শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||
শ্রাবণ ১২ ১৪৩১
|| ২০ মুহররম ১৪৪৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪
১২ কেজি ওজনের রুই, ৩৫ কেজি ওজনের বোয়াল, ৪৫ কেজি ওজনের কাতল ও ১২৫ কেজি ওজনের পাংখা মাছ। এছাড়াও আইড়, বাঘাইড়, কালিবাউশ, গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় মাছের দেখা মিলে গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিনিরাইল গ্রামের জামাই মেলায়। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে চিতল, কোরাল, কাইক্কা, বাইম ও রূপচাঁদা।
এ মেলা কবে প্রথম শুরু হয়েছিল, সেটি ঠিকভাবে জানা যায় না। তবে আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রায় ২৬০ বছর ধরে হয়ে আসছে এ জামাই মেলা। স্থানীয় বৃদ্ধরা বলছেন, কয়েক প্রজন্ম ধরে মেলাটি দেখে আসছেন।
প্রতিবছর মাঘ মাসের প্রথম দিন বসে এই মেলা। এতে গাজীপুর ছাড়াও আশপাশের অন্তত কয়েক জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন। সকাল থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মেলা। এতে মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, রকমারি খাবার ও বিভিন্ন ধরনের দোকান বসে।
জামাই মেলার নাম থেকে এটা স্পষ্ট, স্থানীয় জামাইদের কেন্দ্র করেই মেলার আয়োজন। আর তাতে মাছের সমাহার। বিনিরাইল ও আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, তারাই মেলার মাছের ক্রেতা। মেলায় জামাইদের লক্ষ্য থাকে বড় মাছটি কিনে শ্বশুরবাড়ি নেয়ার। আবার শ্বশুরদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা থাকে বড় মাছটি নিয়ে মেয়ের জামাইকে আপ্যায়ন করার। আর মেলার দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে উপজেলার মানুষ।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) মেলা ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তার মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের দোকান ঘিরে এলাকার জামাইদের উপচে পড়া ভিড়। এ সময় দেখা যায়―২০-৪৫ কেজি ওজনের কাতল, ১৭ কেজির চিতল, ২৫ কেজির বোয়াল, ৪২ কেজির কোরাল এবং বড় বড় আইড়সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ রফিকুলের দোকানে।
এর মধ্যে আকর্ষণীয় ছিল অন্তত আট ফুট লম্বার শতাধিক সামুদ্রিক পাংখা মাছ। দেখতে অদ্ভুত মাছটির দাম দেড় লাখ টাকা হাঁকেন ব্যবসায়ী রফিকুল। ৪৫ কেজি ওজনের কাতলের দাম হাঁকেন ৮৫ হাজার টাকা, আর অভিজিৎ সাহা নামের এক জামাই পাংখা মাছের দাম ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেন। কিন্তু দাম পছন্দ মতো না হওয়ায় বিক্রি করেননি রফিকুল।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে মেলায় আসা মাছ ব্যবসায়ী বিজয় দাস (৬২) বলেন, গত ২৫ বছর ধরে মাছ বিক্রি করছি মেলায়। বিনিরাইলের এই জামাই মেলায় অনেক মানুষ আসে। বিক্রিও বেশ ভালো হয়। এর থেকেও ভালো কথা, মেলায় সব সম্প্রদায়ের মানুষের সমাগমে উৎসবের সৃষ্টি হয়।
জামাই মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, গ্রামের মুরব্বিরা বলে থাকেন, প্রায় ২৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই জামাই মেলা। শুরুতে ক্ষুদ্র পরিসরে হতো মেলা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আয়োজন করতেন মেলার।
সময়ের ব্যবধানে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে এই মেলা। গতবার দেড় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছিল। সেই সংখ্যা এবার ছাড়িয়ে আড়াই কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা আমাদের।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়