ব্রেকিং:
সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিওর এক মহিলা কর্মী আহত হয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী "তারেক-খালেদাকে ‘খুনি’ বলা রফিক কালের কণ্ঠেই টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ রাজশাহী মহানগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ জন তানোরে ভুয়া এনজিওর নামে ৩৪ লাখ টাকার প্রতারণা মামলা বিধবা নারীকে পেটানোর অভিযোগ সেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে
  • বৃহস্পতিবার   ১৯ জুন ২০২৫ ||

  • আষাঢ় ৫ ১৪৩২

  • || ২২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

আমার রাজশাহী
সর্বশেষ:
সড়ক দুর্ঘটনায় এনজিওর এক মহিলা কর্মী আহত হয়েছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্প-পাকিস্তান সেনাপ্রধানের বৈঠক তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী "তারেক-খালেদাকে ‘খুনি’ বলা রফিক কালের কণ্ঠেই টিউলিপসহ রাজউকের ৯ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব তলব করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮ রাজশাহী মহানগরীতে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ জন তানোরে ভুয়া এনজিওর নামে ৩৪ লাখ টাকার প্রতারণা মামলা বিধবা নারীকে পেটানোর অভিযোগ সেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে
৯৩

‘আলো দূষণ’-এর দায়ে বিদ্ধ রাজশাহীতে মুগ্ধতা ছড়ানো ঝলমলে বাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৫  

রাত নামলেই সড়কবাতির মনোমুগ্ধকর আলোয় ঝলমল করে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন সড়ক। রাতের নিস্তব্ধতায় এতে মুগ্ধ হন পথচারী, ভ্রমণপিপাসু ও সৌন্দর্যপ্রেমীরা। ‘আলোর শহর রাজশাহী’ বলে প্রশংসা করেন নগর ব্যবস্থাপনাকে। তবে এই আলো নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবাদীরা। তাদের দাবি, অপরিকল্পিত আলোকায়নে রাজশাহীতে হচ্ছে ‘আলো দূষণ’।

তাদের ভাষ্য, অতিরিক্ত ও ঊর্ধ্বমুখী কৃত্রিম আলোর কারণে রাজশাহীর রাতের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে নিশাচর প্রাণি ও পরিযায়ী পাখিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রাতের প্রাকৃতিক পরিবেশে চলাফেরা করা এসব প্রাণি কৃত্রিম আলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না। এতে দিকভ্রান্ত হয়ে তারা পথ হারিয়ে ফেলছে। প্রাণিচক্রের ভারসাম্যে তৈরি হচ্ছে বড় ধরনের সমস্যা। আলো দূষণের ফলে নিশাচর প্রাণি কমে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।

প্রকৃতি ও প্রাণি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাতে পরিযায়ী পাখিরা প্রাকৃতিক তারা বা চাঁদের আলোয় পথ অনুসরণ করে চলাফেরা করে। রাজশাহী শহরের অতিরিক্ত আলোর সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছে না নিশাচর প্রাণি ও পরীযায়ী পাখিরা। বিশেষ করে ঊর্ধ্বমুখী লাইটের আলো তাদের গতিপথ বদলে দিচ্ছে। ফলে শহর তো বটেই, শহর লাগোয়া পদ্মার পাড় এমনকি নদীর চরেও কমে যাচ্ছে নিশাচর প্রাণি ও পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা। তাদের মধ্যে আছে বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা, বাদুড়, পানকৌড়ি, শালিক, সান বার্ড, চখাচখিসহ নানা জাতের পাখি। ঊর্ধ্বমুখী আলোয় দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে তারা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রকৌশল শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কেই দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে শহরের কাশিয়াডাঙ্গা মোড় থেকে বিলশিমলা রেলক্রসিং পর্যন্ত চার দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কটিতে ১৭৪টি দৃষ্টিনন্দন পোলে বাসানো হয়েছে ৩৪৮টি আধুনিক এলইডি বাল্ব। 

উপশহর মোড় থেকে দড়িখরবোনা, কাদিরগঞ্জ, মহিলা কলেজ, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে সোনাদিঘী মোড় এবং মালোপাড়া মোড় থেকে রানীবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে মোট ৯৬টি ডেকোরেটিভ পোলে ৯৬টি দৃষ্টিনন্দন এলইডি সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে নাদের হাজির মোড় পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের আইল্যান্ডে ৮৭টি পোলে বসেছে ১৭৪টি অত্যাধুনিক এলইডি বাল্ব। বন্ধ গেট থেকে সিটিহাট পর্যন্ত সড়কে বসেছে ২১৮টি এলইডি বাল্ব।

সবচেয়ে ক্ষতি করছে শহরের কল্পনা সিনেমা হলের মোড় (স্বচ্ছ টাওয়ার) থেকে তালাইমারি এবং তালাইমারি থেকে ভদ্রা হয়ে রেলগেট ও সাহেববাজার থেকে কোর্ট এলাকা পর্যন্ত সড়কে থাকা অসংখ্য নান্দনিক সড়কবাতি ‘রাজমুকুট’। প্রতিটি পোলের মাথায় লাগানো হয়েছে ১৩টি আধুনিক লাইট। ঝাড়বাতির মতো দেখতে ঊর্ধ্বমুখী লাইটগুলো ‘রাজমুকুট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। আগে প্রতিটি পোলের প্রতিটি লাইটই সারারাত জ্বলত। আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিদ্যুতের বিল কমাতে একটি পোল পর পর লাইট জ্বালানো হচ্ছে।

