ্ধার করে। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পুকুর খননকারী ওই বিএনপি নেতার নাম আবুল কামাল। তিনি দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক। কালাম নওপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী।

পুঠিয়া থানার ওসি কবির বলেন, খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে শনিবার সকালে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনোভাবেই যেন পকুর খনন করতে না পারে সেটি নজরদারি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এর কয়েকদিন আগে সেখানে অভিযান চালিয়ে মাটি কাটা মেশিন ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তারপরও তারা গভীর রাতে খনন কাজ করতে গিয়েছিল। কোনোভাবে সেখানে পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না।

হিন্দুপাড়ার এক জমির মালিক বলেন, “স্থানীয় কিছু বিএনপি নেতাকর্মী ভয় দেখিয়ে কয়েকটি হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে জমি লিখে নেয়। বাকিরা দেয়নি। তারা কৌশলে জমিগুলো শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সনজীব ডাক্তারের নামে ডিড করে নেয়।

“পরে তার কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য জমিগুলো লিজ হিসেবে ডিড করে নেয় বিএনপি নেতা আবুল কালাম। অস্ত্রের মুখে ৫-৭ বিঘা জমি লিজ হিসেবে ডিড করে নিয়ে প্রায় ২০ বিঘা জমি দখল করে পুকুর খননের কাজ শুরু করে। স্থানীয় বিএনপি কর্মী আসাদুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে পুকুর খননের কাজ তদরকির দায়িত্ব পায়।”

এ ঘটনার বিষয়ে শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন কৃষকদলের আহ্বায়ক আবু আসাদ বলেন, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আবুল কালামের লোকজন ভেকু নিয়ে গিয়ে পুকুর খনন শুরু করে। এসময় স্থানীয় কৃষকরা বাধা দিলে কালামের লোকজন অস্ত্র নিয়ে কৃষকদের ধাওয়া দেয়। খবর পেয়ে কৃষকদলের নেতাকর্মীরা কৃষকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পুকুর খননকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় তারা পালিয়ে যায়।

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা আবুল কালাম বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ের দিকে জমিগুলো সনজীব ডাক্তার ও তার ভাই পুকুর খননের জন্য লিজ নিয়েছিল। কিন্তু পটপরিবর্তনের কারণে তারা পুকুর খনন করতে পারিনি।

“সম্প্রতি সনজীব আমাকে জমিগুলো ১০ বছরের জন্য লিজ দেয়। এরপরও আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করি। জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।”

প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই পুকুর খনন শুরু করেছেন বলেও দাবি করেন আবুল কালাম।

তবে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, পুঠিয়ায় কোনো পুকুর খননের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এসব অবৈধ পুকুর খননের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোনোভাবেই কাউকে পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না।

 

কৃষকদের উপর হামলার বিষয়ে আবুল কালামের দাবি, “কৃষকদল নেতা আবু আসাদ মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় তারা আমার লোকজনের উপর হামলা করে। এসময় তারা আমার ভেকু ভাঙচুর করে এবং এর চালককে মেরে জখম করে।”

ইউনিয়ন বিএনপির আরেক কর্মী আসাদুল ইসলাম বলেন, “ওই পুকুরের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে পুকুর খনন কাজের জন্য জনবল সরবরাহ করেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু না।”

তিনি বলেন, দুই দফায় হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় কৃষকসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে শাওন, রবিউল, মোস্তাফিজুর ও ভেকু চালক রকিবকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা সবাই পকুর খনন কাজে নিয়েজিত ছিল।

আমার রাজশাহী
আমার রাজশাহী