ব্রেকিং:
সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিওর এক মহিলা কর্মী আহত হয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী "তারেক-খালেদাকে ‘খুনি’ বলা রফিক কালের কণ্ঠেই টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ রাজশাহী মহানগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ জন তানোরে ভুয়া এনজিওর নামে ৩৪ লাখ টাকার প্রতারণা মামলা বিধবা নারীকে পেটানোর অভিযোগ সেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে
  • বৃহস্পতিবার   ১৯ জুন ২০২৫ ||

  • আষাঢ় ৫ ১৪৩২

  • || ২২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

আমার রাজশাহী
সর্বশেষ:
সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিওর এক মহিলা কর্মী আহত হয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী "তারেক-খালেদাকে ‘খুনি’ বলা রফিক কালের কণ্ঠেই টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ রাজশাহী মহানগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ জন তানোরে ভুয়া এনজিওর নামে ৩৪ লাখ টাকার প্রতারণা মামলা বিধবা নারীকে পেটানোর অভিযোগ সেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে
৪৬

কেন জেলগেটে মায়ের মরদেহ দেখানো হলো রাজশাহীর সাবেক এমপিকে?

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২৫  

তাদের দাবি, প্যারোলের আবেদন করলেও মি. আসাদকে কারা ফটকে তার মাকে দেখাতে চেয়েছে তার পরিবারই। আবেদন নামঞ্জুরের বিষয়টি সঠিক নয়।

সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় মি. আসাদের মা মারা যান।

এরপর সন্ধ্যায় তার প্যারোলে মুক্তি চেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করা হয়। মহিষবাথান কবরস্থানে রাত নয়টায় দাফন করা হয় তার মাকে।

মি. আসাদ রাজশাহী তিন আসনের সংসদ ছিলেন। কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের টিকিটে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মি. আসাদ।

পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার ঘটনায় মামলা হয়। এরকম একটি মামলায় গ্রেফতারের পর কারাগারে রয়েছেন তিনি।

মি. আসাদের ভাই মো. কামরুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, প্যারোলের আবেদন সরাসরি নামঞ্জুরের কথা বলেনি প্রশাসন। কিন্তু "আমলাতান্ত্রিক জটিলতা" করছিল। তখন একপর্যায়ে মরদেহ জেলগেটে নেওয়ার ওই কথা বলা হয়।

রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে কুলসুম সম্পা বিবিসি বাংলাকে জানান, প্যারোলের আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি–– এমন অভিযোগ সত্য নয়।

"প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে না এমন কিছু বলিনি আমরা" বলেন মিজ সম্পা।

তবে ওই জেলার স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে মুক্তি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

তাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে জানাজায় যাওয়ার অনুমতি দিলে যদি 'মব' সৃষ্টি হতো তবে তা সামাল দেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কঠিন হতো। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়নি, বলছিলেন তারা।

মি. আসাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যরাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ

রাজশাহীর সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ
 

 

কী ঘটেছে কাল?

স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানান, গতকাল সোমবার বিকেলে মি. আসাদের মা নিজ বাসা ভাটাপাড়ায় মারা যাওয়ার পর তাকে মহিষ বাথান কবরস্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।

সাবেক সংসদ সদস্য মি. আসাদরা ছয় ভাই ও এক বোন। সবার বড় তিনি।

মি. আসাদরা পাঁচ ভাই ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের আমলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন।

তবে ভাইদের মধ্যে তৃতীয় ভাই মো. আক্তারুজ্জামান কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি নিজ বাড়িতে গিয়ে মায়ের মরদেহ দেখেছিলেন। তবে নিরাপত্তার সংশয়ে মহিষ বাথান কবরস্থানের জানাজায় উপস্থিত হননি তিনি।

মি. আসাদের আরেক ভাই রাজশাহীর একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, "নিয়মানুযায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে প্যারোলের আবেদন করা হয়েছে। তারা সরাসরি আবেদন নামঞ্জুরের কথা বলেনি। কিন্তু যখন এখান থেকে সেখানে পাঠাচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা করছিল তখন অবস্থা বুঝে একপর্যায়ে ওই কথা (মরদেহ জেল গেটে নেওয়ার কথা) বলা হয়।"

মি. কামরুজ্জামান রাজশাহী জেলার ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে যুক্ত রয়েছেন। শেষবারের মতো তিনিও মাকে দেখতে যেতে পারেননি বলে জানান।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ওই সাংবাদিক জানান, "আসাদকে নিয়ে আসা হবে মনে করে কাল রাতে মহিষ বাথান কবরস্থানে যাওয়ার প্রতিটি পথে বিরোধী রাজনৈতিক দলের লোকজন অবস্থান নিয়েছিল। তারা পাঁচ ভাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ফলে কোনো না কোনো ভাই যাবে এমন ধারণা ছিল তাদের।"