তারপরও অতি উচ্চ রোশনাই সমৃদ্ধ এসব আলোর কারণে পাখি ও নিশাচর প্রাণিদের সংখ্যা কমেছে বলে জানান পাখিপ্রেমী হাসনাত রনি। তিনি বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘ সময় ধরে পাখি নিয়ে কাজ করছি। গত কয়েকবছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী আলোর কারণে পাখির সংখ্যা অনেক কমে যাচ্ছে। বক, নিশিবক, পানকৌড়ি, পেঁচা এরা রাতে ওড়াউড়ি করে। এদের চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট গতিপথ আছে। কিন্তু আলোর কারণে তারা দিকভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবনধারা বদলে যাচ্ছে।’’

রনি বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও পদ্মা নদী ও তার আশেপাশের চরে প্রচুর পাখি পাওয়া যেত। চরগুলো এখন ফাঁকা। সরালি, বালিহাঁস, পাতিসরালি, ঘুঘু- এরা নদীর চরে ছিলো ঝাঁকে ঝাঁকে। গত দুই বছর ধরে আমার চোখে পড়েনি। এমনকি, পদ্মার নদীর চরে হাঁস ছিলো ঝাঁকে ঝাঁকে। এখন হাঁসগুলোও দেখা যায় না।’’

 

তিনি আরও বলেন, ‘‘বার হেডেড গুজ একমাত্র পাখি যে এভারেস্টের ওপর উঠতে পারে। এরা পরিযায়ী পাখি। এই পাখি একটা সময় পদ্মার চরে পাওয়া যেত। এখন নেই। কাজলা, মাজারদিয়া চরে পানকৌড়ি, রেড শ্যাংক, গ্রিন শ্যাংক, লাল পাপিউ দেখতে পাওয়া যেত। সেগুলোও নেই।’’

একই ধরনের কথা বলেন ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার আসাদুজ্জামান জুয়েল। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১১ প্রজাতির পেঁচা আছে এবং এগুলোর বেশিরভাগই রাজশাহী শহরেই পাওয়া গেছে। ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর পেঁচা নিয়ে কাজ করতাম। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এই পেঁচাগুলো দেখতে পাচ্ছি না।’’

 

তিনি আরও বলেন, ‘‘পেঁচা রাতে খাবার সংগ্রহ করতে বের হয়। প্রাকৃতিক আলোয় তারা চলাচল করে। কিন্তু শহরের এই কৃত্তিম আলোর সঙ্গে তারা খাপ খাওয়াতে পারছে না। ফলে তাদের প্রজননের হারও কমে যাচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে।’’

শালিকের মতো সাধারণ পাখিও কমে যাচ্ছে জানিয়ে জুয়েল বলেন, ‘‘আমাদের দেশে সাধারণত ১১৪ প্রজাতির পাখি আছে। বেশিরভাগই রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেখা যেত। কিন্তু এখন অনেক কমে গেছে। এমনকি কাক ছিলো রাজশাহীর অন্যতম পরিচিত পাখি। এখন কাকের সংখ্যাও অনেক কমে এসেছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না টিয়া, চখাচখি, সান বার্ড। শালিকের মতো পাখিও কমে গেছে।’’

বিশ্ব পরিব্রাজক তারেক অনু বলেন, ‘‘হিমালয় থেকে অনেক পাখি পদ্মার পাড় ধরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করে। তবে এই কৃত্রিম আলো তাদের যাতায়াতে সমস্যা তৈরি করছে। কারণ, শহরে এমন আলো দেওয়া হয়েছে যেগুলোর আলো উপরের দিকে যাচ্ছে। ফলে নিশাচর ও পরিযায়ী পাখি স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। তাই দিন দিন পাখিদের সংখ্যা কমেছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে পাখিদের, এটা গবেষণা করে বের করার মতো অবস্থায় আমরা এখনও পৌঁছাইনি। এটা নিয়ে গবেষণাও দরকার।’’

তার মতে, লাইটের নিম্নমুখী হলে পাখিদের সমস্যা হবে না। শহরে এখন যে ঊর্ধ্বমুখী আলো আছে এর উপরে যদি শেড দেওয়া যায়, তাহলে অসুবিধা হবে না।

আলো দূষণ কমানোর তাগিদ দিয়ে তারেক অনু বলেন, ‘‘সারা পৃথিবীতে এখন আলো দূষণ কীভাবে কমানো যায় সেই চেষ্টা চলছে। নিউইয়র্ক এবং লন্ডনে বিভিন্ন জায়গায় গবেষণা হয়েছে পাখিদের নিয়ে। সেখানেও দেখা গেছে আলোর কারণে পাখিদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে ৫২টি ন্যাশনাল পার্ক করা হচ্ছে যেগুলোতে আলো নেই। আমাদেরও আলো দূষণ কমানো উচিত।’’

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী আহমেদ আল মইন পরাগ বলেন, ‘‘নিশাচর প্রাণি কমছে এটা ঠিক। আমরা জেনেছি এবং শুনেছি। শব্দ দূষণের মতো আলো দূষণ বলেও একটি শব্দ আছে। আলো দূষণের কারণে নিশাচর প্রাণি কমছে বলে অনেকেই মনে করছেন।’’
 
সমাধানের উপায় কী, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আলোর ওপর শেড দিলে নিশাচর প্রাণির ক্ষতি হবে না। এমন কথার পক্ষে-বিপক্ষে দুটোই আলোচনা আছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করেনি। যদি করে তবে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবব।’’

আমার রাজশাহী
আমার রাজশাহী
নগর জুড়ে বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর