মঙ্গলবার ০৬ জুন ২০২৩ ||
জ্যৈষ্ঠ ২৩ ১৪৩০
|| ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৩
ঝিনুকের পেটে মুক্তা। তাও আবার বিভিন্ন নকশার। এমন মূল্যবান ঝিনুক উৎপাদন করেন রাজশাহীর রুহুল আমিন। উদ্যোক্তা রুহুলের রয়েছে অলঙ্কারে ব্যবহার উপযোগী এমন ৪ হাজার ডিজাইনের মুক্তা। যার গ্রেড ‘এ, বি আর সি’। তবে সম্ভাবনার এই মুক্তাই এখন রুহুলের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। রাজশাহীতে মুক্তা বিক্রির বাজার না থাকায় প্রায় ছয় লাখ টাকার মুক্তা ঘরে পড়ে আছে রুহুলের।
ঝিনুকে মুক্তা চাষী রুহুল আমিন রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার ধূরইল ইউনিয়নের ছোট পালশা গ্রামের বাসিন্দা। রুহুল বাংলাদেশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়নরত। গ্রামে পুকুরে উচ্চ মানের ডিজাইনার মুক্তা তৈরি করতে রুহুল ইমেজ ইমপ্লান্টিং (ছবি রোপন) পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। রুহুল পুকুরে কার্পজাতীয় মাছের সঙ্গে ইমেজ ইমপ্লান্টিং পদ্ধতিতে ঝিনুকের পেটে মুক্তা চাষ করছেন তিনি। পেটে মুক্তা চাষের জন্য দুই লাখ ৩৭ হাজার টাকা খরচে রুহুল প্রস্তুত করেছে দুই হাজার ঝিনুক। যা থেকে পাওয়া যাবে ১০ ধরনের ৪ হাজার ডিজাইনের মুক্তা। এ থেকে রুহুলের আয় হবে প্রায় ছয় লাখ টাকা।
মুক্তা উৎপাদন করেও বিক্রি করতে পারছেন না রুহুল। বিক্রির জন্য রাজশাহীতে ব্যবস্থা না থাকায় আক্ষেপ করে রুহুল আমিন বলেন, আমার কাছে যে মুক্তা আছে, বাজার ভালো থাকলে দাম হবে প্রায় ৬ লাখ টাকা। তবে রাজশাহীতে বিক্রি করার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। আর কারো মাধ্যমে বিক্রি করতে গেলে তিনি দাম দিতে চাচ্ছে না। যে মুক্তার দাম ৬০০ টাকা। তার দাম বলেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। তাই মুক্তাগুলো বাড়িতে সংরক্ষণ করে রেখেছি। বাবা ধান, পানসহ বিভিন্ন ফসল বিক্রি টাকা দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে মুক্তাগুলো পড়ে থাকায় আমার ঢাকা আটকে আছে। খারাপ লাগে বিক্রি করতে পারি না। সরকারের সংশ্লিষ্টারা বিক্রির উপযোগী মার্কেট তৈরি করলে আমাদের মতো লেখাপড়া অবস্থায় উদ্যোক্ত হওয়া মানুষগুলো মুক্তা চাষে ঝুঁকবে।
শুধু রুহল আমিনই নয়, তার দেখে এলাকার বেকারদের মধ্যে মুক্তা চাষের আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তারাও পড়াশোনা বা অন্য কাজের পাশাপশি মুক্তা চাষ করতে আগ্রহী। ছবি রোপণ পদ্ধতি ৮ থেকে ১০ মাসের মধ্যে ঝিনুকের মধ্যে মুক্তা উৎপাদন করা যায়। তবে পুকুরে মাছের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মুক্তা চাষ করা যায়। এতে তেমন কোনো খরচ নেই। তবে ঝিনুকে উৎপাদিক মুক্তার বেশ কদর রয়েছে। এই মুক্তার প্রতিবেশী দেশ ভারতে বেশ চাহিদা রয়েছে।
রুহুল আমিন জানান, ২০২২ সালের জুলাইয়ে পুকুরে কার্পজাতের মছ চাষের করে উদ্যোগ গ্রহণ করি। তারপরে বিভিন্ন এলাকার জেলেদের মধ্যেমে ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। ঝিনুক সাধারণত মুক্তা উৎপন্ন করে খাদ্যের কণা বা পরজীবী, তাদের আবরণে, যেখানে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি সঞ্চিত থাকে। ঝিনুক এক ধরণের কার্বনেট খনিজ এবং প্রোটিন নিঃসরণ করে যা ন্যাক্র নামে পরিচিত একটি উপাদান তৈরি করে, যা একটি মুক্তার নিউক্লিয়াস। মলত্যাগের সাথে মুক্তার আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ন্যাক্রের স্তরগুলো যোগ করা হয়। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে ফসল কাটার জন্য মুক্তার পর্যাপ্ত আকারে পৌঁছাতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ইমেজ ইমপ্লান্টিং কৌশলটি সময়কালকে কমিয়ে আট মাস করে।
রুহুল বলেন, আমি ইউটিউব থেকে মুক্তা চাষের কথা শুনেছি এবং তারপর মিঠা পানির মুক্তা বিশেষজ্ঞ ড. নজরুল ইসলামের কাছে কিছুদিন প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এরপর পুকুরে ২ হাজার ঝিনুক, দড়ি, বোতল ও ক্রেটসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে এনে প্রস্তুত করি। গত বছরের জুলাই মাসে ঝিনুকের ম্যান্টেল টিস্যুর ভিতরে কীভাবে ছবি রোপণ করতে হয় সে সম্পর্কে জানি। এই পদ্ধতির জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মোম এবং ক্যালসিয়ামের মতো বিরক্তিকর উপাদানগুলো এমনভাবে ঢোকানো প্রয়োজন যা কৃত্রিমভাবে মুক্তার বিকাশের সময় ন্যাক্রে নিঃসরণকে প্রভাবিত করে যাতে এটি একটি নির্দিষ্ট আকার নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি ২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দামের ৪ হাজারটি ছবি রোপণ করেছি। যা উচ্চমানের ডিজাইনার মুক্তা। এর প্রতি পিস ৭০০ টাকা থেকে নিম্নমানের ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনি তার পুকুর থেকে প্রায় ১ লাখ ২ হাজার টাকা বার্ষিক লাভ পান, যেখানে রুই, কাতলা এবং অন্যান্য কার্প প্রজাতি রয়েছে।
আশ্রয় এনজিও ক্ষুদ্রঋণ পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘কারিগরি সহয়াতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। দীঘ ১০ চেষ্টার পরে সে সফল ভাবে মুক্তা চাষ করতে পেড়েছেন।’
নগরীর ঘোড়ামারা এলাকার অঞ্জুলী জুয়েলার্সের বিক্রেতা অরূপ সরকার অভি বলেন, রাজশাহীতে ঝিনুকের ভেতরে থানা মুক্তার তেমন চাহিদা নেই। কখনও কোনো ক্রেতা ঝিনুকের মুক্তার অর্ডার দিলে তখন আমরা করে দেয়। তবে এই মুক্তা কয়েকটি গ্রেডের হয়। তবে না দেখে দামের বিষয়ে বলা সম্ভব না। মৎস্য অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশে মুক্তা উৎপাদন করা হচ্ছে। কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে ঝিনুক সংগ্রহ করে মুক্তা উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে বৈজ্ঞানিকভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে মুক্তা উৎপাদন করা হচ্ছে।
মোহনপুর উপজেলার ধূরইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যদি সে ঝিনুক থেকে মুক্তা উৎপাদন করে থাকে তাহলে ভালো। লেখাপড়ার পাশাপশি সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সে বেকার থাকছে না। অনেক ভালো উদ্যোগ।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহ্রা বলেন, ঝিনুক থেকে মুক্তা উৎপাদনের বিষয়টি কেউ কখনও আমাকে বলেনি। তাবে বিষয়টি আমি দেখব।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়