"যদি তাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে জানাজায় আসার অনুমতি দিত, তবে যে মবের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো তা পুলিশের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতো। কারণ এখনো তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে নাই। যার ফলে তাকে এখানে নিয়ে আসা হয়নি। জেল গেটে মায়ের মুখ দেখানো হয়," বলেন এই সাংবাদিক।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যমে মি. আসাদের প্যারোলে মুক্তির আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

আসলেই প্যারোলে মুক্তির আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছিল কি- না সে বিষয়ে জানতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শাহ আলম খানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি।

রাতে জানাজার ছবি

একটি জেলার কারাগারে থাকা বন্দি বা হাজতি ব্যক্তিদের ওই জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়মানুযায়ী প্যারোলের আবেদন করতে হয়

 

 

জেলা প্রশাসন যা বলছে

একটি জেলার কারাগারে থাকা বন্দি বা হাজতি ব্যক্তিদের ওই জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়মানুযায়ী প্যারোলের আবেদন করতে হয়।

ফলে নিয়মানুযায়ী মি. আসাদের পরিবার ওই জেলার এডিএমের কাছেই আবেদনটি করেছিলেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে কুলসুম শম্পা জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় মি. আসাদের ভাই স্বাক্ষরিত প্যারোলে মুক্তির একটি আবেদন পান।

মিজ শম্পা বলেন, "সন্ধ্যা সাতটায় প্যারোলের আবেদন করা হয়। উনার মায়ের জানাজা ছিল রাতে নয়টায়। উনার যে আত্মীয় আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন উনি বলেছেন যে তারা লাশটা নিয়ে কারা ফটকে আসতে চান, ওখানেই দেখাবেন।"

পরিবারের পক্ষ থেকে কারা ফটকে মরদেহ আনার প্রস্তাব দেয়ার পরই মি. আসাদকে মায়ের মুখ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় বলে দাবি করেন মিজ শম্পা।

মি. আসাদের চাচা পরিবারের পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ওই প্রস্তাব দিয়েছিল বলে জানান এই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হবে না এমন কোনো সিদ্ধান্ত প্রশাসনের ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

তবে আবেদন করার পরও কেন মি. আসাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ফোনে ওই প্রস্তাব করা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মিজ শম্পা।

 

প্যারোলে মুক্তির প্রক্রিয়া কী ?

ল্যাটিন 'প্যারাবোলা' শব্দ থেকে প্যারোল শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা।

প্রথমে ওল্ড ফ্রেঞ্চ ভাষায় পরে সতেরশ শতকে ইংরেজি ভাষায় এ শব্দটি রূপ নেয়। আইনের ভাষায় এ শব্দের অর্থ সুনির্দিষ্ট শর্তে বন্দি ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া।

বাংলাদেশে কয়েদি বা হাজতি ব্যক্তির জন্য প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে পৃথক কোনো আইন নেই।

তবে ২০১৬ সালের পহেলা জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে প্যারোল মুক্তি সংক্রান্ত নীতিমালার কথা বলা হয়েছে।

সরকারের জারি করা ওই নীতিমালা অনুযায়ী, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বন্দি কয়েদি বা হাজতিদের প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে হয়।

শুধু সাময়িক সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। প্যারোলে মুক্ত ব্যক্তিকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরায় রাখা হবে।

কারাগারের ফটক থেকে প্যারোলে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিকে পুলিশ বুঝে নেওয়ার পর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই কারাগারে ফেরত দিতে হবে।

একইসাথে যে সময়ে প্যারোল অনুমোদন করা হবে ওই সময় শেষেই তাকে পুনরায় কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্যারোলে মুক্তির সময়সীমা কোনো অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার বেশি হবে না।

তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের মুক্তির এই সময়সীমা বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা রয়েছে।

মূলত দুইটি ক্ষেত্রে এই প্যারোল কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে একটি নিকটাত্মীয় মারা গেলে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা যাবে।

এছাড়া আদালতের আদেশ বা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্যারোলে মুক্তির প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্দিকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে আবেদন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দেবেন। একইসাথে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারায় রাখা হবে এমন বন্দিদের।

ভিআইপি বা অন্যান্য শ্রেণির কয়েদী বা হাজতি বন্দি সকলেই এই আবেদন করতে পারবেন।

বন্দির বাবা - মা, শ্বশুর - শাশুড়ি, স্বামী - স্ত্রী, সন্তান এবং আপন ভাই – বোন এমন নিকট আত্মীয় মারা গেলেই প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে বলে এই নীতিমালায় বলা হয়েছে।

এমনকি বন্দি নিজ জেলার কারাগারে না থাকলেও গন্তব্যের দূরত্ব বিবেচনা করে প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন কর্তৃপক্ষ।

তবে উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গম এলাকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, দূরত্ব ও নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্যারোল মঞ্জুর বা নামঞ্জুরের ক্ষমতা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

আমার রাজশাহী
আমার রাজশাহী
নগর জুড়ে বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর