মঙ্গলবার ০৬ জুন ২০২৩ ||
জ্যৈষ্ঠ ২৩ ১৪৩০
|| ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৩
ঝড়ে ঝরে পড়া আমের মূল্য পাচ্ছে না চাষীরা। অনেকটা বাধ্য হয়ে পানির দরে তারা আম বিক্রি করছেন। এরমধ্যে রাজশাহীর বাঘায় ঝড়ে ঝরে পড়া আম ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। উপজেলার আড়ানী পৌরসভার চকরপাড়া ও গোচর মোড়ে বুধবার (১৭ মে) এই আম বিক্রি হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, জৈষ্ঠ্যের শুরুতে প্রখর রোতে আমের বোটা নরম হয়ে গেছে। এরপর ঝড়ে আম ঝরে গেছে। এই আম গ্রামের সাধারণ মানুষ ও বাগান মালিককরা কুড়িয়ে উপজেলার আড়ানী পৌরসভার চকরপাড়া ও গোচর মোড়ে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।
উপজেলার আড়ানী গোচর গ্রামের বাগান মালিক সেলিম উদ্দিন বলেন, আমার আমবাগানে প্রতিটি গাছে পরিমাণ মত আম আছে। প্রখর রোদ ও ঝড়ে আম ঝরে গেছে। এই আম গ্রামের মানুষ কুড়িয়ে ৪-৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে। উপজেলার পাকুড়িয়ার জোতনশী গ্রামের আম ক্রেতা ইয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা বরাবর ঝরে পড়া আম কিনে ঢাকার আবদুল্লাহপুর চালান করি। এই আম ৫ টাকা দরে প্রতিকেজি হিসেবে ক্রেতাদের কাছে থেকে ক্রয় করেছি।
আড়ানী গোচর গ্রামের আম বিক্রেতা রাসু মন্ডল বলেন, আমি বাগান পাহারা দিয়ে থাকি। এখনো বাগান মালিক বাগানে নিয়োজিত করেনি। তবে মালিকরা মাচা তৈরি করার জন্য বলেছেন। সেই মোতাবেক কিছু কিছু বাগানে পাহারা দেয়ার জন্য মাচা তৈরি শুরু করেছি। তবে মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎ ঝড়ে যে আম ঝরে পড়ছে, সেগুলো কুড়িয়ে বিক্রি করছি। আমি সাড়ে ৩ মণ আম ৪ টাকা কেজি হিসেবে ৪২০ টাকায় বিক্রি করেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, প্রচন্ড রোদের কারণে আমের বোটা নরম হয়ে যাওয়ায় একটু বাতাসেই আম ঝরে যায়। এই আম বাজারে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলায় ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১৩ দশমিক ২০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই ঝড়ে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে যে আম ঝরে পড়েছে, সেই আমের ন্যায্য দাম পাচ্ছেনা বাগান মালিককরা। উপজেলায় খাদ্য শস্যের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে আম প্রধান। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উপজেরার আমের সুখ্যাতি সবচেয়ে বেশি।
এদিকে কালবৈশাখী ঝড়ে নাটোরের বাগাতিপাড়ার বাগানের কয়েকশ মণ আম ঝরে পড়ে গেছে। সেই আম বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২ টাকা কেজিতে। এ অবস্থায় চরম হতাশায় পড়েছেন স্থানীয় আম চাষিরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২৯টি মৌজায় ৭৫০ হেক্টর জমির আম, ১৬ হেক্টর জমির লিচু, ৫২৫ হেক্টর জমির পাট ও ১০৫ হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ ২৫ কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
গতকাল বুধবার (১৭ মে) বিভিন্ন বাগান ও আড়তসহ মোড়ে মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, ঝরে পড়া আম কেনার ধুম পড়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতি কেজি আম কিনছেন মাত্র ২ টাকা কেজি দরে। আকারে ছোটগুলো কিনছেন দেড় টাকা কেজি দরে।
চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই তীব্র খরায় আম নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। গাছের গোড়ায় রস না থাকায় বোঁটা শুকিয়ে গুটি ঝরে পড়া শুরু হয়। এর মাঝে মঙ্গলবার আবার আঘাত হানল কালবৈশাখী ঝড়। সব মিলিয়ে কয়েকশ মণ আম ঝরে গেছে। বেশিরভাগই ল্যাংড়া, ফজলি ও হিমসাগর জাতের।
গালিমপুর প্রামের চাষি গোলাম কিবরীয়া বলেন, আমার ছয় বিঘা বাগানে প্রায় পাঁচ মণ আম ঝরে গেছে। দুই টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। প্রতি বছর কীটনাশকের দাম দ্বিগুণ হচ্ছে; কিন্তু কাঁচা আমের কেজি ২ টাকাই আছে।
একই এলাকার আম ব্যবসায়ী আম্মাদ আলী জানান, গ্রামে ঘুরে ঘুরে ঝরে পড়া আম ৮০ টাকা মণ দরে কিনেছেন। এসব আম প্রতি মণে ২০ থেকে ২৫ টাকা লাভে আড়তদারের কাছে বিক্রি করবেন। আড়তে এসব আমের চাহিদা না থাকায় দাম কম বলে জানান তিনি।
ফাগুয়াড়দিয়াড় এলাকার আম চাষি আব্দুল আজিজ বলেন, ঝরে পড়া আম আড়তে এনে ২-৩ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এতে গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচই উঠবে না। এখানে সংরক্ষণাগার থাকলে এতটা লোকসান হতো না।
তমালতলা বাজার এলাকার আড়তদার বাজু মন্ডল বলেন, ফড়িয়াদের কাছে থেকে ১০০-১১০ টাকা মণ দরে ঝরে পড়া আম কিনছি। ঢাকায় পাঠাব। কিন্তু আমের চেয়ে পাঠানোর খরচই বেশি। ট্রাক ভাড়া ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার পর এই আম বিক্রি করে লাভ করা কঠিন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. ভবসিন্ধু রায় বলেন, ঝড়ে আমসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ আম চাষিদের তালিকা করা হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে তাদের সহযোগীতা করা হবে।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়