শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোকে ঢালাওভাবে রাজনৈতিক বলে চিহ্নিত করার প্রয়াস চালান। অবশ্য কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকেই কেউ কেউ রাজনৈতিক বলে অভিহিত করেছিলেন, সেখানে তারেক রহমানের বিচারকে রাজনৈতিক বলায় আশ্চর্যের কিছু নেই। এই সংবাদে নিয়ে আসা হয়েছে তারেকের অপকর্মের বিভিন্ন চিত্র।
নিয়মের তোয়াক্কা না করেই তারেকের প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল– তারেক রহমানের ব্যবসায়িক জীবনের শুরু ১৯৯১ সালে। এরশাদ প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ছাড়া আয়ের বৈধ কোনো উৎস জানা না গেলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তারেক প্রথম আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছিলেন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে। অজ্ঞাত ১২ জন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকাকে উৎস হিসেবে দেখিয়ে পূর্ববর্তী দুটি অর্থ বছরের (১৯৮৯, ৯০) আয়কর রিটার্ন দাখিল করে ৪৩ লাখ টাকা হোয়াইট মানি হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত নৌপরিবহনের দুটি ব্যবসা ছাড়া আরো অন্তত ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেন, যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব ছিল না। তবে ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে আয় দেখানো হয়। এই আয়ের উৎস কি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারেকের ব্যবসার অংশীদার ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। ১৯৯৪ সালে মামুনের ছদ্মনামে শিল্প ঋণ সংস্থার প্রতিষ্ঠিত ১৬ কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণ করা তাজ ডিস্টিলারিজ ক্রয় করেন নামমাত্র মূল্যে। এভাবে শুরু হয় তারেকের ব্যবসায়িক জীবন।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তারেকের একক কর্তৃত্ব— অনিয়ম ও সুনির্দিষ্ট উৎসবহির্ভুত আয় থাকলেও ২০০১ সাল পর্যন্ত তারেক রহমানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম একটি নির্দিষ্ট সীমায় সীমাবদ্ধ ছিল। ২০০১-এর নির্বাচনের পর বিএনপি সরকারের একক কর্তৃত্বের অধিকারী হয়ে ওঠেন তারেক রহমান। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হয় হাওয়া ভবন। তারেক, মামুন, খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার ও শামীম ইস্কান্দারসহ গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কাছে যেনতেনভাবে টাকা উপার্জনই হয়ে ওঠে মুখ্য। রহমান শিপার্স থেকে ক্রমে প্রতিষ্ঠা হতে থাকে রহমান গ্রুপ, ওয়ান গ্রুপ, রহমান নেভিগেশন, চ্যানেল ওয়ান, ডান্ডি ডায়িং, খাম্বা লিমিটেড, এডভান্স এড, আর কে গ্রুপ, টিএম এন্টারপ্রাইজ, ইউনিটেক্স এ্যাপারেলস, ক্রিমেন্টাইন লিমিটেড, ক্রোনোটেক্স লিমিটেড, তুরাগ ফিশারিজ, তাজ ডিস্টিলারিজ, দৈনিক দিনকালসহ নানা প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন খাত থেকে জিয়া পরিবারের ঘুষ নেয়ার পরিমাণ— জিয়া পরিবার কতটি খাত থেকে মোট কত টাকা গ্রহণ করেছিল এবং কোথায় সম্পদ গড়েছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার উপায় নেই। উদাহরণস্বরূপ তাজ ডিস্টিলারিজ ক্রয় করা হয়েছিল আবদুল্লাহ আল মামুন নামে। এতে তৎকালীন সময়ের হিসাবে সরকারের ক্ষতি হয় অন্তত ১১ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠা করা প্রতিটি কোম্পানির বিপরীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ নেয়া হয়েছিল বিপুল অঙ্কের টাকার। তখন একাউন্ট হোল্ডারদের পরিচয় চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল। তাই বেনামে যে অর্থ উপার্জন করা হয়েছে তার হিসাব পাওয়া যায়নি। আবার নির্বাচনে মনোনয়ন ও বিভিন্ন লাভজনক পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হতো, যার হিসাব পাওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া যেসব ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়েছিল তাদের সবাই মুখ খোলেননি। জানা যায়, হাওয়া ভবনের একজন কর্মচারীও তৎকালীন সময়ে কোটিপতি বনে গিয়েছিল। অতএব তারেক রহমানের দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন। কিন্তু তারপরও আর্থিক যেসব তথ্য প্রমাণ ও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে উপলব্ধি করা যায় কেন বাংলাদেশ পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এফবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে যে, তারেক ও মামুন তাদের সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্মাণ কন্সট্রাকশন লিমিটেডের পরিচালক এবং চীনের হারবিন ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশনের এ দেশীয় এজেন্ট খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ নিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের মাধ্যমে তারেক রহমানের ১২ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা সক্ষম হয়েছিল। সিঙ্গাপুরের সিটিএনএ ব্যাংকে পাচারকৃত ২১ কোটি টাকার মধ্যে ৮ কোটি টাকা দেশে ফেরত আনা হয়। একইভাবে লন্ডনের Nat West ব্যাংকে প্রায় ছয় কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।
দুবাই, মালয়েশিয়া ও বেলজিয়ামে অর্থ পাচার— বেলজিয়ামে তারেকের সম্পত্তির পরিমাণ ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, মালয়েশিয়ায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার এবং দুবাইতে রয়েছে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের বাড়ি (বাড়ির ঠিকানা : স্প্রিং ১৪, ভিলা : ১২, এমিরেটস হিলস, দুবাই)।
সৌদি ও বারমুডায় টাকা পাচার— সৌদি আরবে মার্কেটসহ অন্যান্য সম্পত্তির কিছু বিবরণ পাওয়া যায় প্যারাডাইস পেপারসে। প্যারাডাইস পেপারের সূত্রে জানা যায়, তারেক জিয়া ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে কেইম্যান আইসল্যান্ড এবং বারমুডায় ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন। প্যারাডাইস পেপার কেলেঙ্কারিতে তারেক রহমান ছাড়াও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান, বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, তার স্ত্রী এবং বেগম জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানের নাম উঠে এসেছে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদেশে টাকা পাচারসহ অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। এখানে আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের খণ্ডচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তুলে ধরা হয়নি জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা, দেশকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করার অপচেষ্টা, শত শত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে মদদদান, কণ্ঠরোধ ও দলীয় কর্মীদের দ্বারা বিরোধী মত দমনের জন্য নির্লজ্জভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার পরিসংখ্যান।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়