মঙ্গলবার ০৬ জুন ২০২৩ ||
জ্যৈষ্ঠ ২৩ ১৪৩০
|| ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৩
লাভজনক হওয়ায় পবার চরাঞ্চলেও বাদাম চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। কিন্তু বীজ না পাওয়ায় তাদের বাদামচাষ ব্যাহত হচ্ছে। এতে তারা বীজ নিশ্চিত করতে আবেদন করেন বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমূখী কর্তৃপক্ষকে।
গতকাল মঙ্গলবার পবা উপজেলার হরিপুরের চরমাঝাড়দিয়ারে চিনা বাদামের মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে চাষিরা এ আবেদন করেন।
এদিন ‘বরেন্দ্র এলাকায় উচ্চমূল্য অপ্রচলিত ফল ও ওষুধি ফসল চাষাবাদ জনপ্রিয়করণ প্রকল্প’এর আওতায় ফসলের প্রদর্শনী প্লটের মাঠ দিবস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পবা জোনের সহকারি প্রকৌশলী এএসএম দেলোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেন্দ্র এলাকায় উচ্চমূল্য অপ্রচলিত ফল ও ওষুধি ফসল চাষাবাদ জনপ্রিয়করণ প্রকল্প পরিচালক মো. সেলিম কবির।
উপসহকারি প্রকৌশলী মো. রাহাত পারভেজের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হরিপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল, পবা উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান, পবা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সরকার দুলাল মাহবুব, হরিপুর ইউপি সদস্য হুমায়ুন কবির।
উপস্থিত ছিলেন পবা জোনের উপসহকারি প্রকৌশলী আবুল কাশেম ও উপসহকারি প্রকৌশলী শরীফ পাঠান, পবা জোন পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান, কার্যসহকারি মো. শাহজামাল, অফিস সহায়ক সুনিল কুমার, কৃষক মতিউর রহমান, কামাল হোসেন, সাবান মন্ডল, জিয়া উদ্দিন, আলহাজ্ব মো. শামসুদ্দিনসহ অত্র এলাকার বাদাম চাষে আগ্রহী চাষিবৃন্দ।
বিএমডিএ থেকে জানা গেছে, বাদাম চাষে সত্যিই কৃষকদের আগ্রহ আছে। তারা এতদিন পদ্মার চরে পুরানো জাতের বাদাম চাষ করতো। তাতে তেমন ফলন হতো না। বাদাম চাষ লাভজনক করতে বিএমডিএ বারি-৯ জাতের বাদামের (চিনা বাদাম) বীজ কৃষকদের সরবরহ করেছে। চাষাবাদে লাভজনক হওয়ায় গেল দুই বছরের ব্যবধানে ব্যাপকভাবে বেড়েছে বাদাম চাষ। যদিও বিএমডিএ কয়েক বছর থেকে বাদামের বীজ সরবরহ করে আসছে কৃষকদের মাঝে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বলেন, বিএমডিএ এর উদ্যোগে বর্তমানে পদ্মার চরে পবার হরিপুরের মাঝারদিয়াড় বারি-৯ জাতের বাদাম চাষ হচ্ছে। প্রণোদনার এই বীজ চাষীদের সরবরহ করা হয়। এই বীজ বর্তমান সময়ে অধিক ফলনশীল ও লাভজনক। এবারে এই বীজ ছাড়াও বরেন্দ্র এলাকায় উচ্চমূল্য অপ্রচলিত ফল ও ওষুধি ফসলের গাছ ও বীজ সরবরাহ করা হবে। তবে এই চরে যেহেতু বাদাম চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশী, সেইহেতু আরো বেশী বীজ সরবরাহ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের একইঞ্চি কৃষি জমি পড়ে থাকবে না-প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার বাস্তবায়নে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পবা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী এএসএম দেলোয়ার হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষের খচর হয় ৭ হাজার টাকা। তাতে বিঘায় ফলন হয় ৮ মন। আর হেক্টর প্রতি ফলন ৫৫-৬০ মন। সবখরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা কৃষকের লাভ হয়ে থাকে। পদ্মার পতিত চরের জমিতে কৃষকরা এই বাদামের চাষ করেছে। ফলনও ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, চরকে সবুজায়ন ও তৃণমুলের চাষিদের স্বাবলম্বি করার লক্ষে বিএমডিএ’র পক্ষ থেকে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পাত কুয়া স্থাপন করেছে। এছাড়াও পদ্মা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে চাষিদের ক্ষেতে সেচের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
বাদাম চাষী মতিউর রহমান ও কামাল হোসেন জানান, ‘বাদাম চাষে খরচ কম। পদ্মার পতিত জমিতে বাদামের চাষ করে থাকি। বিএমডিএ এর দেওয়া বাদামের ফলন ভালো, দানাও ভালো। এবছর আমরা ১২ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছি। আগে আমরা যে জাতের বাদাম চাষ করতাম তাতে ফলন কম হতো। কিন্তু এই বাদামে ফলন ভালো। এতে করে আমরা ভাল লাভ পাচ্ছি। আমাদের মত অনেকেই বাদাম চাষে আগ্রহী হলেও বীজের অভাবে তারা করতে পারে না’।
কৃষক সাবান মন্ডল ও কৃষক আলহাজ্ব শামসুদ্দিন বলেন, আগে সেচের অভাবে চরাঞ্চলের মানুষ যেখানে কোন ফসল ফলাতে পারতা না। সেখানে বিএমডিএ’র সেচের মাধ্যমে পদ্মার চরে এখন নানান সফল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, চরাঞ্চলে মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন হচ্ছে। তাই আমাদের লক্ষ্য এখন কোন জমি যেন সেচের অভাবে পড়ে না থাকে। সে কারণে বিগত দিনের চেয়ে এবার পদ্মার চরে বাদাম বেশী জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এবছর ৫২৪ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। এবিষয় নিশ্চিত করে উপসহকারি কৃষি অফিসার রোকন আহমেদ জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাদামের চাষ হয় বাঘা উপজেলায়। পবা উপজেলায় হয়েছে ৪০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে পবা উপজেলায় এবারে ১০ হেক্টর বেশী জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়