মঙ্গলবার ০৬ জুন ২০২৩ ||
জ্যৈষ্ঠ ২৩ ১৪৩০
|| ১৭ জ্বিলকদ ১৪৪৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৬ মে ২০২৩
উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে রাজশাহী। নগরীর অলিগলি সর্বত্রই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। মানুষের জীবনমানেরও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আর স্বল্প সময়ে নগরীর এই আমূল পরিবর্তনের কারিগর নগরপিতা এএইচএম কামারুজ্জামান লিটন। তাঁর হাত ধরে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ২০০৯ সাল থেকে পরোক্ষ কর্মসংস্থানে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
বিগত ৫ বছরে উন্নয়ন কর্মকা-ের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরে লক্ষাধিক মানুষের পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। ব্যক্তিগত ও বাইরের বিনিয়োগও বেড়েছে। আর এই বিনোয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি করতে নগরপিতার আন্তরিকতা ও দরকষাকষির সুফল পাচ্ছে নগরবাসী।
আরডিএ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী নগরীতে ২০০৯ সালের আগে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদনের জটিলতা ছিলো। ১০ তলা ভবন বলতে ছিল নগরীর সিএ্যান্ডবি মোড় এলাকায় জীবন বীমা করপোরেশন ভবনটি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ কর্মদক্ষতায় সেই জটিলতা দূর করেন। এরপর থেকে বহুতল ভবন গড়ে উঠতে শুরু করে রাজশাহী মহানগরীতে। আর রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ বিনিয়োগ পরিবেশে আমূল পরিবর্তনের কার্যকর উদ্যোগ শুরু হয়। গত ৫ বছরে নগর চিত্রই পাল্টে গেছে। নির্মাণ শিল্পের বিপ্লব শুরু হয়েছে। এতে ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
আরডিএ সূত্রে আরও জানা যায়, রাজশাহীতে বর্তমানে ৭ তলার উপরে শতাধিক ভবন নির্মিত হয়েছে। অনেক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান আছে। একেকটি ভবনকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে। ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আর ২০০৯ সালের পর রাজশাহীর নির্মাণ শিল্পকে কেন্দ্র করে টাইলস ইন্ড্রাস্ট্রি, ইলেকট্রনিক্স, ফিটিংস ম্যাটেরিয়ালসসহ আনুসাঙ্গিক প্রত্যেকটি সেক্টরে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক লেনদেন বেড়েছে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট ইউনিটের ব্যবসার বিস্তার ঘটেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। যাদের হাত ধরে কর্মসংস্থানের আওতা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। এছাড়া রাজশাহীতে প্রতিনিয়তই উন্নয়ন কাজ চলমান। এতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবেও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (আরডিএ) এর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে রাজশাহীর উন্নয়নের ভিত রচনা হচ্ছে। রাজশাহীতে বর্তমানে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বাইরের বিনিয়োগ বাড়ছে। নির্মাণ শিল্পেই সংশ্লিষ্ট সেক্টরগুলোতে ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। একেকটি অবকাঠামো কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর প্রতিনিয়তই কাজ চলমান থাকায় শ্রমিক হিসেবেও অনেক মানুষ কাজ করছে।
বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টি ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থানে গত ৫ বছরে দৃশ্যমান ও গুনগত উভয় পরিবর্তনই এসেছে। উন্নয়নের ছোঁয়ায় নগরীতে দৃষ্টিনন্দন প্রশস্ত সড়কই শুধু হয় নি; এটিকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের বিনিয়োগ বেড়েছে। নগরীতে গড়ে উঠছে বিভিন্ন ব্যান্ডের শো-রুম। নতুন নতুন প্রোডাক্ট ও সেবার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারাও ফাস্টফুড থেকে শুরু করে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ডিজিটাল সার্ভিসসহ নতুন ইনোভেশন নিয়ে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। যেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় কর্মসংস্থানই হচ্ছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাষ্ট্রির মাধ্যমেও নতুন নতুন উদ্যোক্তা যোগ হচ্ছেন। ২০২১ সালে চেম্বারের সদস্য হওয়ার পর পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সংগঠটির একমাত্র নারী পরিচালক ইশরাত জাহান।
তিনি বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়েই নারী উদ্যোক্তা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিগত ২ বছরে রাসিকের নেয়া ব্যাবসায়ী বান্ধব পরিবেশ খুবই ইতিবাচক। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হলে তার প্রতিষ্ঠান এতো বড় হতো না। তিনি নাদিম ফিড, জুট মিল, কোল্ডস্টোরেজ নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। ২ বছরে এর আকার অনেকটাই বেড়েছে। করোনার ক্রান্তিকাল মাড়িয়ে পোল্ট্রিফার্মও গড়ে তুলেছেন। যেখানে ৫ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু জানান, একটা সময় রাসিকের পলিসিগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়ীরাই লাভবান হয়েছেন। দলবাজি ছাড়া কোনো কাজই করে নি। এখন সেই অবস্থা আর নেই। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছেন। অধিক কর্মসংস্থান হয়; এমন পরিকল্পনাগুলোকে এগিয়ে নিয়েছেন। এতে পরোক্ষভাবে ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর দৃশ্যত ও আলোচিত নগর রাস্তাগুলোকে কেন্দ্র করেই আশেপাশের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের চিত্রই বদলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এখন নারীরাও কর্মসংস্থানে পিছিয়ে নেই। এখন গৃহবধুরাও অবসর সময়ে নিজস্ব আয়ের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। খাবার, হাতের কাজসহ অনলাইন ও অফলাইনে সেবা দিচ্ছেন। এই যে সুযোগগুলো তৈরি করা। এটিও রাসিকের পলিসি বাস্তবায়নের ফলাফল।
আসন্ন রাসিক নির্বাচনকে সামনে রেখেও বাস্তবধর্মী কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়ে কর্মসংস্থানকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আগামীতে বিজয়ী হলে ৫০ হাজার তরুণের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
কর্মবান্ধব আধুনিক রাজশাহীর রূপকার মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এটা মানতেই হবে যে, রাসিক প্রত্যক্ষভাবে তেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে নি। তবে কর্মসংস্থানের জন্য যে সকল জায়গায় কাজ করা দরকার, যেটা টেকসই হয়, সেই কাজগুলোই করার চেষ্টা করেছি। যার দৃশ্যমান সুফল নগরবাসী পাচ্ছে। তবে বেকারত্বের সমস্যা একেবারেই নেই এমনটা না। তাই এবার কর্মসংস্থানকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আসন্ন রাসিক নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সেই অসম্পূর্ণ কাজটিও করতে চাই।
মেয়র লিটন বলেন, দুই মেয়াদে আমি মেয়র থাকাকালীন গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটির জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন পরপর চার বার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। যা সময় উপযোগী টেকসই উদ্যোগের ফসল। বিসিক শিল্পনগরী-২ ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে। আইটি সেক্টর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন ও জনকল্যানমূলক কাজ করেছি। অনেক কাজ চলমান আছে। আগামীতে রাজশাহী সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও বাসযোগ্য শহরই নয়: কর্মচঞ্চলও হবে। এই নগরী শুধু দেশসরাই নয়: এশিয়ার মধ্যে অন্যতম মডেল শহর হিসেবে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়