ব্রেকিং:
সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিওর এক মহিলা কর্মী আহত হয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী "তারেক-খালেদাকে ‘খুনি’ বলা রফিক কালের কণ্ঠেই টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ রাজশাহী মহানগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ জন তানোরে ভুয়া এনজিওর নামে ৩৪ লাখ টাকার প্রতারণা মামলা বিধবা নারীকে পেটানোর অভিযোগ সেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে
  • মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||

  • অগ্রাহায়ণ ২৪ ১৪৩২

  • || ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

আমার রাজশাহী
সর্বশেষ:
সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিওর এক মহিলা কর্মী আহত হয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী "তারেক-খালেদাকে ‘খুনি’ বলা রফিক কালের কণ্ঠেই টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ রাজশাহী মহানগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ জন তানোরে ভুয়া এনজিওর নামে ৩৪ লাখ টাকার প্রতারণা মামলা বিধবা নারীকে পেটানোর অভিযোগ সেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে
৮৬

রাজশাহী অঞ্চলে অস্থির চালের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রকাশিত: ৭ জুলাই ২০২৫  

মজুতবিরোধী অভিযানের পরও রাজশাহী অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের দাম। গত দুই সপ্তাহে এ অঞ্চলের বিভিন্ন মোকাম ও হাটবাজারে কেজিতে সব ধরনের চালের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি বস্তায় বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। মোটা চালের দামও কেজিতে ৪ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। চালকল মালিকরা বলছেন, বোরো উঠার পর থেকেই রাজশাহী অঞ্চলের মোকাম ও হাট-বাজারে ধানের দাম বাড়ছে। ফড়িয়া ব্যাপারিরা ধান কিনে মজুত করছেন। মিল মালিকরা ফড়িয়া ব্যাপারিদের কাছ থেকে ধান কিনে চালকল চালাচ্ছেন। তবে সাম্প্রতিক অভিযানের পর বস্তায় ১০০ টাকা করে কমেছে চালের দাম। অভিযানের ভয়ে আড়ত বন্ধ করে আত্মগোপন করেছেন মজুতদাররা।

৩ জুলাই রাজশাহীতে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে ধান-চালের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধির প্রসঙ্গ তোলেন অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চালকল মালিক, ভোক্তা অধিকার কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গভর্নর এ সভায় দ্রুত সময়ে ধান-চালসহ খাদ্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন। এছাড়া গভর্নর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের খাদ্য মজুতবিরোধী অভিযান জোরদারের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে ২৬ জুন রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয়ক কমিটির সভায় রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় অব্যাহতভাবে ধান-চালের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসকদের জেলায়-জেলায় মজুতবিরোধী অভিযান জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর থেকে গত ১০ দিনে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও বগুড়া জেলার বিভিন্ন অটোরাইস মিলস ও মোকামে মজুতবিরোধী ২২টি অভিযান পরিচালনা করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। এরপরও ধান চালের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং মিল মালিকরা দুই সপ্তাহ আগে চালের দাম বস্তায় ৩০০ টাকা বাড়িয়ে অভিযানের পর বস্তায় ১০০ টাকা করে কমিয়েছেন। বাজারে চাল কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

মজুতবিরোধী অব্যাহত অভিযানের পরও ধান-চালের দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার বিষয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য দপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক মো. ওমর ফারুক বলেন, এর দুটি কারণ প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একটি হলো চলতি বোরো মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ফলে কৃষকরা সরকারি সংগ্রহ কেন্দ্রে ধান দিচ্ছেন। অন্যদিকে মিল মালিকরা খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করছেন। এতে বাজারে ধান-চালের দামের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়েছে। দ্বিতীয় কারণ হলো, লাগাতার বৃষ্টির কারণে হাসকিং মিল মালিকরা চাতালে ধান শুকিয়ে চাল তৈরি করতে পারছেন না। মিল মালিকরা মোকামগুলো থেকে কিছুটা বেশি দামে ধান কিনে চাল তৈরি করছেন। এরও প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের কিছু নামিদামি কোম্পানি একচেটিয়া চালসহ খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনে এসব কোম্পানি প্যাকেটজাত করে ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করছে। অভিযান করেও প্রশাসন এসব কোম্পানির সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।

খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে সরকার ১৪ লাখ টন চাল ও সাড়ে তিন লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে। যেসব মিল মালিক চুক্তি করেও ধার্যকৃত চাল সরকারি খাদ্য গুদামে সরবরাহ করেনি সে সব মিলে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ, কামাল অটোরাইস মিলস, হাসেম অটো মিলস ও এফএম অটোরাইস মিলে অভিযান চালানো হয়েছে। এছাড়া চাল সরবরাহের বড় মোকাম নওগাঁর ৬টি অটোরাইস মিলেও অভিযান হয়েছে। অভিযান হচ্ছে পাবনা ও বগুড়ার মিলসগুলোতে। তবে অভিযানের পরও আড়ত ও খুচরা বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না।

ধান-চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেন, খাদ্যপণ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণকারী বড় বড় কোম্পানি আগেই বাজার ও মোকাম থেকে ধান কিনে গুদামজাত করেছে। এসব কোম্পানি ঠিক করছে ধান-চালের দাম বাড়বে নাকি কমবে। মিল মালিকরাও চাল সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই পরিস্থিতিতে মজুতবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জেলায় জেলায় প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ মজুতবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে চালের দাম কমে আসবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মজুতবিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ায় ধান-চালের আড়তগুলোতে চালের সরবরাহ কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চালের দামের ওপর। অভিযানের কারণে রাজশাহী বিভাগের প্রধান প্রধান চাল সরবরাহকারী মোকাম ও আড়তগুলো বন্ধ রেখে গা ঢাকা দিয়েছেন পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা।

সারা দেশের বিভিন্ন মোকামে চাল সরবরাহকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠান নবাব অটোরাইস মিলসের স্বত্বাধিকারী আকবর হোসেন বলেন, গত ঈদের পর চালের দাম বাড়লেও অভিযানের পর বস্তায় ১০০ টাকা করে কমেছে। তবে দাম কমলেও রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের মিলগুলোতে কেনাবেচা কমেছে। শনিবার রাজশাহীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে মানভেদে বিভিন্ন চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের আগে যে মিনিকেট চাল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে শনিবার রাজশাহীর সাহেব বাজারে সেই চাল বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা কেজি। ৭৭ টাকা কেজির নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। আটাশ নামের যে চাল দুই সপ্তাহ আগে ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, সেই চাল শনিবার বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজি।

খুচরা চাল ব্যবসায়ী শাহিন আলী বলেন, আড়তে চালের সরবরাহ কম। আড়তদাররা কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা করে বেশি নিচ্ছে। চাল কিনতে আসা রইস উদ্দিন বলেন, আমরা নিুআয়ের মানুষ। দুই কেজি চাল কিনতেই ১২০ থেকে ১২৫ টাকা লাগছে। সাহেব বাজারের চাল ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, দাম বাড়ানোয় আমাদের কোনো হাত নেই। কারণ আমরা পাইকারি দরে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করি। দাম বাড়ার কারণ আড়তদার ও চালকল মালিকরাই ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে রাজশাহী চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।

আমার রাজশাহী
আমার রাজশাহী
নগর জুড়ে বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর